এই খবর পৌঁছেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার বিষয়টি জানতে পেরেই উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম স্বাভাবিক করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে নির্দেশ দেন। গৌতমবাবু বিষয়টি নিয়ে কর্মচারী সমিতি ও উপাচার্যের সঙ্গে কথা বললেও জট কাটেনি। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনে থাকা কলেজগুলির হাজার-হাজার ছাত্রছাত্রী অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীও চেষ্টা করছেন। আমরা আশাবাদী শীঘ্রই জট কেটে যাবে।”
কিন্তু বর্তমান উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্মচারী সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বুট বলেন, “উপাচার্য শিক্ষাকর্মীদের ব্যাপারে কর্মসমিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করেননি। তা ছাড়া, মামলা চালানোর নামে যথেচ্ছ টাকা খরচের অভিযোগও রয়েছে। আমরা ওঁর অপসারণ চাই। সে জন্য কর্মবিরতি হবেই।’’ পাশাপাশি, ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সব বিভাগে (জরুরি পরিষেবা বাদে) থাকা সমিতির সদস্য-সদস্যারা প্রশাসনিক ভবনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন বলে দেবীপ্রসাদবাবু জানিয়েছেন।
সমিতির আন্দোলনের সমালোচনা শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ জানান, ফি মাসে শুধু অশিক্ষক কর্মচারীদের মাইনে বাবদ রাজ্য সরকারের ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। প্রায় দেড় মাস ধরে সমিতির আন্দোলনের জেরে কার্যত অনেকেই কাজ না করেই মাইনে তুলছেন। শুধু তাই নয়, উপার্চাযকে সরানো হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে দেড় কোটি টাকা নয়ছয়ের মামলা হয়েছিল, তা ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ছাত্র পরিষদের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মুখপাত্র রোনাল্ড দে বলেন, “আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করা হয়েছে। ক্লাস, রেজিস্ট্রেশন, মাইগ্রেশনের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। অথচ কর্মীরা লক্ষ লক্ষ টাকা মাইনে নিচ্ছেন। এটা নীতিগত ভাবে কতটা ঠিক হচ্ছে! এটা দুর্নীতি নয়? রাজ্য সরকার কী করছে! এবার তো আমাদের প্রতিরোধে নামতে হবে।” এ ব্যাপারে কর্মচারী সমিতির নেতা অপূর্ব পাল দাবি করেন, তাঁরা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কয়েকজন অবস্থান-বিক্ষোভে অংশ নিলেও বাকিরা বিভাগীয় কাজ করছেন। |
কী সমস্যা |
• মাসখানেকেও অডিট শেষ হয়নি সিএজি টিমের।
• নির্ধারিত সময়ে রাজ্যকে পাঠানো
যায়নি বাজেট প্রস্তাব।
• নানা কলেজে পাঠানো যাচ্ছে
না পরীক্ষার প্রশ্ন, কাগজ।
• আজ কর্মবিরতির ডাক।
স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা বন্ধের আশঙ্কা। |
• ইউজিসি-র টাকা পড়ে, তৈরি
নেই ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট।
• স্নাতকোত্তর ক্লাস অনিয়মিত।
• দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ ক্যাশ কাউন্টার।
• রিসিভিং বন্ধ, জমা পড়ছে
না পিএইচডি-র থিসিস। |
আলোচনা উত্তরে |
উপাচার্যকে অপসারণের দাবি কর্মচারী সমিতির আন্দোলনের জেরে অচল হয়ে পড়েছে
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় দেড় মাস ধরে অচলাবস্থা চললেও রাজ্য উচ্চ শিক্ষা
দফতর কেন হাল ফেরাতে পারেনি? এই প্রশ্নে কে কী বলছেন? |
দেবীপ্রসাদ বুট, সাধারণ সম্পাদক,
উঃবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারি সমিতি |
জ্যোতিষ বসাক, প্রাক্তন সম্পাদক,
উঃ বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি |
আজ কর্মবিরতি। তবে পরীক্ষায় ছাড়
দেওয়া হবে। কিন্তু উপাচার্যকে অপসারণের
দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চলবে। |
লেখাপড়া বন্ধের প্রচেষ্টা সমর্থন করতে
পারব না। শীঘ্রই পরীক্ষা শুরু হবে। ওই
আন্দোলনের আড়ালে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। |
আনন্দগোপাল ঘোষ, প্রাক্তন প্রধান,
ইতিহাস বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যলয় |
পঙ্কজ দেবনাথ অধ্যক্ষ,
কোচবিহার কলেজ |
সরকার তো বিষয়টি দেখছে। তা সত্ত্বেও অচলাবস্থা
তৈরি করা হচ্ছে কেন? সরকার কি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভেতরে দুর্নীতি ধরার জন্য কর্মীদের দায়িত্ব দিয়েছেন?
তাঁরা নিজেদের কাজ করুন। সরকার সরকারের
কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কি চলছে?
সাধারণ মানুষও চুপ করে রয়েছেন।
খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। |
উপাচার্যের অফিস বন্ধ থাকায় বিএ তৃতীয়
বর্ষের ১৭ পরীক্ষার্থী বিপাকে। রেজাল্ট নিয়ে
জটিলতার নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করলেও উত্তর
আসেনি। বিবিএ-র পরীক্ষা নিয়ে একটি সমস্যা
সমাধানের জন্যও উপাচার্যের কাছে নথি
পাঠানো হয়েছে। সেটিও কিছু হয়নি। |
শিখা রুদ্র, অধ্যাপিকা, কোচবিহার কলেজ |
উমেশ শর্মা, ইতিহাসবিদ |
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বহু দিন
ধরেই খারাপ। ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই
কলেজগুলির নানা কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সমস্যা দ্রুত মেটানো প্রয়োজন। |
শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতি কোথায় পৌঁছেছে তার দৃষ্টান্ত এটা।
উপাচার্যকে অফিসে ঢুকতে না দেওয়ার কোনও যুক্তি খুঁজে
পাচ্ছি না। প্রয়োজনে মামলা করা যেতে পারে। অন্য
গণতান্ত্রিক আন্দোলনও করা যায়। সে সব না করে
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশকে হত্যা করা কেন? |
|