বর্ষশেষের দিনগুলিতে পর্যটক টানতে আগে থেকেই সেজেগুজে প্রস্তুত দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের পার্কগুলি। বড়দিনের সকালেই তার সুফল মিলতে শুরু করল। গেট খুলতেই জমে গেল ভিড়। ছেলে-বুড়ো কে নেই সে দলে!
টয় ট্রেন আছে বলে পর্যটকদের কাছে বরাবরই আলাদা কদর সিটি সেন্টারের একমাত্র পার্কটির। পার্কে ঘুরতে এসে বা পিকনিক করতে এসে মনের সুখে টয় ট্রেনে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। তবে বড়দিন উপলক্ষে পার্ক কর্তৃপক্ষ শিশুদের জন্য নিয়ে এসেছেন নতুন চমক, ‘ওয়াটার বল’। বাড়ির খুদেটাকে বড় একটা বেলুনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে জলে। ইচ্ছে মতো জলে ভেসে মজা নেওয়া যাচ্ছে। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে সে তো আর জল থেকে উঠতেই চায় না। কিন্তু উপায় কী? সময় যে বাঁধা। পরের জন লাইন দিয়ে আছে। তাই পার্ককর্মীর নির্দেশ অমান্য করার উপায় নেই। অগত্যা বেলুন থেকে বেরিয়ে আসতেই হল। বাবা-মা প্রবোধ দিচ্ছেন, “আবার পরে আসব।” |
সিটি সেন্টারের পার্কে সারা দিন এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে বার বার। পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে রবীন চট্টরাজ বললেন, “ওয়াটার বেলুনে চড়ে যাতে কোনও বিপদ না হয় তার জন্য বেলুনের পাশেই থাকছে স্পিড বোট। তাছাড়া কর্মীদের সতর্ক নজর তো আছেই।” তিনি আরও জানালেন, শীতের মরসুমে বাচ্চাদের জন্য ‘কিডস্ পার্ক’টিও সাজানো হয়েছে নতুন ভাবে। সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তাই বড়দিনে বা নববর্ষের দিনে পার্কে পিকনিক করার অনুমতি দেওয়া হয় না।
ইস্পাত কলোনির কুমারমঙ্গলম পার্কে বড়দিন উপলক্ষে ভিড় ছিল সারাদিনই। তবে পার্কের প্রধান আকর্ষণ ‘মিউজিক্যাল ফাউন্টেন’ দেখতে বিকেলের দিকে সেই ভিড় বেড়ে গেল কয়েকগুণ। পার্কটি আকারে সিটি সেন্টারের পার্কের তুলনায় বহুগুণ বড়। প্রচুর গাছ, বিশাল জলাশয়। সঙ্গে আকর্ষণ হিসেবে টয় ট্রেন, বোটিং, বিভিন্ন ধরনের রাইড। পার্কে ঘুরতে ঘুরতে খিদে পেয়ে গেলেও চিন্তা নেই। ভিতরেই আছে আধুনিক রেস্তোরাঁ। পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে নদের চাঁদ মণ্ডল জানান, আগের থেকে আধুনিক করে গড়ে তোলা হয়েছে মিউজিক্যাল ফাউন্টেনটিকে।
ওদিকে, শহর ছাড়িয়ে কাঁকসার দেউল পার্ক বা আউশগ্রামের ভাল্কি মাচানে এ দিন সকাল থেকেই দলে দলে ভিড় জমিয়েছে পিকনিক দলের সদস্যেরা। আগে দেউল পার্কে সুযোগ সুবিধা তেমন ছিল না। কিন্তু বছর কয়েক আগে একটি বেসরকারি সংস্থা দায়িত্ব নিয়ে আধুনিক করে গড়ে তুলেছে পার্কটিকে। এখন রাজ্য এমনকী ভিন রাজ্য থেকেও ওই পার্কে ঘুরতে আসেন অনেকে। পার্কের কর্মীরা জানালেন, এমনিতে সারা বছর অল্প বিস্তর ভিড় লেগেই থাকে। তবে বড়দিনে সকাল থেকেই ছিল ব্যাপক ভিড়।
রোজকার ব্যস্ততা ভুলে এক দিনের জন্য যাঁরা বাইরের জগৎ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রেখে বিশাল অরণ্যে হারিয়ে যেতে চান তাঁদের জন্য ভাল্কি মাচানের কোনও বিকল্প নেই। দায়িত্বে থাকা সংস্থার পক্ষে হিমাংশু মণ্ডল বললেন, “শীতের মরসুমেই এখানে ভিড় জমে। ইংরাজি নববর্ষের দিন সকাল থেকেই স্থানীয় আদিবাসীদের নিয়ে এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।” |