নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভোটযুদ্ধে ঝাঁপানোর আগে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সামনে রেখে নিজেদের সংগঠিত করে নিতে চাইছে বিজেপি।
আজ বাজপেয়ীর জন্মদিন। এই উপলক্ষ্যে বিজেপি নেতৃত্ব দেশ জুড়ে প্রায় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। আজ রাজ্যে-রাজ্যে পালন করা হল ‘সুশাসন দিবস’ও। লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ী থেকে শুরু করে বিজেপি’র ছোট-বড় বহু নেতা আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। লক্ষ্য একটাই দলের যাবতীয় অন্তর্কলহ ঢেকে একজোট হয়ে একের পর এক ভোট-বৈতরণী পার হওয়া। এবং পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে জিতে দিল্লির মসনদ দখল করা। এই লক্ষ্যসাধনে বিজেপি নেতৃত্বের বড় অস্ত্র এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
বাজপেয়ীর প্রশাসনিক দক্ষতা, তাঁর ‘দুর্নীতিমুক্ত’ সরকার, সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার ক্ষমতা, তাঁর দর্শন ও উদার ভাবমূর্তি।
বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী আজ বলেন, “এক বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভারতের ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছিলেন অটলজি। তাঁকে সামনে রেখেই ফের দেশের ভবিষ্যৎ বদলে দেব আমরা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অটলজি দেখিয়ে দিয়েছেন, জাতীয়তাবাদ, সুশাসন ও উন্নয়ন একই সঙ্গে কী ভাবে চালানো যায়। আমরা সেই পথই অনুসরণ করব।”
পাশাপাশি মনমোহন সরকারকে বিঁধতে সেই বাজপেয়ী-তাসই খেলতে চাইছে বিজেপি। বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “অটলজিই সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা রাখেন। তাঁর নেতৃত্বে তেইশটা দল এনডিএ-র শরিক হয়েছিল। আর এখন মনমোহন সিংহ সরকারের কাছে মাত্র তিন-চারটে দল! তা-ও তাদের জন্য মনমোহনকে এক পা এগিয়ে দু’পা পিছোতে হয়! বাজপেয়ী জমানায় মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি ছিল না। মনমোহনের আমলে সবই আকাশছোঁয়া। আজ দেশে টেলিফোন, টেলিভিশন চ্যানেল, পরমাণু, সড়ক যোগাযোগে যে বিপ্লব এসেছে, তার সবই অটলজির অবদান।”
ঘটনা হল, বিজেপি নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন যে, সামনে পাঁচ রাজ্যের ভোটে বিজেপি’র পক্ষে ভাল ফল করা মুশকিল। বিশেষত উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন এখনও কার্যত দূর অস্ত্। উত্তরাখণ্ড-পঞ্জাবেও দলের অবস্থা ভাল নয়। বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, এই রাজ্যগুলোয় ভাল ফল না-হলে আড়াই বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচনেও দিল্লির তখ্ত দখলের স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। উপরন্তু কংগ্রেস আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলোয় ভাল ফল করলে অক্সিজেন পাবে, দুর্নীতি প্রশ্নে কোণঠাসা অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। তা ছাড়া বিজেপি নিজস্ব কোন্দল তো রয়েইছে। নেতৃত্ব নিয়ে চোরাদ্বন্দ্ব থামেনি। বস্তুত আজও দিল্লিতে বাজপেয়ীর জন্মদিন পালন নিয়ে বিজয় গোয়েল ও বিজেন্দ্র গুপ্তের গোষ্ঠীর মধ্যে দস্তুরমতো টক্কর চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে অটলবিহারীর মতো সর্বজনগ্রাহ্য এক জন নেতাকে সুকৌশলে সামনে তুলে আনতে চাইছে দল। যিনি বিরোধীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ বাজপেয়ীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছেন।
বিজেপি নেতা অনন্তকুমারের কথায়, “আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সামনে রেখে সামনের নির্বাচনগুলো জিতে আসা। বাজপেয়ীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বিজেপি’র কোনও নেতা আগামী দিনে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা ওড়াবেন। অটলবিহারী ভারতের রত্ন। তাই তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানও দেওয়া উচিত।” |