সুদ কমতে শুরু করলে
প্রাণ ফিরবে বাজারে

০১১ সালটি আদৌ ভাল কাটেনি শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছে। বিশ্ব জুড়েই বাজারের টালমাটাল অবস্থা থাকলেও ভারতে পতন যেন একটু বেশিই।
২০১০-এর ডিসেম্বর শেষে সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ২০,৫০০ অঙ্কের আশেপাশে। অন্য দিকে গত শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) মুম্বই সূচক বন্ধ হয়েছে ১৫,৭৩৯ পয়েন্টে। অর্থাৎ এক বছরে সেনসেক্স খুইয়েছে প্রায় ৪৮০০ পয়েন্ট বা ২৩ শতাংশ। এই পতন কম-বেশি ছুঁয়েছে প্রায় প্রত্যেক শেয়ার লগ্নিকারীকে। একই অবস্থা ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড লগ্নিকারীদেরও। ২০০৮-এর মন্দায় সেনসেক্স খুইয়েছিল ৫২ শতাংশ।
যে মার্কিন অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল বিশ্বময় সঙ্কট, সেই দেশের সূচক কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অনেক ভাল জায়গায়। ২০ ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত ডাও জোন্সের উত্থান হয়েছে কম- বেশি ২.৫ শতাংশ। অন্য দিকে একই সময়ে সাংহাই এবং হংকং, এই দুই সূচকেরই পতন ২০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মার্কিন ও ইউরোপীয় সমস্যার প্রভাব বেশি করে পড়েছে এশীয় বাজারেই।
শিল্প হিসাবে বেশি লোকসান হয়েছে পরিকাঠামো, মূলধনী পণ্য, ধাতু এবং ব্যাঙ্কিং শিল্পের। তুলনায় কম পতন হয়েছে ভোগ্যপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি এবং গাড়ি শেয়ারের। তালিকায় উপরের দিকে থাকবে এল অ্যান্ড টি, বি এইচ ই এল, স্টেট ব্যাঙ্ক, রিল্যায়ান্স, টাটা স্টিল, সেল, জয়প্রকাশ ইত্যাদির মতো নামী শেয়ার। অন্য দিকে তুলনামূলক ভাবে ভাল অবস্থায় আই টি সি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, টি সি এস, বজাজ অটো, হিরো মোটোকর্প। ভাল রকম পতন হয়েছে বহু মিড-ক্যাপ ও স্মল-ক্যাপ শেয়ারের। সব মিলিয়ে লোকসানে জর্জরিত সাধারণ লগ্নিকারীরা। প্রায় একই রকম করুণ অবস্থা খাঁটি ইক্যুইটি নির্ভর প্রকল্পগুলির। সে মিউচুয়াল ফান্ড অথবা ইউলিপ, যাই হোক না কেন।
২০১১ সালে নিশ্চিত আয় প্রকল্পগুলির চিত্র ছিল ঠিক উল্টো। চড়া মূল্যবৃদ্ধির জমানায় ব্যাঙ্ক সুদ উঠে এসেছে দুই অঙ্কে (প্রায় ১০ শতাংশে)। নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয়েছে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের উপর। ফলে বেসরকারি ব্যাঙ্কে সুদের হার পৌঁছে গিয়েছে ৭ শতাংশে। পাশাপাশি আয় বেড়েছে ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডেও। ফলে করদাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান বা এফ এম পি প্রকল্পগুলি। বেশ আকর্ষণীয় হয়েছে অতি স্বল্প মেয়াদের (আল্ট্রা শর্ট টার্ম) প্রকল্পগুলিও।
২০১১ সালে হেরফের করা হয়েছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির শর্ত এবং সুদের হার। এতে অবশ্য উপকৃত হবেন শুধুমাত্র পি পি এফ অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা। বোনাস উঠে যাওয়ায় এবং পরিবর্তে সুদ নামমাত্র বাড়ায় জনপ্রিয়তা হারাবে ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্প। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদ বাড়লেও তা ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় কম আকর্ষণীয়। বন্ধ করা হয়েছে কিষাণ বিকাশ পত্র। পাশাপাশি এজেন্টদের কমিশন কমানো হয়েছে। সুদ আকর্ষণীয় না-হওয়ায় এবং এজেন্ট পরিষেবা কমে এলে বিক্রি কমবে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলির।
আকর্ষণীয় সুদে বাজারে ডিবেঞ্চার এবং বন্ড ছাড়তে দেখা যাচ্ছে কিছু বেসরকারি সংস্থাকে। এই সব বন্ডে লগ্নি করার আগে ঝুঁকির দিকগুলি ভাল করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন। এই রকম ডিবেঞ্চার বাজারে সম্প্রতি ছেড়েছে স্বর্ণ-ঋণ কোম্পানি মুথুট ফিনান্স লিমিটেড। সুদের হার ১৩.৫ শতাংশ ৩ এবং ৫ বছর মেয়াদি বন্ডে। আর একটি বিকল্পে টাকা দ্বিগুণ হবে মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরে। এএ-(ডাবল এ মাইনাস) ক্রেডিট রেটিংযুক্ত এই ডিবেঞ্চার ইস্যু খোলা আছে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ইস্যুর সম্ভাব্য আকার ৬০০ কোটি টাকা। আবেদনের টাকার উপর সুদ দেওয়া হবে ৮ শতাংশ হারে। এই ডিবেঞ্চার নথিবদ্ধ হবে মুম্বই শেয়ার বাজারে। প্রতিটি ডিবেঞ্চারের মূল দাম ১০০০ টাকা। আবেদন করতে হবে কমপক্ষে ৫টির জন্য। মেয়াদ ২৪/৩৬/৬০ এবং ৬৬ মাস। অ্যালটমেন্ট দেওয়া হবে আগে আসার ভিত্তিতে।
আগেই বলা হয়েছে, ২০১১ সাল ভাল যায়নি বাজারের কাছে। ২০১২ ভাল হবে এমন কোনও ইঙ্গিত এখনও নেই। সুদের হার কমতে শুরু হলে হয়তো বাজার খানিকটা প্রাণ ফিরে পাবে। অতি সস্তায় বাজারে ব্লু-চিপ শেয়ার একটু একটু করে সংগ্রহ করা যেতে পারে এই সুযোগে। মিউচুয়াল ফান্ডেও লগ্নি শুরু করা যায় এসআইপি পদ্ধতিতে। আর লগ্নি করা যেতে পারে বন্ড ফান্ডে। সুদ কমতে শুরু হলেই বন্ড তেজী হয়ে উঠবে। যাঁরা ‘যদি ও কিন্তু’র মধ্যে যেতে চান না, তাঁদের জন্য ব্যাঙ্ক আমানতই এই বাজারে শ্রেষ্ঠ লগ্নির জায়গা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.