নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লম্বা কিংবা ছোট। কোঁকড়ানো অথবা ‘স্ট্রেট’। তেলে-জলে চুপচুপে বা শ্যাম্পুতে ফুরফুর। চুলের বিকিকিনির বাজারে কিন্তু ফেলনা নয় কোনও কিছুই।
সাহিত্যিক ভিক্টর হুগোর লে মিজারেবল হোক বা ও হেনরির দ্য গিফ্ট অফ ম্যাজাই, চুল বিক্রি করে কাহিনীর নায়িকাদের অর্থ উপার্জনের উদাহরণ কিছু কম নেই সাহিত্যে। আর এই বিশ্বায়নের যুগে দেরিতে হলেও ভারত কিন্তু এগিয়ে এসেছে এই ব্যবসাতে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরে ভারত বিভিন্ন দেশের কাছে দেশজ চুল বিক্রি করে আয় করেছে প্রায় ১৯ কোটি ৩০ লক্ষ ডলারের চেয়েও বেশি অর্থ। যা গোটা বিশ্বের চুলের ব্যবসার প্রায় ১৫ শতাংশ।
টেকো মাথা বা স্বল্প চুল। চিত্রতারকা থেকে খেলোয়াড়। কিংবা একেবারে আটপৌরে গৃহস্থ। চুল কমতে থাকলে দুশ্চিন্তা হয় না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। তখনই খোঁজ পড়ে পরচুলার। আর গাঁটের জোর যার রয়েছে তিনি এখন ভরসা রাখেন কৃত্রিম ভাবে প্রতিস্থাপিত চুলে। যত সময় যাচ্ছে দেশে-বিদেশে চাহিদা বাড়ছে নকল চুলের। ভারতেই আগে একসময়ে যেখানে পরচুলার রমরমা ছিল এখন সেখানে নকল চুল পাকাপাকি ভাবে লাগানোর দিকে ঝুঁকেছেন অধিকাংশ সম্পন্ন মানুষ। মন্ত্রক জানিয়েছে, এই ব্যবসাতে বিশ্বের বাজারে সবথেকে বেশি চাহিদা ব্রাজিলের চুলের। তবে একেবারে পিছিয়ে নেই ভারতও। সমীক্ষা বলছে প্রায় ত্রিশ শতাংশের কাছাকাছি বিদেশি ভারতীয় কেশদামে মুগ্ধ। মন্ত্রক দেখেছে ২০০৩-০৪ সালেই ভারত ৭০ লক্ষ ডলারেরও বেশি অর্থ উপার্জন করেছিল। গত বছর ওই ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিনগুণ।
কোথা থেকে আসে এই চুল?
এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বক্তব্য, বহু লোকের মানত থাকায় তারা মন্দিরে চুল দান করে আসেন। সেই চুল সংগ্রহ করার পর প্রথমে ভাল করে পরিষ্কার করা হয়। চুলের আকার ও স্বাস্থ্য দেখে বাছাই করে নেওয়া হয় ভাল চুলকে। এর পর সমান আকারের চুলকে একসঙ্গে রাখা হয়। তারপর চাহিদা অনুযায়ী সেই চুল ক্রেতার কাছে বিক্রি বা বিদেশে রফতানি করা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানান, “ভারতের চুলের মূলত চাহিদা রয়েছে চিন, ব্রাজিল, হংকং, ইতালি, আমেরিকায়।” আসিয়ান গোষ্ঠী ভুক্ত দেশগুলি সহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের বাজার ধরতে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই ব্যবসাতে কর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশের বিভিন্ন শিল্প মেলা ও প্রদর্শনীতে আরও আগ্রাসী ভাবে বাজার ধরার চেষ্টায় উৎসাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক। |