ভাসমান মঞ্চে গান, জলাভূমি বাঁচাতে প্রচার এবং কাঁকড়ার ঝাল আর কাতলার কালিয়া দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ। এই নিয়েই পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বড়কোবলা গ্রামে শুরু হয়ে গেল খালবিল উৎসব। রবিবার দুপুরে এর সূচনা করেন জনস্বাস্থ্য-কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
জলাভূমি রক্ষা এবং চুনো মাছ বাঁচাতে ২০০১ থেকে এই উৎসবের সূচনা। উৎসব পরিচালনার জন্য রয়েছে খালবিল বাঁচাও কমিটি। কমিটির তরফে উৎসবের আগে থেকেই চলে সচেতনতা মূলক নানা প্রচার। আর্সেনিক এলাকা হিসেবে পরিচিত পূর্বস্থলী ১ ব্লকে জলাভূমি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয় সেই প্রচারে। উৎসব কমিটির উদ্যোগে সচেতনতা মূলক র্যালিটি হয়েছে শনিবার।
তার আগেই উৎসব উপলক্ষে সাজানো হয় প্রাচীন বাঁশদহ বিলের দুই পাড়। বিলের মাঝামাঝি জায়গায় নৌকা দিয়ে করা হয়েছে একটি ভাসমান মঞ্চ। সূর্য ওঠার আগে থেকেই বাউল সম্প্রদায়ের গায়কেরা সেই মঞ্চে গান শুরু করেন। এক দলের গান শেষ হলে নৌকায় চেপে পাড়ে ফেরা আর অন্য দলের একই ভাবে মঞ্চে পৌঁছনো, এমন ভাবেই চলতে থাকে অনুষ্ঠান। হয় ডিঙি-বাইচ প্রতিযোগিতাও। বাঁশদহ বিলের পাড়েও মঞ্চ হয়েছে কয়েকটি। কোনও মঞ্চে চলেছে শিশুদের বসে আঁকো, কোথাও নৃত্যানুষ্ঠান। কোথাও চুনো মাছ বাঁচাতে সচেতনতা প্রচার। আবার কোথাও বা মঞ্চে ছিল অতিথি বরণ। মন্ত্রী থেকে আমলা সবাইকে বরণ করা হয় বিলের শাপলা ফুল দিয়ে।
বেলা ১টা নাগাদ অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রবেশ করেন সস্ত্রীক সুব্রতবাবু। বিলের পাড়ে খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় উপহার দেওয়া হয় তাঁদের। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “খালবিলকে বাঁচাতে এই ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এখানকার বিধায়ক স্বপন দেবনাথের কাছে এই উৎসবের কথা আগেই শুনেছিলাম। এখন নিজের চোখে দেখে খুব ভাল লাগছে।” মন্ত্রী আরও বলেন, “আর্সেনিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত পূর্বস্থলী ১ ব্লক। শুনেছি, বহু মানুষ আর্সেনিক মিশ্রিত জল খেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আর্সেনিকমুক্ত জল বিলির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প হবে।” অনুষ্ঠানে সমুদ্রগড় উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস নাগের লেখা একটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মন্ত্রী।
জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা বলেন, “জেলায় প্রায় হাজার তিনেক খাল বিল চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলি সংস্কার করে ভাল মাছ চাষ হতে পারে। ইতিমধ্যে ৩০০টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে।”
বাঁশদহ বিলের কাছে ঐতিহাসিক চাঁদের বিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে দুই বিলের সংযোগস্থলে তৈরি হয়েছে আরও একটি ভাসমান মঞ্চ। সেখানে ছিল অতিথিদের জন্য দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। মেনুতে ভাত, ডাল, ফুলকপির তরকারি, বেগুন পোড়া ছাড়াও ছিল কাঁকড়ার ঝাল, চুনো মাছ ভাজা, কাতলা মাছের কালিয়া, টমেটোর চাটনি এবং খেঁজুর গুড়ের পায়েস। উদ্যোক্তাদের তরফে দিলীপ মল্লিকের দাবি, “খাবারের সমস্ত উপকরণই জোগাড় করা হয়েছে বিলের পাড় থেকে।”
দু’দিনের উৎসব উপলক্ষে বসেছে মেলা। শীতের আকর্ষণ হিসাবে মেলায় রাখা হয়েছে পিঠের স্টল। খালবিল বাঁচাও কমিটির সম্পাদক তথা পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপনবাবুর কথায়, “এলাকার জলাশয় থেকে হারিয়ে গিয়েছে চুনোমাছ। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে আর্সেনিক মিশে থাকায় এই এলাকায় মাটির উপরের ভাগের জল সংরক্ষণ জরুরি। তাই এই উৎসবের আয়োজন।” |