শুধু কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্যও কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।
শিক্ষায় উৎকর্ষ বাড়ানোর দোহাই দিয়ে নতুন নতুন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন তিনি। ওই সিদ্ধান্ত ‘ত্রুটিপূর্ণ’ দাবি করে রাজ্যপালের মন্তব্য, উচ্চশিক্ষা প্রসারে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নারায়ণনের মতে, কলকাতা, যাদবপুরের মতো রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া উচিত।
বাম জমানাতেও রাজ্যের তরফে বার বার অভিযোগ করা হয়েছে, রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ সাহায্য দেয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরাও এ নিয়ে ক্ষোভ জানান। শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশের উপস্থিতিতে যাদবপুরের আচার্য নারায়ণন বলেন, “কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গুরুত্ব আছে ঠিকই। কিন্তু তার সব ক’টিই উৎকর্ষ কেন্দ্র নয়। উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের বেশি করে অর্থ সাহায্য দেওয়া দরকার। কেন্দ্রকেই এই সাহায্য দিতে হবে। কারণ বেশির ভাগ রাজ্যে আর্থিক সঙ্কট প্রকট।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও রাজ্যপালের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “এ নিয়ে দিল্লিতে দরবার করেছি এবং সেই প্রয়াস চালিয়ে যাব।”
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ইউজিসি তথা কেন্দ্রীয় সরকার ‘পক্ষপাত’ করে বলে অতীতে বারবার অভিযোগ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা ইউজিসি-র প্রাক্তন সদস্য সুরঞ্জন দাস। শনিবার তিনি বলেন, “২০০৯-’১০ শিক্ষাবর্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ছিল ২৫৪ কোটি টাকারও বেশি। তার মধ্যে মাত্র সাড়ে ৪৫ কোটি টাকা মিলেছে ইউজিসি-র কাছ থেকে। সেটাও উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে। রক্ষণাবেক্ষণে ইউজিসি টাকা দেয় না।” প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীর অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীদের সংগঠন ‘ক্যাবে’-র বৈঠকে ও বিধানসভায় এ কথা বলে লাভ হয়নি।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ইউজিসি-র দৃষ্টিভঙ্গি যে ‘নিরপেক্ষ’ নয়, এ দিন সে কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন কমিশনের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশও। সমাবর্তনের পরে তিনি বলেন, “দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কেন্দ্র ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনুদানের ফারাক মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছে ইউজিসি। ওই পরিকল্পনায় শিক্ষা খাতে মোট ১,৮৪,৭৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
২০১০-’১১ আর্থিক বছরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ৯.০৮% দিয়েছে ইউজিসি। রাজ্যের অনুদান ছিল ৮৫.৩৮%। বাকি অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেদ প্রকাশের অভিযোগ, দেশের অধিকাংশ রাজ্য সরকারের মধ্যেই উচ্চশিক্ষা প্রসারে আগ্রহ চোখে পড়ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাতে শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য আরও আগ্রহী হয়, সে জন্য সমাবর্তন বক্তৃতায় নারায়ণনের কাছে অনুরোধ জানান বেদ প্রকাশ।
শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা দেশেই উচ্চশিক্ষার মান যথেষ্ট উন্নত নয় বলে এ দিন আক্ষেপ করে নারায়ণন বলেন, “২০০৫-এ জাতীয় নলেজ কমিশন, ২০০৮-এ যশপাল কমিটি, নয়া আইন সব হচ্ছে। কিন্তু উচ্চশিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে না। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির হার ১২% কিছু বেশি, যা এশিয়ার গড়ের তুলনাতেও কম।” ভাল ছাত্রছাত্রী থাকা সত্ত্বেও দেশে উচ্চশিক্ষার মান আশানুরূপ নয় বলে রাজ্যপাল জানান। একই মত জানান বেদ প্রকাশও। |