পলেস্তারা খসে বিমের শিক বেরিয়ে পড়েছে। ফেটে গিয়েছে স্তম্ভ। প্রায়ই ছাদ থেকে ভেঙে পড়ে বড় বড় চাঙড়। ছাদের উপর বেড়ে ওঠা বট-অশ্বত্থের ডালে বাসা বেঁধেছে পাখি। একটু জোরে হাওয়া বইলেই দুলতে থাকে সবটা। আর বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে জল।
এমনই একটি ভবনের একাংশে চলে সূর্যকান্ত মিউনিসিপ্যাল (নতুন বাজার) মার্কেট। যা বসিরহাটের সবচেয়ে পুরনো বাজার। যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে খোলা বিদ্যুতের তার। হাত পড়লে তড়িদাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে ক্রেতাদের। এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে মাথা বাঁচাতে ঘরের তলায় পলিথিন টাঙিয়ে কোনও রকমে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। রাস্তাও সঙ্কীর্ণ। এর মধ্যেই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাজার করতে হয় শত শত শহরবাসীকে। বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষকে ভবন মেরামত, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা চালু ও বিদ্যুতের তার ঢাকার ব্যবস্থা করতে একাধিকবার বলা হলেও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। যে কোনও সময়ে, বিশেষত বর্ষায় শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। |
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ষাটেক আগে টাউন হলের সামনে ইটিন্ডা রাস্তার পাশে বাজারটি তৈরি হয়। বয়স বাড়লেও প্রায় কোনও মেরামতির কাজ না হওয়ায় বর্তমানে ভবনটির চরম বেহাল দশা। ২০০৭ সালে বাজারের একটা অংশে অনুন্নত শহর ও নগর উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাজারটিতে চার তলা তৈরির কাজ শুরু হয়। কাজ অনেকটা এগোলেও তা আজও অসম্পূর্ণ। বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী অশোক দাস, শম্ভু দে, সইফুদ্দিন মোল্লা, মঙ্গল দে-রা বলেন, “অবস্থাটা তো দেখছেন। যে কোন মুহূর্তে বিপদ হতে পারে। সম্প্রতি এক ক্রেতা এবং দু’জন ব্যবসায়ী ছাদের ভাঙা টুকরোয় আহত হয়েছেন। বাড়িটি ভেঙে নতুন করার জন্য বারেবারে বললেও আলোচনা আর প্রতিশ্রুতি ছাড়া পুরসভা কিছু করছে না।” একই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই বাজারের মুদি ও গমকলের দোকানিরা।
ওই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রদীপ কুণ্ডু বলেন, “মূলত সব্জি এবং মুদি ব্যবসায়ীরা যেখানে বসেন, সেই পুরনো বাড়িটার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। যে কোন মুহূর্তে দুঘর্টনা ঘটতে পারে। নতুন বাড়িটির কাজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বসার জায়গা না পেয়ে বাজারে ঢোকার রাস্তায় দোকান বসায় বিপদের দিনে দমকলের গাড়ি ঢোকা কষ্টকর। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কেনাবেচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কথা জানিয়ে অবিলম্বে বাড়িটি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরির জন্য বলা হলেও পুরসভার তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না।”
কেবল বসিরহাট নতুন বাজার নয়, একবার আগুন লাগলে তা নেভানোর প্রয়োজনীয় প্রায় কোনও ব্যবস্থাই নেই খোদ পুরভবন থেকে শুরু করে বদরতলা, ভ্যাবলা, মির্জাপুর, হকার্স মার্কেট এবং বৌবাজার-সহ অন্যান্য বাজার এবং হাটে। টাউন হল, রবীন্দ্রভবন-সহ বিভিন্ন বিয়েবাড়ি, যেখানে লোকসমাগম হয় সেখানকার অবস্থাও অনেকটা একই রকম।
ওই সব জায়গায় ‘অগ্নিনির্বাপণ বিধি’ ঠিকমতো মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব দফতরের অন্য বিভাগের বলে হাত ধুয়ে ফেলেছেন মহকুমা দমকল দফতরের ওসি রঞ্জিত মণ্ডল। পুরসভার সহকারী নির্বাহী বাস্তুকার কাজল হালদার বলেন, “পুরসভার অধীনে লোক সমাগম হয় এমন জায়গাগুলিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র লাগানোর জন্য পুরপ্রধান নির্দেশ দিয়েছেন।” বসিরহাটের বিভিন্ন বাজার-সহ অন্যান্য জায়গায় বিদ্যুতের তার কী ভাবে এবং কতটা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে তা দ্রুত দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বসিরহাট ডিভিশনের ম্যানেজার প্রসূন ভৌমিক। তিনি বলেন, “শহরের হাট-বাজারগুলিতে অভিযান চালানোর সময়ে পুর কর্তৃপক্ষ সাহায্য করলে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।”
পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, “বিগত পুরবোর্ড টাকা না রেখে যাওয়ায় এবং ঠিকাদার কাজ শেষ না করে চলে যাওয়ায় নতুন বাজারে বাড়ি তৈরি বেশ কিছুটা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে। নতুন বাড়ি শেষ না হলে পুরোনো বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রেও কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে দ্রুত কাজ শুরু করার।” তাঁর দাবি, “যত দ্রুত সম্ভব পুর এলাকার মধ্যে থাকা ১২টি বিয়েবাড়ি এবং বাজারগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র যাতে লাগানো হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভা, টাউন হল এবং রবীন্দ্রভবনেও লাগানো হচ্ছে আগুন নেভানোর যন্ত্র। একই সঙ্গে দেখা হচ্ছে লোক সমাগমের স্থানে যাতে সহজে জল পাওয়া যায় সে দিকটাও।” মোটের উপর মানুষের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কোন ভাবেই কারও সঙ্গে আপস করা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। |