কর্মী নিয়োগকে ঘিরে বিবাদের জেরে হাওড়ার ধূলাগড়ি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা, ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক বা মুম্বই রোডের এই দু’টি টোল প্লাজা থেকে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে প্রায় এক মাস। আর তার জেরে প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)-এর। রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে টোল প্লাজা দু’টির দখল নিয়ে আপাতত তা সিল করে দিয়েছে এনএইচএআই।
আগে এনএইচএআই এই দু’টি জায়গায় টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছিল দু’টি বেসরকারি এজেন্সিকে। এর জন্য কর্মীও নিয়োগ করে এজেন্সি দু’টি। যে টোল আদায় হত, তার পুরোটাই এনএইচএআই পেত। তার বদলে টোল আদায়ের প্রশাসনিক খরচ বাবদ নির্দিষ্ট টাকা এজেন্সি দু’টি পেত। চলতি বছরের মাঝামাঝি এনএইচএআই সিদ্ধান্ত নেয়, যে-সব সংস্থা সর্বোচ্চ টোল আদায় করতে পারবে, দেশজুড়ে নিলামের মাধ্যমে টোল প্লাজাগুলির দায়িত্ব তাদের হাতে দেওয়া হবে। |
বন্ধ ধূলাগড়ি টোল প্লাজা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
এখানেই বিবাদের সূত্রপাত।
ধূলাগড়ি ও ডেবরা-সহ রাজ্যের ৭টি টোল প্লাজার দায়িত্ব নিলামের মাধ্যমে পায় মুম্বইভিত্তিক দু’টি সংস্থা। ধূলাগড়িতে যে বেসরকারি সংস্থা এত দিন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হয়ে টোল আদায় করত, তারা এ কাজে প্রাক্তন সেনাকর্মীদের নিয়োগ করেছিল। মুম্বইভিত্তিক সংস্থার কাছে এই প্রাক্তন সেনাকর্মীরা দাবি করেন, তাঁদেরই ফের নিয়োগ করতে হবে। মুম্বইভিত্তিক সংস্থাটি তাতে রাজি হয়নি। কিছু প্রাক্তন সেনকর্মীকে তারা নিতে চাইলেও তাঁদের দাবিমতো বেতন দিতে সংস্থাটি অস্বীকার করে। অন্য দিকে, ডেবরায় টোল আদায়ের কাজে যে সব কর্মী নিযুক্ত ছিলেন তাঁরা যেমন পুনর্বহালের দাবি তোলেন, তেমনই স্থানীয় যুবকেরাও কাজ পাওয়ার দাবিতে সরব হন।
এ সবের মধ্যেই ২৭ নভেম্বর ওই দুই এজেন্সির সঙ্গে এনএইচএআই-এর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন থেকেই টোল আদায় বন্ধ। তবে পুরনো কর্মীরা ধূলাগড়ি ও ডেবরার টোলপ্লাজা দখল করে বসেছিলেন। ২৯ নভেম্বর মহাকরণে পুলিশ, প্রশাসন ও পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে এনএইচএআই। রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী সুব্রত বক্সিও ছিলেন। পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই দিনই টোলপ্লাজা দু’টি সিল করে দেয় এনএইচএআই। অস্থায়ী টোল-অফিসের কম্পিউটার-সহ যাবতীয় সরঞ্জামও সরিয়ে নেওয়া হয়।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা জানান, মুম্বই রোড ছ’লেনে সম্প্রসারিত হচ্ছে ‘বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার’ বা ‘বিওটি’ পদ্ধতিতে। যে ঠিকাদার সংস্থা বরাত পেয়েছে, ছ’লেন করার পরে ২৫ বছর ধরে টোল আদায় করে খরচ তুলে নেবে। চুুক্তি অনুযায়ী টোল প্লাজা দু’টি তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। তবেই তারা রাস্তা তৈরির কাজে নামবে। তাই আপাতত টোল আদায় নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় এনএইচএআই। ওই কর্তা বলেন, “আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত চূড়ান্ত বোঝাপড়ার সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ওই সংস্থা কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ধূলাগড়ি এবং ডেবরা এই দু’টি টোলপ্লাজার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ঠিকাদার সংস্থার হাতে। ওই সংস্থাই নিজেদের মতো করে টোলপ্লাজার পুনর্গঠন করে নেবে।” |