নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
জেলাগুলিতে ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’ খুলে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীদের যুগোপযোগী কর্মসংস্থান মূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। রবিবার শিলিগুড়ির সার্কিট হাউজে নিজের দফতরের উত্তরবঙ্গের ৬ জেলার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকের পর এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। আইএএস, ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন ডিজাইনিং, তথ্য প্রযুক্তিতে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে তাঁদের। মন্ত্রী জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ওই সমস্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে তফসিলি জাতি, উপজাতির মতো পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণীদের। তাঁদের মূল স্রোতে আনাটাই লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই সেন্টার ফর এক্সেলেন্স খোলা হবে। নতুন বছর থেকে তার সুফল পাবেন পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা। রাজ্যে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে উৎসাহী মেধাবীদের বেছে আইএএস পরীক্ষার জন্য পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন দফতরে কর্মী নিয়োগে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের আসন সংরক্ষণ যথাযথ ভাবে যাতে নামা হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তা মানা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তরবঙ্গে উপেনবাবুর প্রথম সফর এটি। তিনি জানান, দফতরের ভার গ্রহণ করেই উত্তরবঙ্গে আসা দরকার ছিল। তবে জঙ্গলমহলের সমস্যা, ক্যাবিনেট বৈঠকগুলিতে উপস্থিত থাকার ব্যস্ততার জন্য কিছুটা দেরি হল। উপেনবাবু বলেন, “তফসিলি জাতি, উপজাতি বা অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মেধাবী ছেলমেয়েরা পড়াশোনার পর কী করছেন সেই বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয় তরফেই এই প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ওই ছাত্রছাত্রীদের হোটেল ম্যানেজমেন্ট, অ্যানিমেশন, ফ্যাশন ডিজাইনিং, তথ্য প্রযুক্তির মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আইএএস পড়ার জন্য তফসিলি জাতি উপজাতির ৫০ জনকে প্রতি বছর সুযোগ করে দেওয়া হবে। পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে ওই সমস্ত প্রশিক্ষণ হবে। ব্যয়ভার দফতর থেকেই বহন করা হবে।”স্কুল স্তরে অনেকে, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তথ্য প্রযুক্তিতে প্রাথমিক স্তর থেকে স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। সে কারণে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কর্মক্ষেত্রে ভাল কাজের জন্য দক্ষ করে তুলতে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে চাইছেন উপেনবাবু। কী ভাবে কাজ করা হবে? দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অম্বেডকর সেন্টার ফর এক্সেলেন্স নামে দফতরের একটি নতুন শাখা এই কাজ করবে। তার অধীনে জেলাগুলিতে সেন্টার ফর এক্সেলেন্স খোলা হবে। আইএএস পরীক্ষায় বসতে উৎসাহী মেধাবী কারা তা দক্ষ কমিটির মাধ্যমে বাছা হবে। যে সংস্থায় তাদের প্রশিক্ষণ হবে সেই সংস্থার তরফেও নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফের প্রার্থী বাছা হবে। ৮ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শীঘ্রই সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানানো হবে। শিলিগুড়ির গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে এখানে সেন্টার ফর এক্সেলেন্সের একটি বিশেষ ‘কেন্দ্র’ খোলা হবে। তার মাধ্যমে প্রাথমিক স্তর থেকে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে ওই কাজে যুক্ত কোনও পেশাদার সংস্থাকে দিয়েই। আসানসোলেও একই রকম ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। রাজ্যের মধ্যে তফসিলি জাতির বাসিন্দাদের বসবাস সব চেয়ে বেশি কোচবিহারে। জন সংখ্যার ৫১ শতাংশ। তফসিলি উপজাতি বেশি জলপাইগুড়িতে। তার পর পুরুলিয়ায়। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলাকে অনগ্রসর কল্যাণ দফতর থেকে ‘দত্তক’ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডুয়ার্সের টোটো সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন সমস্ত দিকে বিকাশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেবে এই দফতর। |