অসি যুদ্ধ
‘মাঙ্কিগেট’ রহস্যভেদ ব্রেট লি-র আত্মজীবনীতে
স্ট্রেলিয়া সফরে নির্বাচিত না হওয়ার হতাশার মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার মাঠ থেকে চার বছর পুরনো নৈতিক জয় পেতে চলেছেন হরভজন সিংহ! যাঁদের বিরুদ্ধে তাঁকে সে বার মাঠে এবং মাঠের বাইরে প্রাণান্তকর লড়তে হয়েছিল, তাঁদেরই একজন জানিয়ে দিলেন, সে বার প্ররোচনা হরভজন সিংহের থেকে শুরু হয়নি। বরঞ্চ অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ব্যাপারটার ভুল ব্যাখ্যা করেছিলেন।
সেই সময় এবং পরবর্তী কালেও সিডনি টেস্টের বিতর্কিত সিকোয়েন্সগুলো পরপর ঠিক এই ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
হরভজনকে আগুনে ওভার করছিলেন ব্রেট লি। তাতে চটে যান ভাজ্জি। নন স্ট্রাইকার প্রান্তে এসে ব্রেট লি-র পশ্চাদ্দেশে থাবড়া মারেন।
সেই দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ... “তোর এত বড় সাহস আমাদের প্লেয়ারের গায়ে হাত তুললি।” গালাগাল দিতে থাকেন।
প্রতিবাদে হরভজন, “তোর বুদ্ধি তেমনই। মাঙ্কি কোথাকার...”
এর পর হেডেন-গিলক্রিস্ট-পন্টিং-সাইমন্ডস-সহ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের ঝাঁকটার হরভজনকে ঘিরে ফেলা। ও দিক থেকে সচিনের এগিয়ে আসা।
অথচ ব্রেট লি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী ‘মাই লাইফ’ বইতে ঘটনার সম্পূর্ণ অন্য রকম বর্ণনা দিয়েছেন। বলেছেন, ভাজ্জি তাঁকে মারা দূরে থাক, হালকা চাপড় মেরে প্রশংসাই করেছিলেন। ক্রিকেট সার্কিটে এখনও বইয়ের অংশ-টংশ নিয়ে নাড়াচাড়া পড়েনি। যেহেতু ব্রেট অস্ট্রেলিয়ান টিমের বাইরে। কিন্তু প্রকাশ্যে এলে সাইমন্ডস এবং সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়ান টিম তীব্র অস্বস্তিতে পড়বে। কারণ, বোঝা যাচ্ছে রজ্জুতে সর্পভ্রম করে তাঁরাই ‘মাঙ্কিগেট’ বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছিল!

অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস।
ব্রেট লি লিখছেন, ‘নতুন স্পেলটার তখন দ্বিতীয় ওভারে ছিলাম আমি। চাইছিলাম, হরভজনকে কড়কাতে। সাইমন্ডস আমাকে ক্রমাগত তাতিয়ে যাচ্ছিল, ‘বিঙ্গস আয়। এই উইকেটটা নে।’ ততক্ষণে টেনশন তৈরি হয়ে গিয়েছে ম্যাচের কিছু আম্পায়ারিং ভুলভাল নিয়ে। বুঝতেই পারছিলাম, দুটো দলের মধ্যে স্টিফনেস তৈরি হচ্ছে। এ সময় আমার ফোর্থ বলটা ছিল ইনসুইং ইয়র্কার। ভাজ্জি কোনও রকমে ওটাকে মিড উইকেটে ঠেকিয়ে সিঙ্গলস নিল। ও যখন পিচে আমার পাশ দিয়ে ছুটছে ওকে বলি, প্রায় নিয়ে নিয়েছিলাম রে তোকে। হরভজন রানটা সম্পূর্ণ করে আমার পিছনে একটা টোকা দিয়ে বলল, ‘ওয়েল বোল্ড,’ বেচারি খুব আন্তরিক ভাবে বলেছিল। ব্যঙ্গ করেনি। প্রতিহিংসাপরায়ণ মেজাজেও বলেনি। এমনিতে হরভজনের সঙ্গে যে আমার বিশেষ বন্ধুত্ব আছে এমন নয়। কিন্তু হোটেল-টোটেল বা এ দিক-ও দিক সামনে পড়ে গেলে আড্ডা মারার মতো বন্ধুত্ব তো আছেই। সাইমন্ডসের হল কী, ও দূর থেকে ভেবে বসল ভাজ্জি কিছু একটা কায়দা-কানুন করছে। ও উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে এল। পাশ থেকে ভাজ্জিকে লক্ষ করে কী সব বলল। আমি বোলিং মার্কে তখন ফিরছিলাম। সিমো ঠিক কী বলেছিল আজও জানি না। কিন্তু এর পরের ওভার থেকেই শুরু হয়ে গেল ঝামেলা। তবে আমি খুব খুশি যে এর ভিতরে আমি আর জড়িয়ে যাইনি। কে কাকে কী বলেছিল শুনিওনি।’
