কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন পেনশন প্রকল্পের ধাঁচে প্রভিডেন্ট ফান্ডের পেনশন প্রকল্পটিও ঢেলে সাজার কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত নতুন ব্যবস্থা চালু হলে সদস্যদের পেনশন দেওয়ার দায় থেকে মুক্ত হবেন প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ তথা কেন্দ্রীয় সরকার।
ওই ব্যবস্থায় পেনশন তহবিলে জমা হওয়া টাকা মূলত শেয়ার ও ঋণপত্রে লগ্নি করে যা আয় হবে, তাই অবসর ভাতা হিসাবে দেওয়া হবে। যাকে পরিভাষায় ‘অ্যানুইটি স্কিম’ হিসাবে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রের গড়া এই সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি। অনেকটা একই রকম ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই কেন্দ্র নিজস্ব কর্মীদের জন্যও চালু করেছে।
এ দিকে পিএফের পেনশন প্রকল্পের ভাগ্য শেয়ার বাজারের উপর ছেড়ে দিলে তার তীব্র বিরোধিতা করা হবে বলে জানিয়েছে ইউনিয়নগুলি। অ্যানুইটি প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব পিএফের পেনশন রূপায়ণ কমিটি গ্রহণ করেনি। কিন্তু পিএফ দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্র বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা পরিবর্তন করে অ্যানুইটি প্রকল্প চালু করার কথাই ভাবছে। পেনশন প্রকল্পে পাহাড় প্রমাণ ঘাটতি কমাতেই কেন্দ্র নতুন পথের খোঁজে নেমেছে। সেই লক্ষ্যেই তারা ওই বিশেষ কমিটি গঠন করে। কমিটি তার রিপোর্টে অ্যানুইটি প্রকল্প চালুর সুপারিশই করেছে।
অ্যানুইটি প্রকল্পটি কী এবং বর্তমান ব্যবস্থার সঙ্গে তার ফারাক কোথায়? পেনশন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিমা সংস্থা বাজারে বিশেষ ধরনের অ্যানুইটি প্রকল্প বাজারে ছেড়েছে। ওই প্রকল্পের টাকা মূলত শেয়ার এবং বন্ডের বাজারে লগ্নি করা হয়। তার থেকে প্রতি বছর যে লাভ হয়, তাই মাসে মাসে ভাগ করে পেনশন দেওয়া হয় গ্রাহককে। বাৎসরিক ভিত্তিতে আয়ের হিসাব করা হয় বলেই এটিকে অ্যানুইটি প্রকল্প বলা হয়।
প্রকল্পটি কী ভাবে পরিচালিত হবে? কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী বর্তমান ব্যবস্থার মতোই পিএফ সদস্যদের জন্য দুটি অ্যকাউন্ট থাকবে। একটিতে জমা হবে পিএফের টাকা। অন্যটিতে পেনশনের। পেনশন তহবিলে জমা টাকা থেকেই কেনা হবে অ্যানুইটি প্রকল্প। তবে বর্তমানে পেনশন তহবিলে কত টাকা জমা হচ্ছে, তা সদস্য জানতে পারেন না। নতুন ব্যবস্থায় পারবেন।
পারিবারিক পেনশন বা ফ্যামিলি পেনশন প্রকল্প বাতিল করে কেন্দ্র ১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসে পিএফের পেনশন প্রকল্পটি চালু করে। কিন্ত সুদ কমায় পেনশন প্রকল্পের আয়ও কমে যায়। যার ফলে গত ১০ বছর ধরে পেনশনের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। কিন্তু তাতেও অবস্থা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, পিএফের সমস্ত বর্তমান সদস্যের প্রাপ্য পেনশনের অঙ্ক হিসাব করলে প্রকল্পে ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে কর্মীদের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার ১২% টাকা পিএফ খাতে জমা দেন কর্তৃপক্ষ। চটকল-সহ কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য জমা দেওয়া হয় ১০%। সর্বোচ্চ ৬৫০০ টাকা মূল বেতনের উপরেই পিএফ দেওয়া হয়। ওই ১২ বা ১০% থেকে ৮.৩৩% জমা রাখা হয় পেনশন অ্যাকাউন্টে। এ ছাড়া কেন্দ্রও ওই ৬৫০০ টাকার উপর ১.১৬% টাকা পেনশন তহবিলে জমা দেয়। তা থেকেই কর্মীর ৫৮ বছর বয়স হওয়ার পর পেনশন দেওয়া হয়।
কিন্তু পেনশনের মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের তহবিল শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে দিতে রাজি নয় ইউনিয়নগুলি। মূলত তাদের বিরোধিতার ফলেই প্রস্তাবটি পেনশন রূপায়ণ কমিটিতে বাতিল হয়েছে। তা ফের তোলা হলে তাঁরা তীব্র বিরোধিতা করবেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের নেতারা। এ আই টি ইউ সি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “এ ধরনের প্রস্তাব এলে তীব্র বিরোধিতা করব।” কিন্তু পেনশন তহবিলের ঘাটতি কী করে মেটানো হবে? গুরুদাসবাবুর উত্তর, “এটা সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। তাই কেন্দ্রকে ঘাটতি মেটাতে ভর্তুকি দিতে হবে।”
একই অভিমত এসইউসি-র কর্মী সংগঠন এআইইউ টিইউসি-র। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর সাহা বলেন, “ইতিমধ্যেই পেনশন বিক্রি-সহ পিএফ প্রকল্পের বেশ কিছু সুবিধা বাতিল করেছে কেন্দ্র। এখন পেনশন দেওয়ার পুরো দায় থেকেই তারা মুক্ত হতে চাইছে। অ্যানুইটি প্রকল্প চালু করার চেষ্টা হলে বিরোধিতা করব।” বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক বৈজনাথ রায় বলেন, “অ্যানুইটি প্রকল্প চালুর প্রস্তাব ইতিমধ্যেই পেনশন রূপায়ণ কমিটিতে বাতিল করে দিয়েছি। আবার তা চালু করার চেষ্টা হলে আমরা ফের বাধা দেব।” |