স্কুলশিক্ষার মাঝপথে মেয়েদের পড়া বন্ধ এবং বাল্য-বিবাহ ঠেকানো-সহ এক বহুমুখী বিমা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। রাজ্যের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দুর্বল শ্রেণির মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করাই সরকারি এই বহুমুখী প্রকল্পের লক্ষ্য। মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড সরকার এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনা।
এই প্রকল্পের শর্ত পূরণ করলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই ঝাড়খণ্ডের কন্যা-সন্তান ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনা’ বিমা কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবে। জন্মের পর থেকে ২১ বছর অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণি অবধি ধারাবাহিক ভাবে স্কুল শিক্ষার পাঠক্রম শেষ হওয়া পর্যন্ত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে রাজ্যের মেয়েরা এই বিমা প্রকল্পের সুবিধা পাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা মণ্ডলী সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনা মূলত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা সমাজের দুর্বল শ্রেণির জন্য। যে সব পরিবারের আয়ে মাসে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত কেবল তারাই এই প্রকল্পের আওতায়ভুক্ত হবে। কোনও পরিবারের দু’টির বেশি কন্যা-সন্তান থাকলে এই বিমা প্রকল্পের সুবিধা মিলবে না। মেয়েদের স্কুল-ছুট এবং অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে আটকানোই ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনার মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি, আরও কিছু সামাজিক ব্যাধি দূর করারও চেষ্টা হবে এই যোজনায়।
এই লক্ষ্য পূরণে বিমা প্রকল্পের আওতাভুক্ত হতে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেমন, ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনার সুবিধা পেতে গেলে হাসপাতালে কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনও প্রতিষ্ঠানে শিশু কন্যার জন্ম নথিভুক্ত থাকা আবশ্যক। ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনায় এই শর্ত আরোপ করা হয়েছে মূলত বাড়িতে শিশুর প্রসব করানোর প্রবণতা রুখতে।
এ ছাড়াও কন্যাভ্রুণ হত্যা রোধ করা, পরিবারে মেয়ে জন্মালেই একটা হেলাফেলার ভাব, বিয়ের টাকা জোগাড়ের জন্য পারিবারিক দুশ্চিন্তা দূর করার উদ্দেশ্যও রয়েছে এই যোজনার রূপরেখায়। ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে রাজ্যের যে-সব কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে, বিমার শর্ত মেনে তারা সকলেই এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনাভুক্ত শিশু কন্যারা পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রতি বছরে ছয় হাজার টাকা করে পাবে। এই ভাবে জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত রাজ্যের একটি শিশুকন্যার ভরপোষণের জন্য তার পরিবার পাচ্ছে মোট ৩০ হাজার টাকা। ওই মেয়েটি ১১ বছর বয়সে যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবে, তখন তাকে বিমা প্রকল্পের এককালীন দুই হাজার টাকা দেওয়া হবে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়েটি পাবে এককালীন চার হাজার টাকা। একাদশ শ্রেণিতে উঠলে মেয়েটির হাতে দেওয়া হবে সাড়ে সাত হাজার টাকা। মেয়েদের পড়ার খরচ চালানোর জন্যই এ ভাবে কিস্তিতে বিমার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা।
এ ছাড়াও একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ওই ছাত্রীর হাতে রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হবে প্রতিমাসে ২০০ টাকা করে সাম্মানিক বৃত্তি। মেয়টি ২১ বছর বয়সে, যখন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বসবে, তখন তার হাতে রাজ্য সরকার তুলে দেবে ‘লক্ষ্মী-লাডলি’ যোজনার বিমা প্রকল্পের ম্যাচিওরিটির আরও ১ লক্ষ ৮ হাজার ৬০০ টাকার চেক। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা সমাজের দুর্বল শ্রেণির পরিবারের মেয়েদের জন্য এই রকম প্রকল্পের তারাই পথিকৃৎ বলে ঝাড়খণ্ড সরকারি মহলের দাবি। |