নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
পাঁচ রাজ্যে ভোটের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ল সাধারণ ও রেল বাজেট পেশের দিন। ঠিক ছিল, আগামী বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি রেল বাজেট ও ২৯ ফেব্রুয়ারি সাধারণ বাজেট পেশ হবে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে শেষ দফার ভোট পড়েছে এর মাঝে, ২৮ তারিখ। গোয়ায় নির্বাচন হবে ৩ মার্চ। বাজেট অধিবেশনের আগে ভোট-পর্ব শেষ না হওয়ায় দুই বাজেট পেশের দিন নিয়ে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। পরিস্থিতি এমনই যে, বিভিন্ন দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে একই দিনে (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুই বাজেট পেশের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা স্পষ্ট নয় এখনও। কারণ বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যেই দু’রকম মত উঠে আসছে।
তবে কর কাঠামোর অনেকটাই আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ফলে গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, সাধারণ বাজেট ক্রমেই নিছক আয়-ব্যয়ের খতিয়ানে পর্যবসিত হচ্ছে। সাধারণ বাজেট বা রেল বাজেটের দিনক্ষণ মোটামুটি জানা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের নির্ঘণ্ট যে ভাবে স্থির করেছে, তাতেও বাজেটের প্রাসঙ্গিকতাকে আরও লঘু করে দেখা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে ফের। প্রশ্ন ওঠার প্রথম কারণ, বিতর্কের মুখে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি আজও বলেছেন, বাজেটের দিন পিছিয়ে দেওয়াটা আদৌ বেনজির কিছু নয়। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭৬-’৭৭ সালেও বাজেট পেশ পিছিয়ে মার্চে নেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন ওঠার দ্বিতীয় কারণ, সরকারের ভূমিকা। কমিশনের ঘোষণায় বাজেটের দিন নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হলেও সরকার ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বরং বাজেটের দিনক্ষণ বদলের সম্ভাবনা নিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে নতুন করে।
রেল মন্ত্রকের একটি সূত্র বলছে, ভোট-পর্ব মেটার আগে রেল বাজেট পেশ হলে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠবেই। সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে ভোট অন অ্যাকাউন্ট করে নেওয়াই ভাল। অর্থ মন্ত্রককে আবার খতিয়ে দেখতে হচ্ছে বিভিন্ন দিক। ৩১ মার্চ আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগে গোটা বিষয়টি অনুমোদিত হতে হবে। অনেক আন্তর্জাতিক বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই বাজেটে গোয়া সংক্রান্ত কিছু থাকলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত দিনেই সাধারণ বাজেট পেশ করা যেতে পারে। ওই ২৯ তারিখই রেল বাজেট পেশ করা যায় কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেই সম্ভাবনাও।
বাজেট পেশ পিছোনোর পক্ষে যুক্তিগুলি এই রকম: নির্বাচন পর্ব মেটার আগে বাজেট পেশ হলে সংসদে হাজির থাকতে পারবেন না সব সাংসদ। তা ছাড়া, কাল থেকে পাঁচ রাজ্যে আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়েছে। ভোট-পর্ব মেটার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জন্য বাজেটে কোনও ঘোষণা করা সম্ভব নয়। সে কারণেই ৪ মার্চ ভোটের ফল ঘোষণার পরেই বাজেট পেশ করার কথা বিবেচনা করে দেখতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। তবে কলকাতায় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় বাজেট ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে পেশ হয়। আগামী বছর লিপইয়ার বলে ২৯ ফেব্রুয়ারি তা হওয়ার কথা। গোয়া বাদে বাকি চার রাজ্যের নির্বাচন ওই তারিখের মধ্যে হয়ে যােচ্ছে। সুতরাং কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।” তবে কি বাজেট পেশ পিছোবে না? এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য প্রণববাবু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। দিল্লি ফিরে খোঁজ নেব।” তবে অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ নিয়ে ২৯ তারিখই কিংবা ভোট হয়ে যাওয়ার অব্যবহিত পরেই বাজেট পেশ করা হতে পারে।
রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী বলেছেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে অবহিত নই। তবে আমার মনে হয়, কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবে। আমার বিশ্বাস, সেই আলোচনা থেকে সমাধান সূত্র বেরোবেই।” তাঁর বক্তব্য, ৪ মার্চের পরপরই বাজেট পেশ হলে তা পাশ করানোর জন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় থাকবে। তবে পুরো বিষয়টি কমিশনের ‘পরামর্শ’ মেনেই হবে বলে তাঁর ধারণা। রেল বাজেট পিছোনোর পক্ষে সওয়াল করে রেল মন্ত্রকের এক কর্তা এ দিন স্পষ্টই জানান, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন থাকলে তার এক দিন আগে রেল বাজেট পেশ করা সম্ভব নয়। কারণ, সে রাজ্যের জন্য কোনও না কোনও প্রকল্প রেল বাজেটে থাকতেই পারে। এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও যদি নতুন ট্রেন ঘোষণা করা হয়, সেটা উত্তরপ্রদেশ দিয়ে যেতে পারে। তাতেও ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠবে। এই অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে কোনও বাজেটই পেশ না করে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পাশ করিয়ে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
সরকারের একাংশ এখনও বাজেটের দিন পিছোনোর পক্ষপাতী নয়। অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্রের মতে, ফি-বছরই দেশে নির্বাচন থাকে। প্রতি বছরই সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া বাজেটে গোয়া সম্পর্কিত কিছু থাকলে, কমিশনের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করে ২৯ তারিখেই তা ঘোষণা করা যেতে পারে। সে দিন কোনও প্রস্তাব ঘোষণা করার ব্যাপারে কমিশন আপত্তি তুললে বাজেট পাশের সময়ই সেগুলি ঘোষণা করা যেতে পারে। প্রতি বছরই বাজেট পাশের সময় নতুন কিছু ঘোষণা বা সংশোধন করা হয়।
নয়ের দশকের মাঝামাঝি, টি এন শেষন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার থাকাকালেও তাঁর পরামর্শে বাজেট পেশ অল্প ক’দিন পিছিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জি ভি জি কৃষ্ণমূর্তি মনে করেন, বিধানসভা নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রের বাজেট পেশ পিছোনোর কোনও প্রয়োজন নেই। নির্বাচনী আচরণবিধি এ ক্ষেত্রে রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য। রেল ও সাধারণ বাজেট পেশ করাটা কেন্দ্রের ব্যাপার। এটা একটা জাতীয় কর্মসূচি। রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়।
তবু বাজেটের দিন নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে কেন্দ্রকে। রাজনৈতিক স্বার্থেই। |