পুরুলিয়ার রেখা, বীণাদের মতো সুযোগ পায়নি বারাসতের চক আমিনপুরের আফরিনা খাতুন। শিশুশ্রমিক স্কুলের পড়ুয়া রেখারা স্কুলের সাহায্য নিয়ে বাড়ির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু নবম শ্রেণির পড়ুয়া আফরিনা বিয়ে রুখে দেওয়ার জন্য কাউকে জানানোর সুযোগ পায়নি। বিয়ের দু’দিন পরে স্কুলে পরীক্ষার ফল দেখতে যাওয়ার নাম করে শ্বশুরবাড়ি থেকে সে পালিয়ে পুলিশের কাছে যায়। পুলিশ তার বাবাকে গ্রেফতার করেছে।
শনিবার দুপুরে বারাসতের আমিনপুর তদন্ত কেন্দ্রে ওই কিশোরী তার বাবা, মা ও স্বামীর বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মেহেমুদ আখতার বলেন, “কিশোরীটির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মা ও স্বামীর খোঁজ চলছে।” তিনি জানান, কিশোরী আদালতের কাছে যেখানে থাকার কথা জানাবে, সেখানেই তাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ বছরের আফরিনা স্থানীয় দুগদিয়া পলতাডাঙা হাইস্কুলে পড়ে। তার বাবা আখের আলি কোনও কাজ করেন না। আফরিনারা এক ভাই, এক বোন। পরিবারে প্রবল দারিদ্র। পুলিশের কাছে আফরিনা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পড়শি মধ্য চল্লিশের আসিরউদ্দিন গাজি তাদের বাড়িতে আসে। তাকে বিয়ে করার জন্য বাবা আখের আলিকে আড়াই হাজার টাকা দেয়। বিয়ের কথা জানতে পেরেই আফরিনা প্রতিবাদ করে। কিন্তু তার কথা কে শোনে! আফরিনার অভিযোগ, “বাবা-মা আমাকে ঘরের ভিতরে আটকে রাখে। সে দিন রাতেই আসিরউদ্দিন লোকজন নিয়ে এসে আমাকে জোর করে তার বাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আমাকে ওরা মারধর করে। বাধ্য হয়ে মত দিই।”
পুলিশকে সে জানিয়েছে, শ্বশুরবাড়িতেও তাকে কড়া পাহারায় রাখা হত। সেখান থেকে সে পালানোর ছক কষতে থাকে। শনিবার সকালে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের জানায়, স্কুলে পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। সে দেখতে যাবে। সম্মতি মিলতেই সে প্রথমে স্কুলে যায়। পাশ করেছে জানার পরে সোজা আমিনপুর তদন্ত কেন্দ্রে চলে যায়। পরে আফরিনা বলে, “আমি আরও পড়তে চেয়েছিলাম। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে না চাওয়ায় ওরা অত্যাচার করেছে। আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।”
রেখা, বীণা, আফসানা,আফরিনা- সচেতনতার বৃত্তটা ক্রমশ বড় হচ্ছে। |