নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বামপন্থীদের হাতেও কৃষি বিপণনের ক্ষেত্রটি অবহেলিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল বামপন্থীদেরই আলোচনাসভায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য দফতরে রবিবার ‘চিত্ত বসু স্মারক বক্তৃতা’য় অর্থনীতির শিক্ষক রতন খাসনবিশ বললেন, “গত ৩০ বছরে আমাদের দেশে কৃষিপণ্যের বিপণনের দিকটা নষ্ট করা হয়েছে। এ রাজ্যে বামফ্রন্টও এটা নষ্ট করেছে। কৃষি বিপণন দফতরের একটি কমিটি হয়েছিল, যার আমি সদস্য হয়েছিলাম। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার সেই রিপোর্ট খুলেও দেখেনি! বামপন্থীরাই যদি এই রাস্তা খুলে দেয়, তা হলে দক্ষিণপন্থীদের দোষ কী? বামপন্থীদের উপরে এই জন্যেই অনেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন।” বাম শরিক হিসাবে কৃষি বিপণন দফতর ছিল ফ ব-রই হাতে।
তাদের আমন্ত্রণে ‘খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি’ বিষয়ে বলতে এসে রতনবাবুর এই মন্তব্য তাই যথেষ্টই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়া হলে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, প্রত্যাশিত ভাবেই সেই সওয়াল করেছেন রতনবাবু। এরই পাশাপাশি তাঁর অভিমত, বিদেশি লগ্নি এলে কৃষকের কত সুবিধা হবে, সেই ছবি তুলে ধরার জন্য মধ্যবর্তী শ্রেণিকে অহেতুক ‘শত্রু’ হিসাবে খাড়া করে আক্রমণ করা হচ্ছে। মধ্যবর্তী শ্রেণি হিসাবে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তাঁরা কেউ নিজের ইচ্ছামতো মুনাফা রেখে পণ্য বেচতে পারেন না। রতনবাবুর কথায়, “খানাকুল থেকে ৩ টাকায় আলু কিনে শেওড়াফুলির বাজারে কেউ যদি ১০ টাকায় বেচে, পর দিনই আরও দু’জন বেকার যুবক গিয়ে ৩ টাকায় ওই পণ্য কিনেই ৮ টাকায় বেচবেন! লোকে তো কম দামেরটাই কিনবে।” মধ্যবর্তী শ্রেণি যেমন মর্জিমাফিক মুনাফা হাঁকতে পারে না, তেমনই ওয়ালমার্ট বা টেস্কো-র মতো বিদেশি সংস্থা এলেই কৃষকেরা সব
সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে পারেন না। বিভিন্ন সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানান, বিদেশি বড় সংস্থা আসার পরে কৃষকেরা প্রথম দিকে যা দাম পেয়েছেন, পরের দিকে সেই লভ্যাংশ কমে গিয়েছে নানা মহাদেশের অভিজ্ঞতায় এমন দেখা গিয়েছে।
রতনবাবুর মতে, ইন্দিরা গাঁধী ১৯৭২ সালে নিয়ন্ত্রিত বাজারকে শক্তিশালী করার যে চেষ্টা করেছিলেন, সেটাই ঠিক পথ। নিয়ন্ত্রিত বাজার ঠিকমতো কাজ করলে রাষ্ট্রের সহায়তায় হিমঘর-সহ পরিকাঠামো আরও ভাল ভাবে গড়ে উঠতে পারে। তাঁর বক্তব্য, “এটা আসলে একটা মতাদর্শের প্রশ্ন। বাজার এক বার ব্যর্থ হলে বাজারকেই তো আবার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। তা হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে আবার তাকে সুযোগ দেওয়া হবে না কেন?”
তবে শেষ পর্যন্ত বামপন্থীরাই এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার আগে ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ বরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, রাজনৈতিক শিক্ষার অভাব দূর করার জন্যই প্রতি বছর এমন বক্তৃতার আয়োজন। প্রসঙ্গত, রবীন ঘোষের মৃত্যুতে ফ ব-র রাজ্য কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন বরুণবাবু। তাঁর ছেড়ে-যাওয়া ডেপুটি চেয়ারপার্সন পদে এসেছেন অপরাজিতা গোপ্পী। |