মুক্তি পেয়ে মন্তব্য বাঙালি বিজ্ঞানীর
চোখ উপড়ে ফেলা
ওদের প্রিয় আমোদ
ড়া ঘুমের ওষুধের প্রভাব সদ্য কেটেছে। কিন্তু আতঙ্কের স্মৃতি এখনও টাটকা। বাড়ি ফিরে ‘নতুন জীবন’ উপভোগের মধ্যে কখনও কখনও যা কামড় বসাচ্ছে।
ইয়েমেনে অপহরণকারীদের থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী সুকুমার রায়চৌধুরী। তেল উত্তোলন সংক্রান্ত কাজে সে দেশে গিয়ে রাজধানী সানা থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে দস্যুদের হাতে অপহৃত হয়ে প্রায় দশ দিন বন্দি ছিলেন তিনি। আজ ফরিদাবাদে বাড়িতে জানান, অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল আল কায়দা। দলের নেতা, সানার অপহরণকারী হুসেন যদি সুকুমারবাবুদের জীবনের বিনিময়ে মুক্তিপণ না পেত, তা হলে আল কায়দার বন্দুকের সামনে দাঁড়াতে হত মুর্শিদাবাদের কৃতী সন্তানকে।
“না, প্রথমেই বন্দুকের সামনে নয়”, ভুল সংশোধন করছেন সুকুমারবাবু। দশ দিন দস্যুদের সঙ্গে ‘ঘর করে’ তাঁর পশ্চিম এশিয়ার সন্ত্রাস-নেটওয়ার্ক সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হয়েছে। তাঁর কথায়, “আল কায়দার হাতে যদি আমাদের চালান করত, তা হলে সেখানে প্রথমেই মারত না। নির্যাতন করত। চোখ উপড়ে নেওয়াটা তো ওদের প্রিয় আমোদ। তা ছাড়া আমি ভারতীয় এটা জানার পর যে কী করত, তা ভাবতেও এখন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।” ইয়েমেন সরকার এবং নিউ ভিশন গ্রুপ (যে বেসরকারি তৈল সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে সানা যান সুকুমারবাবু) এই দুইয়ের উপরে মুক্তিপণের জন্য চাপ তৈরি করে রেখেছিল হুসেন ও তার গোষ্ঠী।
সুকুমার রায়চৌধুরী নিজস্ব চিত্র
কিন্তু প্রতিদিনই দোভাষীর মাধ্যমে সুকুমারবাবুকে শুনতে হত যে আল কায়দার দিক থেকেও ‘চাহিদা’ রয়েছে। অর্থাৎ, যদি ওই সংস্থা মুক্তিপণ না দেয় তা হলে তাদের সরাসরি চালান করে দেওয়া হবে আল কায়দার কাছে। কেন না, ৪ জন বিদেশির জন্য আল কায়দার দর নাকি ১০ কোটি ডলার! আর আল কায়দা শিবিরের কী কী হয় তারও ধারাবিবরণী গল্পের ছলে শোনানো হত বন্দিদের! যে তালিকায়, চোখ ওপড়ানো থেকে জিভ কেটে ফেলাসবই জলভাত! মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষির সময় তাই প্রবল মানসিক অশান্তির মধ্যে থাকতে হয়েছে সুকুমারবাবুকে। যখনই তাদের বাইরে ডাকা হয়েছে কোনও কারণে, বুকটা ছ্যাৎ করে উঠেছে। সে দেশের সরকারের উপর মানুষের প্রবল ক্ষোভ (হুসেনের অভিযোগ, তার মতো অনেকেরই জমি বাড়ি কেড়ে নিয়েছে ইয়েমেন সরকার, গণতন্ত্রের নামে চলছে নৈরাজ্য) কিছু অর্থের টোপ দিয়ে আল কায়দা স্বর্গরাজ্য গড়েছে ইয়েমেনে। হুসেনের মতো একাধিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে তারা পরোক্ষভাবে কাজে লাগায় সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর কাজে। বিশেষ করে অপহরণের ব্যাপারে তারা নির্ভর করে এই সব অপরাধ সংগঠনগুলির উপরে। বিনিময়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রের জোগানও থাকে অব্যাহত। তবে বন্দি রাখলেও কোন অত্যাচার হয়নি সুকুমারবাবুদের উপর। বরঞ্চ, “যখনই চা চেয়েছি পাওয়া গিয়েছে।” ইয়েমেনি সংস্থা মুক্তিপণ দিতে রাজি হওয়ায়, আল কায়দার দুঃস্বপ্নও শেষ পর্যন্ত কেটে গিয়েছে। বিনিময়ে পাওয়া গিয়েছে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। “অপহরণকারীরা দুঃসাহসী হলেও, অন্য দিকে অলসও”, জানাচ্ছেন তিনি। বন্ধ ঘরের জানলা দিয়ে সুকুমারবাবু দেখতেন, দুপুরের খাওয়ার পর সবাই চাদর পেতে মাটিতে বসে ‘কাচ্চা’ নামের এক পাতা চিবোচ্ছে। ওই পাতার মধ্যে মাদক রয়েছে । “ব্যাপারটা অনেকটা মজলিসের মত”, বলছেন সুকুমারবাবু। কিছু দিনের বিশ্রামের পর ফের কর্মসূত্রে ইয়েমেন যেতে হবে সুকুমারবাবুকে! তবে এ বার আর সানা থেকে কোনও প্রত্যন্ত সাইট দেখতে যাওয়ার বাসনা নেই তাঁর। লাদেন নেই তো কি হয়েছে? তার তৈরি আল কায়দার নির্বিচারে রাজত্ব করছে। ইয়েমেনের প্রত্যন্ত মরুভূমি আর টিলায় নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার শাখা প্রশাখা।
দ্বিতীয়বার যার সামনে পড়ার ইচ্ছা নেই সুকুমার রায়চৌধুরীর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.