এক নয়, দুই নয়, একে একে পাঁচ। বল হাতে আবার ঝলসে উঠলেন অশোক দিন্দা। দোসর এক ওভারে এক রান দিয়ে দু’ উইকেট নেওয়া সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একটা সময় বরোদা ছিল ১৪৫-১। নেমে দাঁড়াল দিনের শেষে ২৮৪-৯। প্রথম দিনের শেষেই তিন পয়েন্টের সৌরভ ম’-ম’ করছে বাংলা ড্রেসিংরুমে। এমনকী পাঁচ বা ছ’পয়েন্ট আসাটাও এখন দূর নীহারিকা মনে হচ্ছে না।
অথচ বুধবার দুপুর পর্যন্ত এমন নাটকীয় পট পরিবর্তনের কোনও ইঙ্গিতই ছিল না। স্কোরবোর্ডে চড়চড় করে রান উঠছে, পেস-স্পিন কোনও মন্ত্রেই আটকানো যাচ্ছে না। এসেছে একটা উইকেট। গোড়ালির চোটে ছিটকে যাওয়া সামি আহমেদের জায়গায় আসা সৌরভ সরকারের বলে। কিন্তু তার পরোয়া না করে উইকেটে জমে যাচ্ছেন বরোদার দুই ব্যাটসম্যান রাকেশ সোলাঙ্কি এবং আদিত্য ওয়াঘমোড়। একশো হল। একশো পেরিয়ে যখন স্কোর ছুটছে দেড়শোর দিকে, তখনই ধাক্কা। সেই অশোক দিন্দা। চলতি মরসুমে যখনই দরকার পড়েছে, উইকেট তুলে ম্যাচে ফিরিয়েছেন বাংলাকে। এ দিনও ব্যতিক্রম হল না। দিন্দার পেস-বাউন্স-নিশানার ত্রিভুজে আটকে গেল বরোদা।
আজকের পাঁচ উইকেট ধরে চলতি মরসুমে ছয় ম্যাচ থেকে ৩২ উইকেট হয়ে গেল দিন্দার। রঞ্জির সফল বোলারদের তালিকায় দু’নম্বরে রয়েছেন বাংলার পেসার। কী ভাবে? দিন্দার নিজের বয়ানেই শোনা যাক। এই মরসুমে একটা নির্দিষ্ট স্পট খুঁজে নিয়ে একের পর এক বল করে গিয়েছেন প্র্যাক্টিসে। মোতিবাগে খেলার শেষে সাংবাদিকদের তিনি বললেন, “টিম অনেকটাই আমার উপর নির্ভর করে। আমিই এখন দলের সবচেয়ে সিনিয়র বোলার। তাই সবাই আশা করে, যখন দরকার হবে তখন আমিই উইকেট নেব। এই চাপ নিয়ে খেলাটা এখন আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।” |
বুধবার যখন প্রথম দিকে উইকেট পড়ছিল না, চাপে পড়েছিলেন। কিন্ত তা সামলে উঠে ঘুরে দাঁড়াতেও বেশি সময় লাগেনি দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসারের। বলছেন, “প্রথম সেশনে উইকেট পড়েনি। তাই দ্বিতীয় সেশনে উইকেট তোলা খুব দরকার ছিল। ভাল লাগছে ওই সময় দলের কাজে আসতে পেরে।” বাংলাকে অবনমনের আশঙ্কা থেকে বের করার তাগিদ তো আছেই। উইকেটের জন্য দিন্দার খিদে চাগিয়ে রাখছে আরও একটা স্বপ্ন। আবার টিম ইন্ডিয়ার জার্সি পরার স্বপ্ন। “ভারতীয় দলে কামব্যাক করতে চাই। তাই প্রচুর খেটেছি। শুধু ফিটনেস নিয়েই নয়। দিনের পর দিন বলটা ঠিক জায়গায় রাখার চেষ্টা করেছি। সেই চেষ্টাটাই কাজে আসছে,” দিনের শেষে দিন্দার গলায় আশা।
আর এক জনের কথাও বলতে হয়। তাঁর জাতীয় দলে ফেরার কোনও স্বপ্ন নেই ঠিকই, কিন্তু চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই সৌরভের দায়বদ্ধতাটা আছে আগের মতোই। দলটার নাম ভারত হোক বা বাংলা। সৌরভ শুধু এই ম্যাচটা খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া সফরে ধারাভাষ্য দিতে যাচ্ছেন দেরিতে। সিএবি-কে বলে এসেছেন, বিপদের দিনে বাংলা আগে। বাকি সব পরে। মোতিবাগে সেটা বোঝাও গেল। দিন্দা উইকেট তুলছিলেন ঠিকই, কিন্তু দিনের শেষে সৌরভের এক ওভারে দুটো উইকেট না এলে এত ভাল ফিনিশিং টাচ দেওয়া সম্ভব হত না। যার মধ্যে একটা উইকেট ক্রিজে জমে যাওয়া ইরফান পাঠানের (৪২)।
বোলাররা যা করার করেছেন। আর দরকার শুধু একটা উইকেট। বাকি কাজটা করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। বিশেষ কিছু নয়, দরকার একটু দেখেশুনে ব্যাটটা করা। ধৈর্য রেখে। আর সেটা করতে মনোজ তিওয়ারি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্লদের খুব অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কারণ উল্টো দিকে ইরফান পাঠান আছেন ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাকে তো পাটা পিচই দিয়েছে বরোদা!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বরোদা ২৮৪-৯ (সোলাঙ্কি ৭৩, আদিত্য ওয়াঘমোড় ৬২, দিন্দা ৫-৯৬, সৌরভ ২-১)। |