|
|
|
|
|
|
|
বোঝাতে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলো না |
ছেলেমেয়েদের আর্টস পড়ার ব্যাপারে এ দেশে অনেক বাবা-মায়েরই আপত্তি থাকে।
তাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় পান। কেরিয়ারের সংজ্ঞা কিন্তু অনেক বদলে গিয়েছে। আর্টস পড়েও
অনেকে ভালই কেরিয়ার গড়ছেন। বড়দের তা বুঝতে হবে। পরামর্শ দিচ্ছেন সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় |
|
আমি পরের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। একাদশ শ্রেণিতে আর্টস নিয়ে পড়তে চাই। কিন্তু বাড়ির লোকে চায় আমি সায়েন্স নিয়ে পড়ি। তাদের মতে আর্টস-এ তেমন কোনও ভবিষ্যৎ নেই যতটা সায়েন্স নিয়ে পড়লে আছে। এ কথা যে ভুল তা অনেক বার বলেছি। জোর দিয়ে, কান্নাকাটি করেও বুঝিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি। আমি ছুটিতে কম্পিউটার শিখতে চাইলে বাবা বলেন, সায়েন্স নিয়েই যখন পড়বে না তখন কম্পিউটার শিখে কী হবে? আমি নাচ শিখতাম। পরীক্ষার জন্য এক বছর বন্ধ আছে। আবার নতুন করে ভর্তি হতে চাইলেও বাবা বলেন, এই সব করে কোনও লাভ নেই। তবে নাচ শেখার বিষয়ে মায়ের সায় রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়, যেমন আমি কী নিয়ে পড়লে ভবিষ্যতে সুবিধে হবে তা তাঁরা কিছুতেই বুঝতে চান না। অনেক বলেছি যে আমাকে এ ভাবে চাপ দিয়ে কোনও লাভ নেই। কিন্তু তাঁরা দিন দিন আরও যেন অবুঝ হয়ে উঠছেন। কী করব আমি, কী ভাবে বোঝাব তাঁদের?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
তোমাকে বলছি |
এই সমস্যাটা অনেকেরই হয়। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে এটা আবার মরণ-বাঁচন সমস্যা। এখনও প্রায় সারা দেশেই মধ্যবিত্ত বাড়ির চিন্তাধারায় এই সমস্যাটা রয়ে গিয়েছে আর্টস নিয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ তেমন উজ্জ্বল নয়, সায়েন্স নিয়ে পড়তে হবে। সায়েন্স নিয়ে পড়লেই চমৎকার সব চাকরি যেন গেটের বাইরে সারে সারে সাজানো রয়েছে আমাদের জন্য, নিজের পছন্দমত একখানা বেছে নিলেই হল।
ব্যাপারটা আসলে সে রকম নয়। সায়েন্স না আর্টস, এই দ্বন্দ্ব এখন অনেকটাই মিটে গিয়েছে। কিন্তু তোমার মা-বাবা সেটা বুঝতে চাইছেন না। প্রাথমিক ভাবে তুমি অনেক বার বলে, বুঝিয়ে হয়তো কিছুই করতে পারোনি। তার কারণ, অভিভাবকরা খানিকটা পুরনো ভাবধারার মানুষ। তাঁদের নতুন যে কোনও কিছু মেনে নিতে অসুবিধে হবে, ভয় হবে। প্রথাগত জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে ইনসিকিয়োর লাগবে।
তা হলে তোমার কী করণীয়? প্রথমেই বলি, বার বার প্রত্যাখ্যানের জন্য প্রস্তুত করো নিজের মনকে। খুব শক্ত করে বাঁধো নিজের ভাবনা, স্থির করো নিজের লক্ষ্য। তোমার মা-বাবা তো আর তোমার খারাপ চান না, কিন্তু আবার পুরনো চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতেও চাইছেন না। তাই তোমাকে ক্রমাগত চেষ্টা করতে হবে নানা দিক থেকে বোঝাতে। পড়াশোনার জগৎটা কেমন হয়েছে, এখন ছেলেমেয়েরা কী ভাবে কেরিয়ার বেছে নেয়, কী ভাবে সাফল্যের সংজ্ঞা বদলেছে, সব কিছু। আগে যেমন ভাবা হত যে একটা বাঁধা গত আছে সাফল্যের, এখন তো সেই সব ছক ভেঙে একেবারে নতুন ভাবে অনেক কিছু শুরু হয়েছে। ওঁদের এই নতুন জগৎটার সঙ্গে পরিচয় করানোর দায়িত্বও কিন্তু তোমার। আর, তোমার চার পাশে নিশ্চয়ই এমন কেউ কেউ আছে যারা আর্টস নিয়ে পড়ে ভাল ফল করেছে, ভাল ভবিষ্যৎ হয়েছে তাদের। তাদের কথা মা-বাবাকে বলো। বড়দের বোঝানোর ক্ষেত্রে উদাহরণ সব সময় বেশি কাজ দেয়। আমাদের দেশেই এখনও এই আর্টস আর সায়েন্স-এর বিভাজন রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকেই এই স্ট্রিম বিভাজন উঠে গিয়েছে। এক জন ফিজিক্স-এর ছাত্র কিন্তু অনায়াসে দর্শন পড়তে পারে, একই সঙ্গে। সেটা প্রকৃত শিক্ষা বলেই গণ্য হয়।
