জেলাপ্রশাসনের কাছ থেকে ‘আশ্বাস’ পেয়ে বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠন বাস ধর্মঘট রবিবার থেকে প্রত্যাহার করে নিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে ওই ধর্মঘট চলছিল। ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ায় এদিন সকাল থেকে স্বাভাবিক বাস চলাচল শুরু হওয়ায় গত তিন দিন পরিবহণ ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল অবশেষে স্বস্তিতে নিত্য যাত্রীরা।
শনিবার জেলাপ্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় মালিক ও শ্রমিক সংগঠন। শনিবার জেলাপ্রশাসনিক ভবনে বাস ও শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিরঞ্জন কুমার এবং মুর্শিদাবাদ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত অফিসার বিশ্বজিৎ বারিক। ওই বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা অবিলম্বে বেআইনি ট্রেকার, যন্ত্রচালিত ভ্যান লছিমন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে বাস চালকদের উপরে ৩০৪ ধারা প্রয়োগ না করার দাবি তোলেন। পাশাপাশি বাস ভাড়া আদায় করাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির যাত্রীদের অভব্য আচরণ এবং বাস কর্মচারীদের প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় তারা জেলাপ্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
এডিএম নিরঞ্জন কুমার বলেন, “বাস ধর্মঘটের আগে গত বুধবার এক দফা বৈঠক হয়েছিল। সেই সময়েও মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন দাবি খতিয়ে দেখে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের তরফে কিছু দিন সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংগঠনের নেতৃত্ব আমাদের কোনও সময় দিতে রাজি হননি এবং একতরফা বাস ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন। এর পরে তাঁরা নিজেরাই বৈঠকে বসতে চেয়ে আবেদন করেন। সেই মতো শনিবার আলোচনা হয়।” নিরঞ্জনবাবু বলেন, “বেআইনি ট্রেকার, লছিমন, ম্যাজিক গাড়ির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীর অভাব, বেআইনি গাড়ি আটক করার পরে তা রাখার জন্য জায়গাও প্রয়োজন। এ জন্য আমাদের ১৫ দিন মতো সময় দিতে বলেছিলাম। কিন্তু সেই সময়ে তাঁরা তা মানতে চাননি। এদিনের বৈঠকে অবশ্য প্রশাসনকে সময় দিতে রাজি হন তাঁরা।” পাশাপাশি বেআইনি ভাবে বাস চললেও তার বিরুদ্ধেও প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এডিএম জানান।
বাস ধর্মঘট চলাকালিন ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) আফসারউদ্দিন আহমেদ-এর নেতৃত্বে বেশ কিছু লছিমন ও ম্যাজিক ভ্যান আটক করেছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদ বাস ওনার্স কাউন্সিলের সহ-সম্পাদক রথীন মণ্ডল বলেন, “পরিবহণ শিল্প থেকেই রুজি-রোজগার হয়ে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বেআইনি ট্রেকার ও লছিমনের দাপটে আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কেননা, সরকারি সমস্ত নিয়ম মেনে আমরা বাস চালাবো, আর এক পক্ষ বেআইনি ব্যবস্থা চালু রেখে মুনাফা লুটবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এর প্রতিবাদে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু শনিবারের বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাদের সদর্থক ভূমিকা দেখে আমরা বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছি।”
মুর্শিদাবাদ জেলা নিত্য বাস যাত্রী সমিতির পক্ষে সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কিছু সমস্যা তো রয়েছে। কিন্তু ওই সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি, তেমনি সমাধানও এক দিনে হবে না। বিশেষ করে বাস ধর্মঘট করে ওই সমস্যা মিটবে না। এজন্য প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার প্রয়োজন।” |