নিজস্ব সংবাদদাতা • বেলাকোবা |
এমনিতেই রাস্তার পরিসর কম। দু’দিক থেকে একটি গাড়ি পাশ কাটাতে গেলে অন্য গাড়িটির পাশ করার জায়গা থাকে না। তার উপর একশ্রেণির বালি-বজরি, পাথর, ইট ও কাঠ ব্যবসায়ীরা রাস্তার দু’ধারের ফুটপাত জুড়ে ওই সামগ্রী ঢাঁই করে রেখে ব্যবসা করায় পথচারীরা ঠিকমতো পথ চলাচল করতে পারছেন বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েও বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। এমনকী স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও কোনও উচ্চবাচ্চ্য নেই বলে অভিযোগ।
বেলাকোবা এলাকাতেই বাড়ি রাজগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের খগেশ্বর রায়ের। তিনি বলেন, “বিষয়টি দেখা হবে। রাস্তার ফুটপাত দখল করে রেখে কোনও ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য চলতে দেওয়া যাবে না। সরজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ ও বিডিও সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলব।” রাজগঞ্জের বিডিও টি টি ভুটিয়ার পরামর্শ, “বাসিন্দাদের বলুন, তাঁরা যেন ওই ব্যবসায়ীদের নামধাম দিয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফাটাপুকুর মোড় থেকে যে রাস্তাটি বেলাকোবা বাজার পেরিয়ে শিকারপুররের বটতলা পর্যন্ত গিয়েছে। ওই রাস্তার দু’ধারের ফুটপাত দখল করে ওই ব্যবসায়ীরা বালি-বজরি, পাথর, ইট, বিভিন্ন গাছের লগ জড়ো করে রেখে অবাধে ব্যবসা করে চলেছেন। দেখার বা বলার কেউ নেই। ফলে রাস্তার ফুটপাত দখল করে রেখে ওই ধরণের অবাধে ব্যবসা চলছে। যার ফলে পথচারীদের প্রচন্ড ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাত দিয়ে মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছেন না। প্রাণ হাতে নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরও ওই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হামেশাই দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদের আশঙ্কা এই পরিস্থিতিতে যে কোনও দিন বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। যাঁদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ওই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে থাকে, তাদের অভিভাবকেরা গভীর উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল মজুমদার, ববা মল্লিকরা বলেন, “ওই সব ব্যবসায়ীরা যেভাবে রাস্তার দু’ধারের ফুটপাত দখল করে রেখে ব্যবসা করছেন, তাতে সত্যিই বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। রাস্তার দু’ধার ধরে চলাফেরা করাই খুব কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ছোট ছোট ছেলেমেদের জন্য গভীর উৎকন্ঠার মধ্যে থাকতে হয়। কখন কী হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসন কেউ এই নিয়ে কোনও মাথা ঘামান না।”
পানিকৌড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপির অসিতকুমার সরকারের বাড়ি বেলোকোবা কলেজপাড়া এলাকায়। তিনিও স্বয়ং এই পরিস্থিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “অন্যান্য সমস্যার মধ্যে বেলাকোবার এটিও একটি বড় সমস্যা। আমি নিজে এই ব্যাপারে রাজগঞ্জের তদানিন্তন বিডিও অমিতাভ সরকারের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। ওই বিডিও এলাকায় এসে ব্যবস্থাও নিয়েছিলেন। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা ফের একইভাবে ফুটপাত দখল করে রেখে ব্যবসা চালাচ্ছেন। বললেও কথা কানে তোলে না।”
এলাকার সিপিএম নেতা রণজিৎ শর্মা, ফরয়ার্ড ব্লক নেতা নারায়ণ বসাকও ওই দাবি করে বলেন, “এই ব্যাপারে আমরাও দলের তরফে প্রশাসনে বহুবার দাবি জানিয়েছি। এই ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মানুষের সমস্যা করে ফুটপাত দখল করে রেখে ব্যবসা চলতে দেওয়া যায় না। বাসিন্দাদের অভিযোগ সত্য। বাসিন্দাদের অভিযোগের পেক্ষিতে আমরাও সহমত করছি।”
বেলাকোবা নাগরিক কমিটির সম্পাদক তপন সুর বলেন, “প্রশাসন যদি এই ব্যপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়, আমরা নাগরিক কমিটি থেকে আন্দোলনে নামব।” তপনবাবুর অভিযোগ, শুধু ওই বালি-বজরি, পাথর, কাঠ ব্যবসায়ীরা নন, বেলাকোবার একশ্রেণির দোকানদারও দোকানের যাবতীয় মালপত্র ফুটপাতে সাজিয়ে রেখে ব্যবসা করছেন। মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা চলাচল করতে পারছে না।” ব্যবসায়ী সংগঠনের এক কর্তা বলেন, “ মানুষের অসুবিধা করে ব্যবসা করতে আমাদেরও সায় নেই। আমরা ব্যবসায়ীদের সেকথা বলে দিয়েছি।” |