অসিযুদ্ধ: প্রাক্তন যুযুধান অধিনায়ক যখন কলম হাতে
প্রথম ১০ ওভার খুব সাবধানে খেলুক বীরু
সিরিজে ধোনিদের লক্ষ্য বরাবরের মতো একটাই। অস্ট্রেলিয়াকে ওদের দেশে গিয়ে হারানো, যা আজ পর্যন্ত ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রায় চার বছর পর ফের অস্ট্রেলিয়ায়। এই সিরিজ নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে। ধোনি অ্যান্ড কোম্পানি যদি টেস্ট সিরিজে সফল হতে পারে, বছরের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শোচনীয় ফলাফলের স্মৃতি পুরো মুছে যাবে। ইংল্যান্ড সফরের পরে ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবমূর্তির বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে এবং এই সিরিজে তা মেরামত করার সুযোগ ধোনি আর টিম পাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজ খুব ভাল গিয়েছে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়া অত সহজ হবে না। অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক অতীতে ভারত খারাপ ফল করেনি। ২০০৩-এর সফরে অস্ট্রেলিয়া কোনও রকমে সিরিজ বাঁচিয়েছিল। ২০০৭-এর সফরে ভারত জিতেছিল পারথ টেস্ট, এমন একটা মাঠ, যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে অপ্রতিরোধ্য ধরা হয়। এ বার আমরা আশা করতেই পারি, ভারত সিরিজ জিতে ফিরবে।
ম্যাকগ্রা, ওয়ার্ন, গিলক্রিস্ট, হেডেন, গিলেসপি, ল্যাঙ্গারদের অবসরের পরে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট এখন পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় ধরে সাফল্য পাওয়ার পরে বেশ কয়েকজন নিয়মিত ক্রিকেটার অবসর নিলে একটা শূন্যতা তৈরি হয়। সব টিমকেই এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। নতুন প্রজন্মের এই শূন্যতাটা ভরাট করতে সময় লাগে। ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচাডর্স এবং ম্যালকম মার্শালের মতো ক্রিকেটাররা সরে যাওয়ার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কী দুরবস্থা হয়েছিল আমরা দেখেছি। কাজেই অস্ট্রেলিয়া যে আগের চেয়ে সামান্য নড়বড়ে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি কিন্তু ‘সামান্য’ শব্দটা ব্যবহার করছি, কারণ পারফরম্যান্সের গ্রাফটা মোটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো নিম্নগামী নয়। অস্ট্রেলিয়াকে দেশের মাঠে হারানো এ বারও কঠিন হবে। আরও জরুরি, কোনও টিম যখন অস্ট্রেলিয়ার মতো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়, নির্বাচক এবং কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধরতে হয়। ‘প্যানিক’ করতে নেই। নতুন প্রজন্মকে মানিয়ে নিতে সুযোগ দিতে হয়। কিন্তু আমার অবাক লাগছে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও ‘প্যানিক বাটন’-টা একটু তাড়াতাড়িই টেপা হয়ে গিয়েছে।
এমসিজি-র বাইশ গজের ময়না তদন্তে ধোনি ও গম্ভীর। ছবি: পিটিআই
আরও সমস্যা রিকি পন্টিংয়ের মতো ক্রিকেটার ফর্মে নেই। পুনর্গঠনের সময়টায় আপনার টিমের সেরা এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ভাল ফর্মে থাকাটা খুব জরুরি, যাতে নতুনরা থিতু হওয়ার সুযোগটা পায়। কিন্তু পান্টার ফর্মে না থাকায় অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংয়ের উপর চাপ বেড়েছে। বলা হয়, ফর্ম অস্থায়ী, কিন্তু জাত চিরস্থায়ী, যেমন রাহুল দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। পান্টার অবশ্যই রাহুলের থেকে শিখতে পারে, কারণ আমার মনে হয় পান্টারের অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটকে আরও দেওয়ার আছে। ভারতের বিরুদ্ধে ও বরাবর ভাল খেলে। গত বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ওর সেঞ্চুরিটা মনে করুন। সেই সময়টায় ও একেবারেই রানের মধ্যে ছিল না। সমালোচকদের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপে ছিল, ওকে বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছিল। ভাল দু’জন ওপেনার আর মাইক হাসির খারাপ ফর্মের জন্যও ভুগতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, পন্টিং ও হাসির মতো দু’জন উঁচু জাতের ক্রিকেটার জানে, মাত্র একটা ভাল ইনিংসই ওদের নিজেদের এবং টিমের পারফরম্যান্স বদলে দিতে পারে। এই সময়ে ওদের প্রতি অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের আস্থা রাখাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ফর্মে না থাকা ক্রিকেটারকে চাঙ্গা করে দিতে পারে।
