রাজ্যের পিছিয়ে পড়া ১১টি জেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের মূল প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থের প্রথম কিস্তির টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি পাঁচটি জেলা। এরই মধ্যে ওই ১১টি জেলার জন্যই ‘বিশেষ বিআরডিএফ প্রকল্পে’ কেন্দ্রীয় যোজনা কমিশনের ৮১০০ কোটি টাকার বেশি মঞ্জুর করার খবর এসেছে রাজ্য সরকারের কাছে।
যে জেলাগুলি পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিআরডিএফ (ব্যাকওয়ার্ড রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থের প্রথম কিস্তির টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি, সেগুলির মধ্যে রয়েছে মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের দুই জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া। বাকি তিনটি জেলা হল পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মুর্শিদাবাদ।
তবে এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ বিআরডিএফ প্রকল্পে আরও ৮১০০ কোটি টাকার খবর এসে যাওয়ায় স্বভাবতই খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার মহাকরণে ‘বিশেষ বিআরডিএফ’ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সাহায্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগের বামফ্রন্ট সরকার কোনও ক্ষেত্রেই ভাল কাজ করেনি। ওরা কোনও পরিকল্পনা করত না। প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিতে পারেনি বলে কেন্দ্রের সাহায্যও পায়নি। আমরা গত তিন মাসে যে ডিপিআর দিল্লির কাছে পাঠিয়েছি, তার প্রত্যেকটা অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।”
বিশেষ অনুদান হিসেবে ৮১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়ে স্বভাবতই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিশেষ বরাদ্দের কথা ঘোষণা করছেন, তার কিছু ক্ষণ আগেই মহাকরণ থেকে কয়েকশো মিটার দূরে পঞ্চায়েত দফতরের অফিসে এক বৈঠকে ওই ১১টি জেলারই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ পর্যালোচনা করছিলেন সরকারি কর্তারা। কিন্তু তাতে মোটেই খুশি হতে পারেননি তাঁরা। বৈঠকে হাজির ছিলেন ওই ১১টি জেলা-সহ মোট ১৮টি জেলার জেলাশাসক। হাজির ছিলেন কয়েকটি দফতরের সচিবও। |
কোথায় কত |
দফতর |
বরাদ্দ |
• বিদ্যুৎ |
২৫১১ |
• স্বাস্থ্য |
২২০০ |
• পূর্ত ও সড়ক |
১২০০ |
• জনস্বাস্থ্য কারিগরি |
১০১২ |
• স্কুল শিক্ষা |
৫৭৫ |
• সেচ |
১৩০ |
• ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প |
২৬৯ |
• আবাসন |
২০০ |
* হিসেব কোটি টাকায় |
|
রাজ্যের সব চেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে জঙ্গলমহল-সহ ১১টি জেলার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিআরডিএফ প্রকল্প চালু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ খামতি ঢাকতেই এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এর পুরো টাকাটাই দেয় কেন্দ্র। বছরে দু’কিস্তিতে টাকা আসে। নিয়ম হল, বরাদ্দের অর্ধেক টাকা খরচ করলে তবেই পরের কিস্তির টাকা পাওয়া যায়।
সরকারি কর্তাদের বৈঠকে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি আর্থিক বছরের প্রায় ন’মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই মূল পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করতে পারেনি ৫টি জেলা। এক মুখপাত্র বলেন, “পিছিয়ে থাকা জেলাগুলিকে জানুয়ারির মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা শেষ করতে বলা হয়েছে। কারণ তার পরে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এলেও খরচ করা মুশকিল।”
এক দিকে চালু প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ করতে না পারা, অন্য দিকে একই জেলার জন্য আবার বিশেষ অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পরে শেষ পর্যন্ত উন্নয়নের কাজে কতটা অর্থ ব্যয় হবে, সেটাই এখন দেখার।
ক্ষমতায় এসেই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির জন্য কেন্দ্রের কাছে ‘বিশেষ অনুদান’ চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল কেন্দ্র। পাশাপাশি, পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিদর্শনও করেন। এর প্রেক্ষিতে রাজ্যকে ‘বিশেষ অনুদান’ হিসাবে মোট ৮৭৫০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। শুক্রবার দিল্লিতে রাজ্যের কয়েক জন সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর আটটি দফতরের প্রকল্পগুলির অনুমোদন দিয়ে প্রায় ৮১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, কয়েকটি দফতরকে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ডিপিআর জমা দিতে বলা হয়েছে। সেটা জমা পড়লেই অনুদানের বাকি অর্থও পাওয়া যাবে।
বিশেষ অনুদান প্রকল্পে যে ৮টি দফতরের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় যোজনা কমিশন, তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ (২৫১১ কোটি), স্বাস্থ্য (২২০০ কোটি), পূর্ত ও সড়ক (১২০০ কোটি), স্কুল শিক্ষা (৫৭৫ কোটি), জনস্বাস্থ্য কারিগরি (১০১২ কোটি), সেচ (১৩০ কোটি), ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প (২৬৯ কোটি) এবং আবাসন (২০০ কোটি) দফতর। পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রকল্পের জন্যই এই বিশেষ অনুদান। সরকারি সূত্রের খবর, প্রতিটি দফতরের প্রকল্প শেষ করতে হবে দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। চলতি আর্থিক বছরে পাওয়া যাবে বরাদ্দের ৩০% অর্থ।
এর পাশাপাশি দার্জিলিংকে ‘অনুন্নত জেলা’ ঘোষণা করার দাবি নিয়ে এ দিনই কলকাতায় এসেছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)-র নেতা রোশন গিরি॥
মুখ্যসচিব সমর ঘোষ জানান, দার্জিলিংকে অনুন্নত জেলা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য অবিলম্বে কেন্দ্রকে চিঠি লেখা হবে। কিন্তু, দার্জিলিং কি অনুন্নত জেলার মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য? সমরবাবু বলেন, “এ সব ক্ষেত্রে বাঁধাধরা যে সংজ্ঞা রয়েছে, তা না-দেখাই ভাল।” |