আমরির আঁচে ঘুম ভেঙেছে কর্তাদের। হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ঘুরে তাঁরা দেখছেন অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার হালহকিকত। কিন্তু কী অবস্থা তাঁদের দফতরের?
চিত্র ১: কালনা মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের দোতলায় ওঠার মুখেই রয়েছে মিটার বক্স-সহ বেশ কিছু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। তার ঠিক পাশেই রয়েছে একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। গায়ে জমে থাকা ধুলোর আস্তরণ দেখেই বোঝা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে সেটি ‘রিফিলিং’ করা হয়নি। মহকুমাশাসকের অফিসে আগুন লাগলে ভরসা বলতে এই যন্ত্রটিই। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের পাশে এক কোণে রাখা ওই যন্ত্রটি প্রয়োজনে কাজে আসবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ রয়েছে।
চিত্র ২: কালনা শহরের তেঁতুলতলা মোড় থেকে কয়েক পা এগোলেই কালনা অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র। কার্যালয়ের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, মজুত রয়েছে দমকলের গাড়ি, হেলমেট, জুতো-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যদিও অনেক খুঁজেও দেখা মিলল না ফায়ার অ্যালাম, ফায়ার ব্রাকেট, কার্বন ডাই-অক্সাইড ভর্তি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের (সাধারণত দমকল আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন অফিসে এ গুলিই মজুত রাখার পরামর্শ দেয়)।
চিত্র ৩: শহরের জাপট এলাকায় মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের (এসিএমওএইচ) অফিস। একতলা অফিসের একটি ঘরে ডাঁই করে রাখা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। নেই শুধু প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। |
আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই জেলা জুড়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়েছেন এসিএমওএইচ, দমকলের কর্তারা। তাঁরা বারবার জানিয়েছেন, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলি কতটা উদাসীন। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য অনেক পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
প্রতিদিন কালনার পাঁচ ব্লক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসে মহকুমাশাসকের অফিসে। নথিপত্র ছাড়াও রয়েছে কম্পিউটর-সহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রীও। এই দ্বিতল ভবনে আগুন লাগলে ভরসা একটিমাত্র অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। ওই কার্যালয়ের পাশেই রয়েছে ‘ট্রেজারি রুম’। দ্বিতল ওই ভবনেও রয়েছে একটিমাত্র অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। অথচ মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের গা ঘেঁষেই রয়েছে মহকুমা আদালত, বা অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়, বেশ কিছু দোকানপাটও। ওই সব দোকানে আগুন জ্বেলে রান্নার কাজও হয়। ফলে যে কোনও সময়ে আগুন লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা এড়ানো যায় না।
যদিও মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচির দাবি, “ট্রেজারি রুমের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রটি নিয়মিত রিফিলিং করানো হয়।” তাঁর কার্যালয়ে রাখা যন্ত্রটিও রিফিলিং করে নেওয়া হবে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “কার্যালয়ের আশপাশে কী কী অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা প্রয়োজন, সে বিষয়ে দমকল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।”
এসিএমওএইচ-এর অফিসে ঢোকার মুখে রয়েছে বৈদ্যুতিক হিটার। কাজের ফাঁকে গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঘরগুলি কাঠের চেয়ার-টেবিল, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে ঠাসা। শুধু নেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষচন্দ্র মণ্ডল দাবি, “দফতরে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র লাগিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা জেলায় জানাচ্ছি।”
আগুন লাগলেই ডাক পড়ে যাদের, সেই দমকলের অফিসে মজুত রয়েছে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। কোথায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলেই এ গুলি নিয়ে ছুটে যান কর্মীরা। কিন্তু এই অফিসেই যদি আগুন লাগে, তার জন্য কী ব্যবস্থা রয়েছে? প্রশ্ন শুনে বিভাগীয় ওসি নীলমাধব মুখোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন জলের দু’টি রিজার্ভার। আর বললেন, “এই জল দিয়েই তো আগুন নিভিয়ে ফেলা যাবে।” যখন দফতরের বেশিরভাগ কর্মীই অন্যত্র আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত, তখন নিজের দফতরে জল ঢেলে আগুন নেভাবে কে? তার জবাব অবশ্য মেলেনি।
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার হাল খতিয়ে দেখার গুরুভার যাঁদের কাঁধে, তাঁরা কি আদৌ নিরাপদ? সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। |