কর্মী-আন্দোলনের জেরে অচল হয়ে পড়া উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা মেটাতে জরুরি বৈঠক ডাকলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বৈঠকটি হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে। পক্ষান্তরে লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে থাকা অচলাবস্থা কাটাতে এ বার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্য অসিত দাস। বৃহস্পতিবার থেকে এক দল ছাত্র প্রায় ৩০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পদস্থ আধিকারিককে। শনিবার উপাচার্য বলেন, “আচার্য তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে আমার জন্য পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করার আর্জি জানাব। কারণ, নিরাপত্তার অভাবে আমি অফিসে যেতে না পারাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা হচ্ছে। আর আমাকে না পেয়ে ঘেরাও করা হচ্ছে আমার সহকর্মীদের।”
উচ্চ শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা মেটাতে যে বৈঠক ডাকা হয়েছে তাতে যোগ দিতে ডাকা হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বুট, ‘অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (আবুটা)-এর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিনিধি অজিত রায় ও ‘টিচার্স কাউন্সিল’-এর সদস্য রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে হবে। সে জন্য আন্দোলনকারী--সমিতি, ‘আবুটা’র প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। টিচার্স কাউন্সিলের প্রতিনিধিকেও বৈঠকে আসতে বলা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও থাকবেন। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটবে।”
তবে ওই বৈঠকে যোগ দিতে গেলেও উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তা এখনই প্রত্যাহার করার কথা ভাবা হচ্ছে না বলে এ দিন দেবীপ্রসাদবাবু ও অজিতবাবু জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা ‘অনড়’ থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ ছাত্রছাত্রী। আন্দোলনকারীদের ‘মনোভাব’ দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি’ নিয়ে ১৮ জন অধ্যাপক-শিক্ষক লিখিত ভাবে আচার্য তথা রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সদস্যদের একাংশ আবার ‘উদ্বিগ্ন’, “দলেরই দার্জিলিং জেলার এক প্রভাবশালী নেতা বর্তমান উপাচার্যকে সরানোর দাবিতে চলা আন্দোলনকে আড়াল থেকে সমর্থন করে চলেছেন। সমস্যা আদৌ মিটবে তো!” যদিও ‘টিচার্স কাউন্সিল’-এর সদস্য তথা তৃণমূল শিক্ষা সেলের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রথীনবাবু বলেন, “উপাচার্য ৪৩ দিন ধরে অফিসে ঢুকতে পারছেন না। এটা চলতে পারে না কি! শিক্ষামন্ত্রী আলোচনায় সমস্যা মেটাতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।”
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পরিস্থিতি’ নিয়ে উপাচার্য অসিতবাবু অবশ্য এখনই ‘আশাবাদী’ হতে পারছেন না। ছাত্র আন্দোলনের জেরে লাগাতার ঘেরাওয়ের আশঙ্কায় অফিসে না গিয়ে কোচবিহার শহরে বাংলোয় বসে কাজ চালাচ্ছেন তিনি। তাতেই কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য বলেন, “সম্প্রতি আমাকে অফিসে দফায় দফায় ঘেরাও করা হয়েছে। আমার অনুপস্থিতিতে সহকর্মীরাও ঘেরাওয়ের মুখে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি রাজ্যপালকে জানাব। জানাব কৃষিমন্ত্রীকেও।”
জেলা পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়েও ক্ষুব্ধ উপাচার্য। তাঁর অভিযোগ, “সাম্প্রতিক সব ক’টি ঘেরাওয়ের বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ঘেরাও সরানোর ব্যাপারে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” অভিযোগ মানেননি কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস। তিনি বলেন, “ঘেরাওয়ের খবর পেলে প্রতিবারই পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।” |