ফায়দা তুলতে মরিয়া কংগ্রেস
দুর্নীতি নয়, লোকপাল এখন সংরক্ষণ-জটে
লালু-মুলায়ম-মমতার দাবি মেনে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পরে এ বার লোকপাল বিল পাশ করাতে মরিয়া কংগ্রেস। বিজেপি কিন্তু লোকপালে সংরক্ষণের সাংবিধানিক এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। ‘শেষ বিচারের ভার বিচারবিভাগের’, এই বলে বিষয়টি নিয়ে পাশ কাটাচ্ছে কংগ্রেস। সব মিলিয়ে পিছনে চলে গিয়েছে দুর্নীতির প্রশ্ন। এই ভোটের মরসুমে লোকপাল এখন সংখ্যালঘু-রাজনীতির তাস।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় আসে লোকপাল বিল। তার আগে মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিলটি চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসেছিল। মঙ্গল থেকে বৃহস্পতি, এই ৭২ ঘণ্টায় একাধিক নাটকীয় মোড় নেয় লোকপাল। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে বিলের যে খসড়া অনুমোদিত হয়, তাতে সংখ্যালঘু-তফসিলি জাতি ও উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের কথা ছিল। বুধবার সেই বিলই ছাপাখানায় যায়। ইতিমধ্যে প্রণব মুখোপাধ্যায়-সলমন খুরশিদের মতো নেতারা একটি অন্য বিষয় চিন্তা করেন। তাঁরা আলোচনা করেন, লোকপালের সংরক্ষণের বিষয়টি সাংবিধানিক নয়। কারণ, সংবিধানে সরাসরি বর্ণ-ধর্ম-জাতভিত্তিক কোনও সংরক্ষণের অনুমোদন নেই।
১৯০৯ সালের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে আইনসভায় সম্প্রদায়ভিত্তিক আসন সংরক্ষণ এবং সম্প্রদায়গত ভোটের যে সংস্থান রাখা হয়, স্বাধীনতার পরে ভারতের সংবিধান তা সম্পূর্ণ বাতিল করেছিল। পরে সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল যখন আনা হয়েছিল, সেটা সংবিধান সংশোধন করেই আনা হয়েছিল। কিন্তু লোকপাল কোনও সংবিধান সংশোধনী বিল নয়। সুতরাং সেখানে সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে সাংবিধানিক প্রশ্ন উঠলে তা বিচারবিভাগের অনুমোদন পাবে না।
মনে রাখা যেতে পারে, এ দেশে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও যে সংরক্ষণ চালু আছে, সেটা সামগ্রিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণ। সংখ্যালঘু-তফসিলি জাতি ও উপজাতি এবং অন্য অনগ্রসর শ্রেণিরা তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা সংরক্ষণের আওতায় আসেন অনগ্রসরতার কারণে, সরাসরি ধর্ম বা জাতির পরিচয়ে নয়। সুতরাং বিশদ আলোচনার পরে কংগ্রেস নেতৃত্ব লোকপাল থেকে সংরক্ষণের বিষয়টি বাদ দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন। ছাপাখানা থেকে বিল ফেরত আনিয়ে আবার নতুন খসড়া ছাপতে পাঠানো হয়। বুধবার রাতে প্রণব-সলমনের সঙ্গে বৈঠক করেন আডবাণীরা। তখন সংরক্ষণের বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই অনুক্ত থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার লোকসভায় একদম শুরু থেকেই লালু-মুলায়মরা সংরক্ষণের দাবিতে গলা ফাটাতে থাকেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয় তৃণমূলের তরফে সংরক্ষণে সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি। ঠিক তখনই রণকৌশল পাল্টে ফেলে কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সংসদে লোকপাল বিলটি আনুষ্ঠানিক ভাবে পেশ করার সময় সংরক্ষণ সংক্রান্ত বাদ পড়া অংশটা বিলের সঙ্গে ‘ভ্রম সংশোধনী’ হিসেবে জুড়ে দেওয়া হয়। এটা জেনেই যে, সংবিধান সংশোধন না করে লোকপাল বিলে সংখ্যালঘুর কোটা ঢোকানো অসম্ভব। তবু ঠিক হয়, বিজেপিকে বাদ দিয়ে অন্য সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দলকে সঙ্গে নিয়ে লোকপাল বিল পাশ করানোর চেষ্টা করবে কংগ্রেস। বিজেপি তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই পাল্টা প্রচার করা হবে, ‘বিজেপি সংখ্যালঘু-বিরোধী। অণ্ণা হলেন বিজেপি এবং আরএসএস-এর ‘বি টিম’।’ এতে কংগ্রেসের লাভ বই ক্ষতি নেই। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে এমনিতেই সংখ্যালঘু তাস খেলতে চাইছে কংগ্রেস। চাকরি ক্ষেত্রে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে মুসলিমদের জন্যও সংরক্ষণ রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম এবং অজিত সিংহও মুসলিম ভোট টানার দিকে ঝুঁকছেন। এমতাবস্থায় সংরক্ষণের প্রশ্নে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করাই হবে কংগ্রেসের পক্ষে সুবিধাজনক। আবার এই সংরক্ষণের প্রশ্নেই বিজেপিকে একঘরে করে দেওয়াও সহজ হবে। যদি বিজেপি কোনও ভাবে লোকপাল বিল আটকেও দেয়, সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস বলবে, বিল পাশ করানোর জন্যই ঐকান্তিক চেষ্টা চালানো হয়েছিল। বিজেপিই তা হতে দেয়নি। বস্তুত লালু-মুলায়ম এবং মমতা যে ভাবে সংখ্যালঘুর বিষয়টি সংসদে শেষ মুহূর্তে নিয়ে এসেছেন, তাতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে মনে একেবারেই অখুশি নন।
সুতরাং এক দিকে সুষমা স্বরাজ যখন লোকপালকে ‘বেআইনি বিল’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন, প্রণববাবু শুধু বলছেন, “আইনি কি বেআইনি, সেটা ঠিক করবে বিচারবিভাগ।” কারণ লোকপাল বিল যদি বিচারাধীন হয়ে যায়, তা হলে কংগ্রেসেরই স্বস্তি। সে ক্ষেত্রে বিলটা আটকেও গেল, অথচ তার দায় কংগ্রেসকে নিতে হল না। বিজেপি-র কাছে এখন চ্যালেঞ্জ হল, কংগ্রেসের এই দু’মুখো চালকে ভোঁতা করে দেওয়া। বিলের সাংবিধানিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তারা দেখাতে চাইবে, কংগ্রেস মোটেই বিলটি পাশ করাতে সত্যি করে আগ্রহী নয়। সেই লক্ষ্যেই আডবাণী আজ বলেছেন, “প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং সলমন খুরশিদের উপস্থিতিতে লোকপাল বিলের যে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল, সেখানে সংরক্ষণের বিষয়টা ছিল না। আমি নিজে প্রণববাবু এবং সলমনকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলাম। কিন্তু সংখ্যালঘুদের বিষয়টি শেষ মুহূর্তে বিলের মধ্যে সংশোধনী এনে ঢোকানো হয়েছে। এটা আমরা মানতে পারি না। সরকার যদি লোকপাল বিল পাশ করতে সত্যিই আগ্রহী হত, তা হলে আমার সঙ্গে বৈঠকে প্রণব-সলমন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই খসড়াই সংসদে পেশ করতেন।”
মঙ্গলবার, ২৭ তারিখ শুধুমাত্র লোকপাল বিলের জন্য লোকসভার অধিবেশন আবার বসছে। ২৭শে মুম্বইয়ে অণ্ণা হজারেও অনশন শুরু করতে চলেছেন।
অণ্ণার সঙ্গে আরএসএস-এর শীর্ষ নেতৃত্ব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলছেন। অণ্ণার সঙ্গে পরামর্শ করে আরএসএসও চাইছে, যাতে লোকপাল বিল কোনও ভাবেই লোকসভায় অনুমোদিত না হয়। আডবাণী সোমবার অর্থাৎ লোকসভায় অধিবেশনের ঠিক এক দিন আগে নাগপুর যাচ্ছেন এবং সেখানে সঙ্ঘের সদর দফতরে গিয়ে তিনিও আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানেই ঠিক হবে, সংখ্যালঘুদের বিষয়টি নিয়ে কী ভাবে সংসদ উত্তাল করা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.