সম্পাদকীয় ২...
সুশাসন ও বিশ্বাস
৯৯১ সালের অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং ২০১১ সালের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মধ্যে যে আলোকবর্ষের ব্যবধান, এই কথাটি অধুনা বহুচর্চিত। প্রথম জন ছিলেন সাহসী, নিজের লক্ষ্যে অবিচল; দ্বিতীয় জন দৃশ্যত সেই সাহস হারাইয়াছেন। তিনি বারংবার দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কারের কথা বলিয়াছেন বটে, কিন্তু রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে সেই সংস্কার পথ হারাইয়াছে। সংস্কারের শ্লথ গতি যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধা হইয়া দাঁড়াইতেছে, বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করিতেছে, এই কথাটি দেশের অগ্রগণ্য ব্যবসায়ীরা পূর্বেও বেশ কয়েক বার বলিয়াছেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকেও বলিলেন। প্রধানমন্ত্রী জবাবে তাঁহাদের জানাইয়াছেন, এই জাতীয় নেতিবাচক সমালোচনায় দেশের ক্ষতি। কাজেই, কাজটি শিল্পপতিরা ঠিক করিতেছেন না! প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানটি আপত্তিকর। আরও আপত্তিকর তাঁহার এই যুক্তি যে জোট রাজনীতির নিকট তাঁহার হাত-পা বাঁধা। ফলে, তিনি চাহিলেও অনেক কিছুই করিতে পারিতেছেন না। এই বাধ্যবাধকতাটি শিল্পপতিদের বুঝিতে হইবে। বরং প্রধানমন্ত্রী বুঝুন, কোনও অজুহাতেই দেশের বর্তমান নীতি-পঙ্গুত্বকে ব্যাখ্যা করা যায় না, জোট রাজনীতির অজুহাতে তো নয়ই। শরিকদের লহিয়া চলা তাঁহার মাথাব্যথা, যে কোনও সমস্যা তাঁহাকেই সামলাইতে হইবে। তাঁহার বা দলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় তিনি অন্যদের বহিতে বাধ্য করিতে পারেন না। আর, ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে জোটের কোনও সমীকরণই তাঁহাকে আটকাইতে পারে নাই। তবে এখন কেন তিনি সেই বাধ্যবাধকতার অজুহাত দেন?
মনমোহন সিংহ বিলক্ষণ জানেন, শিল্পমহলের অনুযোগ অসার নহে। বিনিয়োগের সর্বাপেক্ষা জরুরি শর্ত হইল নিশ্চয়তার আশ্বাস। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের বাজারে কথাটি আরও বেশি সত্য। দেশের সরকার কতখানি শক্তিশালী, প্রভাবসম্পন্ন এবং স্থিতিশীল তাহা এই নিশ্চয়তার অতি জরুরি উপাদান। এখন কোনও বিনিয়োগকারীই গ্রিসে লগ্নি করিতে রাজি নহেন, কারণ তাঁহারা জানেন, সেই দেশের সরকারের উপর আস্থা রাখা যায় না। কথাটি ভারতের ক্ষেত্রেও, অপেক্ষাকৃত কম তীব্র ভাবে হইলেও, সত্য হইয়া উঠিতেছে। গত এক বৎসরে সুশাসনের ইঙ্গিতমাত্র নাই। খুচরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজিকে ছাড়পত্র দেওয়াই হউক বা পেনশন বিল সংস্কার সরকার এক পা অগ্রসর হইলে সাড়ে তিন পা পিছাইয়া আসিতে বাধ্য হইয়াছে। ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্কার’ ক্রমেই অলীক প্রতিপন্ন হইতেছে। দুর্নীতির দৌড় কমে নাই, আর্থিক বৃদ্ধির হার কমিতেছে। অণ্ণা হজারের ন্যায় ব্যক্তিও সরকারের উপর বিলক্ষণ ছড়ি ঘুরাইতেছেন। বৃহত্তম দুশ্চিন্তার কারণ: দেশে একটি ধারণা তৈরি হইয়াছে যে বর্তমান সরকার সুশাসনে অক্ষম। ধারণাটি সরকারের পক্ষে বিপজ্জনক তো বটেই, শিল্পমহলের পক্ষেও মারাত্মক। এই পরিস্থিতিতে কেহ বিনিয়োগ করিতে ভয় পাইলে তাঁহাকে দোষ দেওয়ার উপায় নাই। শিল্পমহলের অনুযোগটিকে উড়াইয়া না দিয়া যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়াই প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য। তিনি দেশের অভিভাবক। সুশাসন নিশ্চিত করা তাঁহার দায়িত্ব। তিনি নিজের দায়িত্বে পালন করুন, তাহা হইলেই শিল্পমহল বিশ্বাস ফিরিয়া পাইবে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত থাকিতে পারেন, তখন আর কোনও অভিযোগের সুর শোনা যাইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.