২০০৭-এর সেই সিরিজের পর ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া আরও হয়েছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাঠে আর হয়নি বলেই এ বারের সাক্ষাতে বারবার সেই প্রসঙ্গ উঠছে। যাকে কেউ বলছে ‘মাঙ্কিগেট’। কেউ আখ্যা দিয়েছে ‘বলিলাইন’। ব্রেট লি মুখ খোলায় এর তীব্রতা আরও বাড়বে। অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেল এমনিতেও এর ওপর বিশেষ ফিল্ম বানাচ্ছে। কেবল নাটকের মুখ্য চরিত্ররা এই চার বছরে এমন ছিটকে গিয়েছেন যে, তাঁদের একসঙ্গে জোগাড় করাটাই প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া জোগাড় করলেই তো হবে না। দৃষ্টিভঙ্গি এক-একজনের সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে মাঝের সময়ে। এক-একজনের দায়বদ্ধতার আঙ্গিকও। টিম নয়, তা এখন নিতান্তই ব্যক্তিগত।
আগের সফরের সেই ছবি। ক্রিকেট ইতিহাসে যা থেকে গিয়েছে ‘মাঙ্কিগেট’ অধ্যায় হিসাবে।
হরভজন সিংহ: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে এখন তিনি আর সাইমন্ডস একই টিমে খেলেন। মালিকেরা কতটা কী তাঁকে বিরুদ্ধে বলতে দেবেন দেখার।
অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস: আপাতত ‘বিগ বস’ শো-তেই শুধু যোগ দেননি। ভারত থেকে আরও রোজগার করেন। আইপিএলের চুক্তি রয়েছে। নৌকো কি উল্টোতে চাইবেন?
রিকি পন্টিং: সেই সময়ে সসাগরা পৃথিবী জয়কারী অধিনায়ক। এখন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ট্র্যাজিক চরিত্র। বহু খুঁজে গতকাল তাঁর অনূর্ধ্ব সতেরো পর্যায়ের কোচ শিফার্ডকে টেনে এনেছিলেন। বাদ পড়ার খাদ সামনে। যদি শিফার্ড ঠিক করে দিতে পারেন তাঁর খুঁতগুলো। ছোট বেলায় যেমন করতেন। পন্টিংয়ের বয়েই গেছে এখন পুরনো বিতর্ককে মাথা চাড়া দেওয়াতে। আপনি বাঁচলে বাপের নাম!
মাইকেল ক্লার্ক: সেই সময়কার সহ-অধিনায়ক। সিডনি টেস্টের শেষ দিন তাঁকে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। সৌরভের বিতর্কিত ক্যাচ তিনিই মাটি থেকে তুলে আবেদন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই ক্লার্ক সম্পূর্ণ অন্য মেজাজে। বরঞ্চ অস্ট্রেলিয়া টিমের কেউ উত্তেজক মেজাজ দেখালে স্ব-আরোপিত শাস্তির কথা তুলছেন। একশো ডিগ্রি টার্ন তাঁর পুরনো অবস্থান থেকে।
কী দাঁড়াল? সময় বদলায়। পরিপ্রেক্ষিত বদলায়। মানুষ বদলায়। আগে যা করেনি তার ভুল স্বীকার করে। হরভজন নৈতিক মামলা জিতে উঠে একটাই প্রশ্ন করতে পারেন ব্রেটকে। তোর চার বছর লাগল সত্যি কথাটা বলতে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.