প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়ে গিয়েছে কয়েকমাস আগেই। কিন্তু এখনও তা রোগীর আত্মীয়দের জন্য খোলা হয়নি! প্রচণ্ড শীতেও দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর আত্মীয়েরা তাই রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নীচে! এমনই অবস্থা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে।
কেন চালু করা যায়নি? হাসপাতালের সুপার রামনারায়ণ মাইতি বলেন, “ডব্লিউবিআইডিসিকে দিয়ে ওই কাজ করানো হয়েছিল। বাড়ি তৈরি করে দিলেও এখনও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়নি। ওই সংস্থার মেদিনীপুরে কোনও অফিসও নেই। কলকাতা অফিসের সঙ্গেও বারবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করছে না। ফলে সমস্যা চলছেই।” ডব্লিউবিআইডিসি-র ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস সরকার “দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে” বলেই দায় সেরেছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু মানুষ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আসেন। রোগীর অবস্থা খারাপ হলেই ব্লক, মহকুমা হাসপাতালগুলি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেয়। |
জরুরি বিভাগে যাওয়ার রাস্তায় এ ভাবেই কাটে রাত। —নিজস্ব চিত্র। |
রোগীর সঙ্গে থাকা আত্মীয়দের ওয়ার্ডের ভেতরে থাকতে দেওয়া হয় না। বাইরে তাঁদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। অগত্যা গ্রীষ্মে রোদে পুড়ে, বর্ষায় জলে ভিজে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ান আত্মীয়েরা। ফলে দীঘর্ দিন ধরেই রোগীর আত্মীয়দের বসার জন্য প্রতীক্ষালয়ের দাবি ছিল। সেই মতো একটি প্রতীক্ষালয় তৈরিও হয়েছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন মানুষ থাকতে পারবেন। প্রায় ৩ মাস হয়ে গেল বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও তা জনসাধারণের জন্য খোলা হয়নি। কারণ, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এ দিকে, হাড় কাঁপানো শীত। দিনের বেলাতেও তাপমাত্র থাকছে ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে তা কমে যাচ্ছে সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তার সঙ্গে বইছে ঠাণ্ডা হাওয়া। এই পরিস্থিতিতেও রোগীর আত্মীয়দের হাসপাতালের বাইরেই রাত কাটাতে হচ্ছে। হোটেলে থাকার সামর্থ্য নেই যাঁদের, তাঁরা জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ড যাওয়ার রাস্তার যে অংশে শেড রয়েছে সেখানেই কোনও রকমে শোওয়ার জায়গা করে নেন। কিন্তু ওই রাস্তাই বা কতটা। বড় জোর ৩০-৪০ জন শুয়ে থাকতে পারবেন। আবার রাতে রোগী এতে ঠেলাঠেলি শুরু হয় সেখানে। কারণ, ওই পথ দিয়েই ট্রলি ঠেলে রোগীদের নিয়ে যেতে হয়। অথচ, প্রতীক্ষালয় খুলে দিলে সহজেই ৩০ জনের মতো মানুষ আরামে রাত্রিবাস করতে পারতেন। কেবলমাত্র প্রশাসনিক উদাসীনতাতেই তা হচ্ছে না। এ বার অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজের বরাত পাওয়া সংস্থাকে দ্রুত কাজ শেষ করার কথা জানাবেন বলে জানিয়েছেন। ওই সংস্থাটিও দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয় ততই মানুষের দুর্ভোগ কমে। তাই সাধারণ মানুষের দাবি, দ্রুত প্রতীক্ষালয়টি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হোক। |