সভাপতি নির্বাচন ঘিরে ধুন্ধুমার বনগাঁ কলেজে
ছাত্র নির্বাচন ঘিরে সংঘর্ষ ডায়মন্ড হারবার কলেজে, অবরুদ্ধ শহর
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির কবল মুক্ত করতে আইন করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু নানা অছিলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির দাপাদাপি কমার কোনও লক্ষণ নেই। ছাত্র সংসদ বা পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছেই। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংগঠনগুলির তো বটেই, সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির ‘কোমর বাঁধা’ প্রস্তুতি ‘সাধারণ নির্বাচন’-এর চেহারা নিচ্ছে। কলেজে কলেজে সংঘর্ষের পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি এবং মদতের অভিযোগ উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। শনিবার ডায়মন্ড হারবারের ফকিরচাঁদ কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের কর্মী-সদস্যদের। এতে এক প্রার্থী-সহ এসএফআইয়ের তিন জন জখম হন।
দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে নথি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: পার্থসারথি নন্দী
এ দিনই বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি নির্বাচন সংক্রান্ত সভা ঘিরেও গোলমাল হয়। ‘বহিরাগতরা’ কলেজে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এক শিক্ষক এবং এক এসএফআই কর্মী আহত হন। সপ্তাহ খানেক আগে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি এবং এসএফআইয়ের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয় গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজেও। ফকিরচাঁদ কলেজের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোলমালে এ দিন কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ডায়মন্ড হারবার শহর। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার এবং দলের ডায়মন্ড হারবার-১ ব্লক সভাপতি অরুময় গায়েনের মদতে টিএমসিপি তাদের সমর্থকদের ভোট দিতে বাধা দেয় এবং প্রার্থী ও কর্মীদের মারধর করে। প্রতিবাদে কয়েকশো ছাত্রছাত্রী সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টা খানেক ডায়মন্ড হারবার স্টেশন মোড় অবরোধ করেন। প্রায় একই সময় ধরে একই অভিযোগে এসএফআইও ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের লেনিননগর মোড়ে অবরোধ করে। আটকে পড়ে যানবাহন। সমস্যায় পড়েন ট্রেনযাত্রীরা। ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দুপুর ১টা থেকে ঘণ্টা খানেক রেল অবরোধ করে ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবরোধ তোলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামানো হয়।
এ দিন ওই কলেজের দিবা বিভাগের ছাত্র সংসদের নির্বাচন ছিল। শুক্রবার কলেজের অধ্যক্ষ তথা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সুবীরেশ ভট্টাচার্য এক বৈঠকে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা তথা প্রিসাইডিং অফিসারদের জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালতের নির্দেশ, নির্বাচন করা যেতে পারে, ভোট গণনাও হবে, কিন্তু ফল ঘোষণা করা যাবে না।
ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে রেল অবরোধ ছাত্র পরিষদের। দিলীপ নস্করের তোলা ছবি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ভোট শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই ছাত্র পরিষদ ও এসএফআইয়ের সঙ্গে টিএমসিপি-র হাতাহাতি বাধে। তিনটি সংগঠনই আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। হাতাহাতিতে জখম হন প্রার্থী পতিকুর রহমান-সহ এসএফআইয়ের তিন জন। তাঁদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধু পতিকুর চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি এসএফআইয়ের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও। ঘটনাস্থলে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। গোলমাল বাড়তেই অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী আসে। অভিযোগ, ভোট শুরুর আগেই কলেজ চত্বরে কয়েক হাজার বহিরাগত জড়ো হয়। নির্বাচন শুরুর পরেই অধিকাংশ বুথ দখল করে নেয় তারা। এসএফআই-এর অভিযোগ, ওই বহিরাগতরা তৃণমূলের সমর্থক। তারা অনেক বুথে ব্যালট ছিনতাই করে। মহিলা প্রিসাইডিং অফিসারের উদ্দেশে কটূক্তি করে। এর জেরে বন্ধ হয়ে যায় ভোট প্রক্রিয়া। পরে ভোট প্রক্রিয়া আবার শুরু হলেও এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদ তাতে সামিল হয়নি। দু’পক্ষই থানায় টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। গোলমালের সময়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি বলেও তাদের অভিযোগ।
এসএফআই-এর অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক দীপক হালদার বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢুকে ছাত্রদের মারধর করেছেন। তাঁদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির সহ-সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তীর অভিযোগ, নির্বাচন চলাকালীন তৃণমূলের বিধায়ক ও কাউন্সিলার কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে ঢোকেন। এমনকী মারামারিতেও তাঁদের মদত ছিল। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দীপকবাবু। তিনি বলেন, “এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদ ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢুকেছিল। পুলিশ তাদের বের করে দিতে গেলে ধাক্কাধাক্কি হয়। তাতে কয়েক জন জখম হতে পারে। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” পুননির্বাচনের দাবিতে এসএফআই-এর মতো ছাত্র পরিষদও মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষে বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সিপিএমের ৩৪ বছরে ছাত্র সংঘর্ষের নজির অনেক বেশি। অথচ এই ছ’মাসে কয়েকটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বড়সড় ছাত্র সংঘর্ষ এই প্রথম ঘটল।”
এ দিনই বনগাঁর কলেজে সভাপতি নির্বাচন শুরু হয় দুপুর ২টো নাগাদ। অভিযোগ, বিকেল ৪টে নাগাদ এক দল বহিরাগত সভাস্থলে ঢুকে ভাঙচুর করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলামের কাছ থেকে নথিপত্র কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। এসএফআইয়ের অভিযোগ, সভা পণ্ড করার জন্য তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাই ওই হামলা চালায়। কলেজের এসএফআই নেতা রীতেশ ঘোষ বলেন, “বিধায়কের মদতেই ভাঙচুর হয়।” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অবশ্য বলেন, “বিধায়কের ভূমিকা সদর্থক ছিল। তিনি বহিরাগতদের তাণ্ডব ঠেকানোর চেষ্টা করেও পারেননি।” থানায় অভিযোগও করেছেন তিনি। কলেজের পরিচালন সমিতির সরকারি প্রতিনিধি, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “তৃণমূলের কেউ ভাঙচুরের ঘটনায় যুক্ত নয়। সিপিএম পরিকল্পিত ভাবে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বহিরাগতদের দিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।”
অন্য দিকে, বর্ধমান রাজ কলেজে প্রথম বার ছাত্র সংসদের ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে টিএমসিপি। অভিযোগ, সেই আনন্দে শুক্রবার রাতে পুলিশের বিনা অনুমতিতে বিজয়-মিছিল করে যাওয়ার সময়ে সিপিএমের বর্ধমান শহর ২ নম্বর লোকাল কমিটি অফিস ভাঙচুর করে তারা। তার আগে সিপিএমের জেলা সম্পদক অমল হালদারের গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের অনুমতি না নিয়ে মিছিল করার কথা মেনে নিয়েছেন টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র। তাঁর দাবি, “আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে মিছিল করা হয়। তবে ভাঙচুর করা হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.