ভারতীয় ক্রিকেটই এর সেরা উদাহরণ। সিনিয়রদের ছেঁটে ফেলার মতো পাগলামি যেদিন থেকে বন্ধ হয়েছে, সেদিন থেকে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, সহবাগ, জাহির, সচিনরা অনেক মানসিক শান্তিতে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা ও অশ্বিনদের সঙ্গে চুটিয়ে খেলছে।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ নতুন। প্যাটিনসন, স্টার্ক, লিয়ঁ, ড্যান ক্রিস্টিয়ান, পিটার সিডলের মতো ক্রিকেটাররা থাকছে। ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে উইকেট থেকে সামান্য সাহায্য পেয়ে এরা কেমন বল করবে, তা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। ইংল্যান্ড সফরে ওপেনিংটা ভারতের সমস্যা ছিল, কিন্তু এখানে সহবাগ আর গম্ভীর থাকায় সেটা হবে না। ভারতের দুই ওপেনারের ফর্ম, বিশেষত সহবাগের ফর্ম ভারতের সাফল্যের চাবিকাঠি হতে যাচ্ছে। জাদুকরী ২১৯ সঙ্গে নিয়ে সহবাগ অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছে, কিন্তু সেটা দিয়ে এই সফরে সাফল্য আসবে না। এখানে সফল হতে গেলে ওকে ওর ‘ফ্ল্যামবয়েন্স’ সামান্য কাটছাঁট করতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিদেশে টেস্ট সিরিজে ওর ব্যাটিং গড় ইদানীং কমেছে। তবে আমি নিশ্চিত ওর ধারালো ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক ব্যাপারটা জানে। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে নিজের খেলাটা খেলতে হলেও ওকে প্রথম দশ ওভার সতর্ক ও সাবধানী থাকতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচে ও বেশিক্ষণ উইকেটে ছিল না বলে আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার।
মেলবোর্নের রাস্তায় সপুত্র সচিন। ছবি: এএফপি
জাহির ও ইশান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বড় চোট থেকে ফিরেছে জাহির, কতটা ফিরতে পেরেছে সেটা ম্যাচে দেখলে বোঝা যাবে। জাক যদি নিজের বোলিংটা করতে পারে, ইশান্ত, উমেশ যাদব আর অশ্বিন অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংয়ের উপর যে চাপটা দেবে, তা সামলানো কঠিন হবে। উমেশ আর অশ্বিন খুবই প্রতিভাবান আর এই সফরটায় ভাল কিছু করা মানে ওরা দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করবে। আমি যদি ধোনি হতাম, এই অস্ট্রেলিয়া টিমকে দেখে অবশ্যই বিশ্বাস করতাম এবং টিমকে বলতাম আমরা সিরিজের প্রথম বল পড়ার আগে আমরা ওদের সমান তো বটেই, বরং এগিয়েও শুরু করছি। বলতাম, অস্ট্রেলিয়ানদের ওদের মাঠে মারার এটাই সেরা সুযোগ। এই বিশ্বাসটাই আপনাকে অর্ধেক যুদ্ধ জিতিয়ে দিতে পারে, বাকিটা অবশ্যই মাঠে জিততে হবে।

মেলবোর্নে ভারত
• ডিসেম্বর, ১৯৭৭
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট জয়, ২২২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে সুনীল গাওস্করের ১১৮। চন্দ্রশেখরের বিধ্বংসী স্পেল (৬-৫২), সঙ্গে বেদীর ৪-৫৮।
• ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১
কপিল দেবের (৫-২৮) সুইংয়ের হদিশ না পেয়ে গ্রেগ চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ৮৩ রানে। ভারতের জয় ৫৯ রানে।
• ডিসেম্বর, ২০০৩
বীরেন্দ্র সহবাগের অভাবনীয় ১৯৫ রান ২৩৩ বলে। ম্যাচ হারলেও অস্ট্রেলিয়ায় কোনও ভারতীয়র অন্যতম সেরা ইনিংস।

• ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮
ফলো অন করে ব্যাট করতে নেমে ৬৭-তে অল আউট লালা অমরনাথের ভারত। চার জন শূন্য-তে আউট। ভারত হারে ইনিংস ও ১৭৭ রানে।
• জানুয়ারি, ১৯৪৮
ব্র্যাডম্যানের দুই ইনিংসে রান ১৩২ ও ১২৭ ন.আ.। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত অল আউট ১২৫-এ। ভারত হারে ২৩৩ রানে।
• ডিসেম্বর, ১৯৮৫
জিততে গাওস্করদের দরকার ছিল ১২৬। ২৫ ওভারে মাত্র ৫৯-২ তোলে ভারত। ফল মেলবোর্নে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র অমীমাংসিত টেস্ট।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.