উনিশশো বারো-র-এর ১৬ এপ্রিল। বিদ্যালয় পরিদর্শক হয়ে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল ঘুরে গেলেন। মন্তব্যে জানালেন, শিক্ষা, পরিচালন ব্যবস্থা এবং সার্বিক পরিবেশ-এর দিক দিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যান্য বিদ্যালয় থেকে উন্নত এবং অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম মাথাভাঙা
|
ছবি: অনিতা দত্ত |
হাই ইংলিশ স্কুল। কোচবিহার তথা মহকুমা শহর মাথাভাঙার আলোকপ্রাপ্তির ইতিহাসের এক অনন্য স্মারক। মাথাভাঙা তো বটেই, তৎকালীন সময়ে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে তার গৌরবের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূরবর্তী জনপদেও। যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৬৪ সালে। মধ্য ভার্নাকুলার স্কুল হিসেবে। ১৮৮৪-তে সাব-ডিভিশনাল স্কুলে পরিণত হয়। হাই ইংলিশ স্কুলের মর্যাদা পায় ১৮৯০ সালে। শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনটি তৈরি হয় ১৮৯৩ সালে, রাজ-সরকারের পূর্ত বিভাগের অধীনে। রাজানুদান তো ছিলই, এ ছাড়া বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নতিসাধনে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ। এঁদের মধ্যে ছিলেন কেদারনাথ মুখোপাধ্যায়, সীতানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আশুতোষ ঘোষ, নির্মল মুস্তাফি প্রমুখরা। ১৮৮৭ সালে ২০০ টাকা অর্থসাহায্য এসেছিল আমিরুল্লা পাটোয়ারি নামে জনৈক জোতদারের কাছ থেকে। হাই-ইংলিশ স্তরে উন্নীত হওয়ার দরুণ নিয়মানুযায়ী ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে রাজসরকারকে। অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নায়েব আহিলকার সীতানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্রছাত্রীদের পানীয় জলের জন্য ১৯০৭-এ কূপ খননের ব্যয়ভার বহন করলেন শেখ পাগলা পাইকার। মুসলিম ছাত্রদের পঠনপাঠনে উৎসাহিত করার জন্য এগিয়ে এলেন আর এক স্থানীয় জোতদার। ১৯১০ সালে এই কাজে তিনি দিয়েছিলেন ২,০০০ টাকা। ১৮৮৮-তে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে হল ১৫১ জন। সে বছরই রাজসাহি বিভাগের বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সাতজন ছাত্রের মধ্যে কোচবিহার জেলায় প্রথম ও রাজসাহি বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন ভুবনবিহারী দাশগুপ্ত। শতাব্দী-প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সারস্বত সাধনার ধারা আজও বহমান।
|
উত্তম চক্রবর্তী, গৌতম সাহা, সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, জীবনকৃষ্ণ রায় এঁদের প্রত্যেকেরই একটি বিষয়ে মিল আছে। এঁরা পাখি-প্রেমিক। আলিপুরদুয়ার বার্ডস ক্লাবের সদস্য। সংস্থার বয়স তিন বছর হলে কী হবে, ইতিমধ্যে সদস্য সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে কুড়ির ওপর। পাখি চেনার ব্যাপারে এঁদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। প্রত্যেক সদস্যই দুশো থেকে আড়াইশো প্রজাতির পাখি চট করে চিনে নিতে পারেন। বছরভর বক্সা টাইগার রিজার্ভ ও সংলগ্ন অঞ্চলের নদী, পাহাড়, জঙ্গল