গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অথরিটি (জিটিএ) চুক্তি করলেও পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের ‘অধিকার’ হাতছাড়া করতে যে তাঁরা রাজি নন, সে কথা ফের জানিয়ে দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শীর্ষ নেতারা। শনিবার মহাকরণে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে জিটিএ বিল নিয়ে বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এ কথা জানান। তিনি বলেন, “আমরা জিটিএ চুক্তিতে সই করেছি। তা বলে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি জানানো যাবে না, এমন কথা চুক্তিতে নেই। মনে রাখতে হবে হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়েই আমরা জিটিএ চুক্তি করেছি। আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে আন্দোলনের অধিকার একমাত্র আমাদেরই আছে। কাজেই দলের যুব সংগঠন তা নিয়ে আলাদা কর্মসূচি নিতেই পারে। প্রয়োজনে যুব সংগঠনের নেতাদের ডেকে বৈঠক করা হবে।”
পাশাপাশি, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জানিয়ে দেন, জিটিএ-র মধ্যে তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকার অন্তর্ভুক্তি-সহ বেশ কিছু দাবি ফের রাজ্য সরকারের কাছে জানানো হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব বলেছেন, “চুক্তির মধ্যে কোথাও পৃথক গোর্খাল্যাণ্ডের দাবি বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু যে চুক্তি হয়েছে তাকে সম্মান জানানোটাও তো আমাদের সকলের দায়িত্ব। সেটা করা হবে বলে ওঁরা তো আশ্বাসও দিয়েছেন।” |
পাশাপাশি, মুখ্যসচিব জানান, জিটিএ গঠনের বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় তিন মাস সময় লাগে। দ্রুত শেষ করার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানাবে রাজ্য। পাহাড়ে যুবকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য একটি পৃথক কমিটি গড়া হবে বলেও সমরবাবু জানিয়েছেন। পাহাড়ের যুবকদের চাকরির পাওয়ার সুবিধার্থে সেখানে ‘নিয়োগ-ক্যাম্প’ করা হবে। তবে, নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আলাদা করে চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। জঙ্গলমহলের প্রসঙ্গ উঠলে সমরবাবু বলেন, “মাওবাদীদের সমস্যা থাকায় জঙ্গলমহলের বিষয়টি ভিন্ন।” জিটিএ-র মধ্যে তরাই ও ডুয়ার্সের এলাকা অন্তর্ভুক্তির জন্য উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটির মেয়াদ ১৮ জানুয়ারি শেষ হবে। আরও তিন মাস মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে জানান মুখ্যসচিব।
এ দিন মহাকরণে মুখ্যসচিবের সঙ্গে দু’ঘন্টা বৈঠক করেন রোশন। সঙ্গে ছিলেন দলের নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী। পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন রোশন। তার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তাঁদের দলের যুব সংগঠনের আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়ে মতামত জানান মোর্চার নেতারা। জিটিএ চুক্তি দ্রুত রূপায়ণের দাবির সঙ্গে সঙ্গে আলাদা রাজ্যের বিষয়ে দলের তরফে নানা ভাবে প্রচার-সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের কয়েকজন বলেছেন, “ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র জেনেও কোনও রাজনৈতিক দল বিশেষ ধর্মের কর্তৃত্বের কথা বলে পালে বাতাস কাড়ার চেষ্টা করে। আবার ভোটে অংশ নিলেও কোনও দল বিপ্লবের স্বপ্ন সামনে রাখে। তেমনই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের অধিকার হাতছাড়া করলে পাহাড়ে ফের কোনও দল কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই ঘুরেফিরে হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ডের কথা বলে জিটিএ চালানোর প্রক্রিয়া মসৃণ করতে চাইছেন।”
বস্তুত, মোর্চার অন্দরেও অনেকের একই অভিমত। কারণ, গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েম করলেও পার্বত্য পরিষদ চুক্তির পরে আর আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করেননি সুবাস ঘিসিং। প্রায় আড়াই দশক পরে বিমল গুরুঙ্গ ফের আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে নামলে পাহাড় ছাড়তে হয় ঘিসিংকে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতেই গুরুঙ্গরা বারেবারেই ‘হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড’-এর কথা বলার কৌশল নিয়েছেন বলে পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই ধারনা। |