বহুতলে বিপন্ন শহর
নিয়মের বালাই নেই। পর পর মাথা তুলছে বহুতল। উধাও সবুজ গাছগাছালি। বাড়ছে কংক্রিটের জঙ্গল। নেই পরিকল্পিত নিকাশি। জঞ্জাল সাফাই পরিকাঠামো। পরিষেবার অভাবে নাগরিক জীবনে বিপন্নতা বেড়ে চললেও পুরসভার মর্যাদা পায়নি ময়নাগুড়ি। এক দশকে ডুয়ার্সের ওই প্রাচীন জনপদের অবয়ব এতটা পাল্টেছে যে কেউ এখন তাকে গ্রাম বলে না। পুরসভার স্বীকৃতি অধরা থাকলেও মিলেছে ‘সেন্সাস টাউনশিপের’ মর্যাদা। বসতি এলাকা সম্প্রসারিত হয়েছে ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। জনসংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। শুরু হয়েছে ‘কংক্রিট বুম’। গা ঘেসে একের পর এক বহুতল মাথা তুলছে। সবুজ এক ফালি খোলা জমি এখন দুষ্প্রাপ্য। দুই-তিন কাঠা পরিমাপে যে জমি মিলছে সেখানে মাথা তুলছে কংক্রিটের দৈত্য। এমনকী নির্মাণ কাজ রাস্তায় উঠে এলেও দেখার কেউ নেই। ইচ্ছে মতো বহুতল তৈরির প্রতিযোগিতার ফলে এক দিকে যেমন কমেছে সবুজের অংশ। অন্য দিকে বেড়েছে দূষণের সমস্যা। ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, “ময়নাগুড়ির প্রকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে বসেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে বাসিন্দারা স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবেন না।” কিন্তু সমস্যার সমাধান কী? গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিকাঠামোতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা জানেন দ্রুত আবাসন তৈরির সুনির্দিষ্ট নিয়ম চালু করা ও নির্মাণ কাজে নজরদারির ব্যবস্থা করা না-হলে ময়নাগুড়ি বিপদে পড়বে। নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট হবে। ইতিমধ্যে সবুজ মাঠের অভাব প্রকট হয়েছে। বৃদ্ধদের অবসর বিনোদনের জায়গা নেই। শিশুরা খেলবে তেমন মাঠ পাড়াগুলি থেকে উধাও হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি উদ্যান মনোরঞ্জনের একমাত্র সম্বল। সেটাও জনসংখ্যার নিরিখে এখন খুবই ছোট। স্থানীয় বিডিও সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, “যে ভাবে জনপদ সম্প্রসারিত হয়েছে তাতে আরও চারটি উদ্যান ও প্রতিটি পাড়ায় খোলা মাঠের ব্যবস্থা করা জরুরি।” কিন্তু প্রয়োজন হলেও উপায় কী! যেখানে ফাঁকা জমি, সেখানে বাড়ি, দোকান গজিয়েছে। সরকারি জমি দখলদারদের কবলে। পরিস্থিতিতে হাসফাঁস করে বেঁচে থাকা বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে নাগরিক জীবনে আসন্ন বিপদ বুঝেও রাজনৈতিক দলগুলি চুপ কেন! কেন তাঁরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়কে আন্দোলনের ইস্যু করছেন না! ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা পুরসভার দাবি জানিয়েছি।” যদিও তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা বিধায়ককে বিঁধতে ছাড়ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ময়নাগুড়ি বিধানসভা অনন্তবাবুদের দল আরএসপির দখলে। বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচ করে বিশ্রামাগার ও মুক্তমঞ্চের নাম করে নির্মাণ কাজগুলি কী পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে! কেন এতদিনেও মাষ্টার প্ল্যান তৈরি হল না! জেলাপরিষদ সহ সরকারি জমি সংরক্ষিত না-করে সেখানে বিভিন্ন সংস্থাকে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হল! পেশায় শিক্ষক সাধন মৈত্র বলেন, “মুখে যাই বলুন না-কেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ময়নাগুড়ির সার্বিক উন্নয়নে মোটেও আন্তরিক নয়। যে কারণে উন্নত নাগরিক পরিষেবা উপেক্ষিত থেকেছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.