ঘুরে ঘুরে চলে নাম জানা বা না-জানা পাখিদের তত্ত্বতালাশ। জায়গাটা পাখিদের স্বর্গরাজ্য। চিকরাশি, গামারি, চাপ, শিমুল, হরিতকি লতা-গুল্মের মিশ্র অরণ্যে সারা বছর দেখা যায় রেড ভেন্টেড, বুলবুল, ব্ল্যাক হেডেড ওরিয়ল, জাঙ্গল ব্যাবলার। এ ছাড়া আছে ময়না, চড়াই, বসন্তবৌরি, হাঁড়িচাচা। ঘন জঙ্গলে সারা বছরই ঘুরে বেড়ায় ছটফটে ছোট পাখি ওয়ারব্লার-এর বিভিন্ন প্রজাতি। নদীর ধারে বাস করে রেড ওয়ালটেড, ল্যাপউইং, থিকনি। শীত পড়তেই উড়ে এসে জুড়ে বসে অগুনতি পরিযায়ী পাখি। ১৯৯৯-এ মুম্বইয়ের ন্যাচারাল হিস্টরি’র (বি টি আর) শেষ সমীক্ষায় নথিভুক্ত হয় ২৪৬টি প্রজাতির পাখি। কিন্তু ক্লাবের সদস্যদের সমীক্ষায় এ ছাড়াও ধরা পড়ে গ্রেট থিকনি, হজসন’স রেডস্টার্ড, হুইসলিং থ্রাস, ইউরেশিয়ান ব্ল্যাকবার্ড, লার্জ টেল নাইট জারর মতো বেশ কিছু পাখি। শুধু দেখা বা পাখি চেনাই নয়, সাধারণের মধ্যে পাখি সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সারা বছর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালান ক্লাব সদস্যরা। পাখিদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা, পাখি ও মানুষের সম্পর্ক এ সবই তাঁদের প্রচারের বিষয়। স্লাইড-শো, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, পাখি নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের আসর করে থাকেন। নিরবচ্ছিন্ন এই প্রয়াস থেকে বাদ পড়ে না ছাত্রছাত্রীরাও।
|
আত্রেয়ীর মাঝে সাপের বক্রতা নেই, কৃপণের কুটিলতা নেই। কৃষ্ণপক্ষের ভাঁটা তার বুকের খানিকটা শুষে নিলেও কাঙাল করে না। ভোরের বাতাসে ওর ঘুম ভাঙে। দিনের সূর্য তাতায় শরীর। প্লাবনে তার পাড়ের কোনও হদিশ থাকে না। সব দিক একাকার। আত্রেয়ীর তেমন কোনও ইতিহাস নেই। সে শুধুই একটি নদী। ওর কোনও পদবি নেই, আত্মীয় নেই। যারা আছে, তারাও ছেড়ে দেবে কাল। নদীমাতৃক স্রোতে ভেসে থাকে শুধু বঞ্চনার শ্যাওলা। টোপাপানার বিছানা পেতে ঘুমোতে যায় জল। আত্রেয়ী বলছে, অন্য কোথাও চল। আসলে আত্রেয়ী সিন্ধুর মেয়ে হতে চেয়েছিল। চেয়েছিল ওর জলেও জাহাজ ভাসবে এক দিন। আশপাশের শহরে আশ্রয় নেবে আত্রেয়ীর আত্মীয়রা। কিন্তু বাস্তব অন্য রকম। আত্রেয়ীর দু’পাড়ে শুধুই যুদ্ধ। আরও গরিব আর আরও হতশ্রী হওয়ার যুদ্ধ। কুঁড়ে ঘরে নুন-পান্তা জোগাড়ের যুদ্ধ। প্রবল ঝড়েও ঘরবাড়ির শিকড়ের সঙ্গে আটকে থাকার যুদ্ধ। আর এ ভাবেই আত্রেয়ী এখনও বয়ে চলেছে, জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব।
|
জলপাইগুড়ি থেকে প্রকাশিত ‘সৃজনী’ দ্বিতীয় বর্ষে পা দিল। পত্রিকার পঞ্চম সংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে স্থানীয় সুভাষ ভবনে অনুষ্ঠিত হল একটি আলোচনা সভা। উপস্থিত ছিলে জ্যোৎস্নেন্দু চক্রবর্তী, বিমলেন্দু মজুমদার, অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত। বক্তাদের আলোচনায় পত্রিকার নানা দিক সম্বন্ধে জানা গেল। পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি পত্রিকাগোষ্ঠী দর্শকদের উপহার দিলেন ভিন্ন স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে একটি অন্য রকম সন্ধ্যা। অনুষ্ঠান পরিচালনায় জবা শর্মা।
|