সকালের জলখাবার যদি ঘি, মটরশুঁটি দিয়ে গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি হয়, তো মধ্যাহ্নভোজে মরসুমি সব্জির পঞ্চব্যাঞ্জন। সঙ্গে নলেনগুড়ের পায়েস। আর রাতে গরম গরম কড়াইশুঁটির কচুরির সঙ্গে নতুন আলুর দম। বড়দিন উপলক্ষ্যে পিকনিকের কোনও মেনু নয়! নবদ্বীপের বিভিন্ন মঠ মন্দিরে গোটা শীতকাল জুড়েই দৈনিক দেবতাদের ভোগের ডালা এমনভাবেই সাজানো হয়। ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকা যেমন বদলে যায়, ঠিক তেমনিভাবেই বদলে যায় মন্দিরের দেবভোগও।
নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাস বাবাজি বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা যেভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য, পরিধেয় পাল্টে ফেলি, তেমন ভাবে ঈশ্বরের সেবাতেও সেই বদলটা লক্ষ্য করা যায়। শুধু ভোগ বলে নয়, শীতকালে দেবতাকে শীতবস্ত্র পরানো হয়। যেমন গ্রীষ্মকালে বিগ্রহের দেহ শীতল রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় নবদ্বীপের বেশিরভাগ মঠ মন্দিরে।’’ বড়দিনের সকালে নবদ্বীপের কয়েকটি মঠ মন্দিরের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীতকালীন দেবভোগের নানা বৈচিত্র্যের কথা। গানতলার বলদেব মন্দিরের কিশোর গোস্বামী বলেন, ‘‘পৌষ মাস পড়তেই সকালের শৃঙ্গার আরতির পর যে শীতল ভোগ দেওয়া হয় তাতে খিচুড়ি নিবেদন করাই প্রথা। সকালের এই শীতল ভোগকে দেবতাদের জলখাবারও বলা যেতে পারে। ঘি, কড়াইশুঁটি দিয়ে প্রতিদিন এই সময়ে খিচুড়ি দেওয়া হয়। একই ভাবে শীতকালের দুপুরের ভোগে খেজুর গুড়ের পায়েস বাধ্যতামূলক। শীতকাল জুড়ে পিঠে, পুলি, গজা অর্থাৎ শীতকালীন যে সমস্ত খাবার সচরাচর আমরা খেয়ে থাকি, তার বেশিরভাগই দেবতাকেও নিবেদন করা হয়।’’ একই ভাবে মদনমোহন মন্দির, সমাজবাড়ি, জন্মস্থান আশ্রম, হরিসভা মন্দির, মহাপ্রভু মন্দির সর্বত্রই শীতের ভোগ মরসুমি বৈশিষ্ট্যে ভরা। রাধারমণ বাগ সমাজবাড়ির পূর্ণদাস বাবাজি বলেন, ‘‘আমাদের সেবা অষ্টকালীন লীলা অনুসারী। ফলে দেবতাদের ক্ষেত্রেও আমরা এই শীতকাল জুড়ে রকমারি ভোগের ব্যঞ্জন তৈরি করি। এই কাজের জন্য আমাদের বিশেষ ভক্ত কারিগরেরাও আছেন। পৌষ, মাঘ এই দুই মাস ধরে সকালের প্রথম ভোগে খিচুড়ি থাকতেই হবে। পৌষ সংক্রান্তি যত এগিয়ে আসবে, ভোগের ব্যঞ্জনে বৈচিত্র্য ততই বাড়বে। যেমন মালপোয়ার জায়গা নেবে মটরশুঁটির কচুরি কিংবা ফুলকপির সিঙ্গারা তারপর সংক্রান্তির সময়ে বহু রকমের পিঠে, পুলি যেমন চন্দ্রপুলি, ক্ষীরপুলি, পাটিসাপটা অর্থাৎ নলেনগুড় ব্যবহার করে যত রকম মিষ্টান্ন তৈরি করা যায়, তার সবই এই সময়ে দেবতাকে নিবেদন করা হয়।’’
মায়াপুর ইস্কনে দেবতার শীতকালীন ভোগে জায়গা করে নেয় কেকও। মন্দিরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘‘কেক শীতকাল জুড়েই দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়। আমাদের নিজস্ব বেকারিতে ময়দা, ঘি, নানারকম ফল, কাজু, কিশমিশ, পেস্তা, মনাক্কা ছাড়াও নানা উপাদান দিয়ে এই নিরামিষ কেক তৈরি করা হয়। এই কেক বিক্রির ব্যবস্থাও আছে।” |