ফেব্রুয়ারিতে সাত দফা
উত্তরপ্রদেশের ভোটে দিল্লিরই অগ্নিপরীক্ষা
ভারতের বৃহত্তম রাজ্যে তাদের লড়াই তিন ও চার নম্বর জায়গার জন্য। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোট অনেকটাই ঠিক করে দেবে দিল্লির মসনদে দেশের প্রথম দুই দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
কংগ্রেস এবং বিজেপি-র পক্ষে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ এই ভোট ফেব্রুয়ারি মাসে সাত দফায় হবে বলে আজ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। এর আগে আর কোনও রাজ্যে এত দফায় ভোট হয়নি। গত এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়েছিল ছ’দফায়। উত্তরপ্রদেশের সঙ্গেই ভোট হবে পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর ও গোয়ায়। তবে এই চার রাজ্যেই নির্বাচন এক পর্বের। সব রাজ্যের ভোট গণনা হবে ৪ মার্চ।
ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী দু’মাস উত্তরপ্রদেশই যে রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বস্তুত, এর আগে আর কোনও রাজ্যের নির্বাচন কেন্দ্রীয় সরকার এবং তার নিয়ন্ত্রক দলের উপরে এত গভীর প্রভাব ফেলেনি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মনমোহন সিংহের সরকার আর সনিয়া গাঁধীর দল দু’য়ের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে উত্তরপ্রদেশের ফলের উপরে।
ফলে যুযুধান দলগুলির চাপানউতোরে এখন থেকেই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজ্যের বাতাবরণ। দফায় দফায় সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী এবং প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টিকে বিঁধেছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশকেই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন রাহুল। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর উত্থানের রেখাচিত্র কেমন হবে, তা অনেকটাই ঠিক করে দেবে উত্তরপ্রদেশের ফল। কংগ্রেস যদি উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-কে পিছনে ফেলে তিন নম্বর জায়গাটা দখল করে নিতে পারে এবং সরকার গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে, তা হলে সেটাই হবে রাহুলের বিপুল জয়।
অন্য চার
মণিপুর পঞ্জাব
আসন ৬০
ভোট ২৮ জানুয়ারি
আসন ১১৭
ভোট ৩০ জানুয়ারি

উত্তরাখণ্ড গোয়া
আসন ৭০
ভোট ৩০ জানুয়ারি
আসন ৪০
ভোট ৩ মার্চ
উত্তরপ্রদেশকে যে রাহুল পাখির চোখ করেছেন, সেটা গত কয়েক মাসে তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকেই স্পষ্ট। আজও সে রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সনিয়া-তনয় বলেছেন, “আপনারা বিজেপি, মুলায়ম এবং মায়াবতীকে বারবার নির্বাচিত করেছেন, কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছেন? গত ২২ বছর ধরে এই দলগুলি ধর্ম আর জাতপাতের কথা বলেছে। কিন্তু উন্নয়ন এবং গরিবদের কথা ভাবেনি।”
অন্য দিকে, কংগ্রেসকে চার নম্বরে রেখে তিন নম্বর জায়গাটা দখল করতে মরিয়া বিজেপি-ও। কারণ, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের থেকে পিছিয়ে গেলে কমনওয়েল্থ গেমস থেকে টু-জি দুর্নীতি প্রশ্নে কেন্দ্রের শাসক দলকে কার্যত কোণঠাসা করে ফেলাটা মাঠে মারা যাবে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে এক পা এগিয়েও দু’পা পিছিয়ে আসতে হবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর দলকে। তেমনটা যাতে না হয়, সে জন্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহকে সেনাপতি করে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। কিন্তু জাতপাতের জটিল অঙ্কে দীর্ণ রাজ্যে ঠাকুর রাজনাথ কতটা সফল হবেন, সেই প্রশ্ন থাকছে।
দিল্লির রাজনীতিকে সরিয়ে রাখলে লখনউয়ের মূল লড়াই মায়াবতীর সঙ্গে মুলায়মের। এমনকী, নিবাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা ঘিরেও যে লড়াই অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি উড়িয়ে (বিধানসভার মেয়াদ ২০ মে পর্যন্ত থাকায় মায়াবতী চেয়েছিলেন ভোট হোক এপ্রিল-মে নাগাদ) নির্বাচন কমিশন আজ বছরের গোড়াতেই ভোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দৃশ্যতই খুশি সমাজবাদী পার্টি। নজিরবিহীন ভাবে সাত দফা ভোটও এ বার তাদের প্রচারের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। দলীয় নেতাদের মতে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা শোচনীয়, সেটা এই সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট। ভোট এগোনোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস এবং বিজপি-ও।
কেন মায়াবতীর রাজ্যে নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসা হল, এই প্রশ্নের জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি বলেন, “সাধারণত এক থেকে দু’মাসের ব্যবধানে একাধিক রাজ্যে নির্বাচন থাকলে কমিশন একসঙ্গে সব রাজ্যে ভোট করে থাকে। এই ঘটনা আগেও হয়েছে। এতে এক রাজ্য থেকে আধা-সামরিক বাহিনী তুলে অন্য রাজ্যে নিয়োগে সুবিধা হয়।” গোয়াতে সরকার গড়ার জন্য জুন পর্যন্ত সময় ছিল কমিশনের হাতে। কিন্তু মার্চ-এপ্রিলে একাধিক রাজ্যে রাজ্যসভার ভোট ছাড়াও বছরের মাঝে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন রয়েছে। তাই কমিশন একসঙ্গে ৫ রাজ্যে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ কমিশন জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রস্তুতি সপ্তাহ দুয়েক আগেই সেরে ফেলা হয়েছিল। নির্বাচনে কী পরিমাণ আধা-সামরিক বাহিনী পাওয়া যেতে পারে তা চূড়ান্ত করতে গত কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কুরেশি। আজ তিনি বলেন, “আবহাওয়া, পরীক্ষা, উৎসবের মতো বিষয়গুলি ছাড়াও আধা-সামরিক বাহিনী কবে পাওয়া যাবে তার উপরে ভোটের দিন ক্ষণ নির্ভর করে।” গত কালের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে চাহিদা মতো আধা-সামরিক বাহিনী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই আজ নির্বাচনের দিন ক্ষণ জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
আজকের ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর থেকে ওই পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কমিশন দিয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির দাবি, মায়া ঘনিষ্ঠ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের আগে সরাতে হবে। রাজ্যের ক্যাবিনেট সচিব, স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে সরানোর দাবি জানান সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র। অন্য দিকে বিজেপি-র দাবি, চলতি মাসে মায়াবতী সরকার যে সব সরকারি অফিসারকে বদলি করেছে, তা সব রদ করতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.