মা-বাবাকে বলো যে, ওঁদের মত মেনে নিয়ে নিজের ঘোর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায়েন্স নিয়ে পড়ে তুমি যদি ভাল ফল করতে না পারো তা হলে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হবে। পরীক্ষায় ভাল ফল করা জরুরি, তা না হলে পরবর্তী ধাপে এগোনোর আশা প্রায় থাকে না। তখন আরও দিশেহারা অবস্থা হবে। বরং তুমি যা ভালবাস, তা পড়ে যদি ভাল ফল করতে পারো, তা হলে অনেক দিকে চাকরির রাস্তা খোলা থাকবে।
আর যদি নাচ সত্যিই ভালবাস, তা হলে তোমার শেখা কেউ আটকাতে পারবে না। এখন পরীক্ষার জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ আছে, কিন্তু পরীক্ষার পর শিখতেই পারো। জীবনের কোনও শিক্ষাই ফেলা যায় না, তা কোনও না কোনও ভাবে জীবনকে সমৃদ্ধ করে। হ্যাঁ, তোমার কাছে যেটা চ্যালেঞ্জ, সেটা হল, তোমার মা-বাবার কাছে তোমার ওপর ভরসা আদায় করা। তুমি যে নাচ শিখেও পড়াশোনাটা ভাল ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারো, এই ভরসাটা ওঁদের দিতে হবে। আর তোমার মায়ের তো মত আছেই, তা হলে তাঁকেই একটু ভাল করে বোঝাও যাতে তোমার এই সিদ্ধান্তটাকে উনি সাপোর্ট করেন।
আসলে জীবনে একটা ব্যালেন্স খুব দরকার। নাচ আর পড়াশোনা কোন বিষয়টাকে কোন সময় কতটা গুরুত্ব দেবে, সেটা বোঝা খুব দরকার। সেই বোধটা হয়তো কম বয়সে অনেক সময় আমাদের মাথায় তত পরিষ্কার থাকে না। তাই পাল্লা যে কোনও একটা দিকে কাত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। আর সেই কারণে দুটো বিষয়েই হয়তো ভাল ফল না-ই হতে পারে। তাই মা-বাবারা ভয় পান এই ভেবে যে সময় পেরিয়ে গেলে যদি কোনওটাই না হয়, তার চেয়ে যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়াই শ্রেয়। নিজের ইচ্ছে আর ভবিষ্যৎকে সম্মান করার জন্য, নিজের প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার জন্য তোমাকেই নিজেকে আরও প্রস্তুত করতে হবে। তোমার ওপর ভরসা পেলে তোমার মা-বাবা আস্তে আস্তে তোমায় ঠিকই বুঝতে পারবেন। |
|
বাবা-মাকে বলছি |
বসঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের ওপর কখনও নিজেদের মত চাপিয়ে দেবেন না। তাতে ওদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় অনেক বেশি। জেদ বেড়ে যায়, যুক্তি দিয়ে আপনাদের কথা বোঝার চেষ্টা করে না, মনের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়। তাই ওর কথা মন দিয়ে শুনুন। ও কী করতে চাইছে, সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। ও যা চায় সেটাতে ওকে উৎসাহিত করুন। আপনাদের কথা অনুযায়ী সায়েন্স নিয়ে পড়ে যদি ওর মাথায় কিছু না ঢোকে, যদি ও ভয় পায়, যদি ওর ভাল না লাগে পড়তে, তা হলে খারাপ ফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তখন আপনারাই ওকে দুষবেন। আর, কম্পিউটার শেখার সঙ্গে সায়েন্সের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রায় যে কোনও কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। একটা চিঠি লিখতে গেলেও এখন কম্পিউটার ভরসা। তাই কম্পিউটার শিখতে বাধা দেওয়াটা নিছক বোকামি হবে কিন্তু। আর এই শেখার সময়গুলো চলে গেলে পরে আপনারাই আফশোস করবেন। একটু খোলা মনে সন্তানের সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। আলোচনা করুন। একটা সমাধানের রাস্তা খুঁজুন। জোর করে মতামত চাপিয়ে দিলে, ওর ক্ষতিই হবে। |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|