চায়ের কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে দূরত্বটা শেষ পর্যন্ত তা হলে রয়েই গেল!
পাঁচ নয়, তিন নয়, মাত্র এক পয়েন্টের জন্য কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া হল না বাংলার! জলে গেল অনুষ্টুপ মজুমদারের সেঞ্চুরি। অশোক দিন্দা-লক্ষ্মীরতন শুক্লর যুদ্ধ। অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের লড়াই।
শেষ আটে উঠতে হলে মাত্র ৩৪-টা রান শনিবার দরকার ছিল বাংলার। সমীকরণটা সহজ: কোনও উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলতে হবে ওই ৩৪। জিততে হবে দশ উইকেটে। তা হলেই হাতে চলে আসবে শেষ আটের টিকিট।
আর শেষ আট! স্কোরবোর্ডে রান যখন ১৫, গগণদীপ সিংহের একটা বলে খোঁচা দিয়ে বসলেন বাংলা ওপেনার অরিন্দম দাস। বরোদা উইকেটকিপার পিনাল শাহের সেটা তালুবন্দি করতে কোনও অসুবিধা হয়নি। বাংলার যাবতীয় স্বপ্নের ওখানেই সলিলসমাধি।
টিম ম্যানেজমেন্ট যদিও বলছে, দোষ অরিন্দমের নয়। দোষ পুরো আম্পায়ারের। বল অরিন্দমের ব্যাটেই নাকি লাগেনি। ভিডিওতেও সেটা পরে দেখা গিয়েছে। সিএবি জানাচ্ছে, অধিনায়কের রিপোর্টেও আম্পায়ারিং নিয়ে কড়া মন্তব্যই থাকছে। আর অরিন্দম নিজে কী বলছেন? পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন। বরোদা থেকে ফোনে বলছিলেন, “বল আমার ব্যাট কেন শরীরের কোথাও লাগেনি।” সঙ্গে যোগ করলেন, “সবচেয়ে খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, আমার জন্য টিমকে ডুবতে হল। ওই একটা সিদ্ধান্তের জন্য এতগুলো ভাল পারফরম্যান্সের দাম রইল না।” |
টিম ম্যানেজমেন্ট বাজে আম্পায়ারিংয়ের কথা বলছে বটে, কিন্তু টিমমেটদের মধ্যে আবার বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে অরিন্দমকে নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন, আম্পায়ার ঠিক ছিল না ভুল, সেটা পরের ব্যাপার। অরিন্দম ঝুঁকি নিতে গেলেন কেন? হাতে অফুরন্ত সময়। দেখেশুনে রানটা তুলতে কোনও অসুবিধা তো ছিল না। চলতি মরসুমে একটা সেঞ্চুরি ছাড়া আর রান নেই অরিন্দমের। ৬ ম্যাচে রান ২৪৫। গড় ২৭.২২। বলা হচ্ছে, অনুষ্টুপ মজুমদার তো একটা ম্যাচে নেমেই সেঞ্চুরি করে দেখালেন। ওপেন করেছেন আগে। অরিন্দমের চেয়ে তিনি ভাল ছাড়া খারাপ হবেন না। টিমের একাংশ আরও বলছে, অরিন্দমের একটা ভুলের জন্য তামিলনাড়ু-মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে গেল হরিয়ানা (গুজরাতকে সরাসরি হারিয়ে)। যেখানে ছ’পয়েন্ট তুলতে পারলে বাংলারই যাওয়ার কথা ছিল।
ঠিকই। শনিবার সকালে দিন্দার আগুনে বোলিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল, পাঁচ কেন ছ’পয়েন্টও আসছে হেঁটে-হেঁটে। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার পাঁচ উইকেট, সব মিলিয়ে ম্যাচে বরোদার দশটা উইকেট নিলেন তো একা দিন্দাই। যোগ্য সহায়তা করলেন সৌরভ সরকারও। চার উইকেট তুলে। গত দিনের স্কোরের সঙ্গে ৩৬ জুড়তে না জুড়তেই বরোদা খতম! বাংলার সামনে মাত্র ৩৪ রানের লক্ষ্য রেখে।
ছ’পয়েন্ট হারানোর পর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি বাংলা অধিনায়ক। বরোদা থেকে মুম্বইয়ের ফ্লাইট ধরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আপাতত অস্ট্রেলিয়ার পথে। অশোক দিন্দার দুরন্ত বোলিংয়ে তিনি মুগ্ধ। অতীতে ভারতের হয়ে বিপক্ষের তাবড়-তাবড় পেসার সামলানো সৌরভ শনিবার দিন্দার বোলিং দেখে এতই উৎসাহিত হয়ে পড়েন যে বাংলা পেসারকে বলে ফেলেন, “তোর সঙ্গে দেখা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়।” দিন্দা নিজে বলছেন “আমার কাজ পারফরম্যান্স করা। সেটা করে যাচ্ছি। ডাক পেলেই অস্ট্রেলিয়া চলে যাব।” টেস্ট সিরিজে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই দিন্দার। যদিও সৌরভ মনে করেন, এই মুহূর্তে দেশের সেরা পেসার দিন্দাই। অস্ট্রেলিয়ায় ডাক পাওয়া দিন্দার প্রাপ্য।
ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে চুপচাপ বসেছিলেন সৌরভ। আফশোস করেছেন ছ’পয়েন্ট হারানোর জন্য। মোতিবাগ ছাড়ার পরেও সতীর্থদের ফোন করে জিজ্ঞেস করেছেন, টিমের মনমেজাজ একটু ভাল হয়েছে কি না? যা দাঁড়াচ্ছে, মরসুমের শেষে সাফল্যের চিত্রনাট্যের পাশাপাশি যন্ত্রণার কাঁটাও থাকল বাংলা অধিনায়কের জন্য।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বরোদা ২৮৪ ও ১৩৯ (দিন্দা ৫-৬৬, সৌরভ সরকার ৪-৩২)। বাংলা ৩৯০ ও ৩৪-১ (অরিন্দম ৯)। |