আমরি কাণ্ডের পরে রায়গঞ্জ শহর এলাকার বিভিন্ন বহুতল অনুষ্ঠান ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তৎপর হল রায়গঞ্জ পুরসভা ও দমকল দফতর। পুরসভা সম্প্রতি ওই বিষয়ে পুলিশ, দমকল ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে দমকল দফতরের আধিকারিকদের বহুতল ভবন কর্তৃপক্ষকে অগ্নি নির্বাপণ বিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক করতে অনুরোধ করা হয়। এর পরে দমকল কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। রায়গঞ্জ পুরসভা ভাইস চেয়ারম্যান রণজকুমার দাস বলেন, “শহরের একটি ভবনেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সার্টিফিকেট ছাড়া এ সব চলছে। অথচ সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গ্যাস সিলিন্ডারে রান্নার কাজ চলে। দুর্ঘটনা ঘটলে দমকলের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। দমকল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বলা হয়েছে।” দমকল দফতরের যুগ্ম ফায়ার প্রোটেকশন অফিসার দীপক নন্দী বলেন, “আগামী শনিবার থেকে বহুতল ভবন কর্তৃপক্ষকে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট নেওয়ার অনুরোধ করা হবে। এর পরেও ওঁরা উদ্যোগী না-হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শহরে ২০টি বহুতল ভবন রয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি বহুতল হোটেল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। ভবনগুলিতে গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে উনুন ধরিয়ে রান্না করে অতিথিদের খাওয়ানো হয়। দমকলের বিধি অনুযায়ী, বহুতল ভবনে রান্না ঘর থাকলে অগ্নিকাণ্ড এড়াতে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক। ওই সার্টিফিকেট নিতে হলে ভবন কর্তৃপক্ষকে বিধি মেনে আগুন নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। আমরির ঘটনার পরে শহরের বহুতল ভবন কর্তৃপক্ষ অগ্নি নির্বাপণ বিধি মেনে চলছেন কি না তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন পুর ও দমকল কর্তৃপক্ষ। দীপকবাবু বলেন, “শহরের কোনও বহুতল অগ্নি নির্বাপণ পরিকাঠামো গড়ে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট নেয়নি। সেখানে আগুন লগলে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘদিন সচেতনতা অভিযান চালিয়েও লাভ হয়নি। কিন্তু এ বার আর ছাড় দেওয়া হবে না।” দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুতল ভবনগুলিতে বড় জলাধার থাকা বাধ্যতামূলক। জলাধারের মুখ খুলে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের পরিকাঠামো তৈরি রাখতে হবে। পাশাপাশি, আগুন লাগার পর দ্রুত বিপদ সঙ্কেত বোঝার জন্য ‘অটোমেটিক ডিটেকশন অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বা ‘অ্যালার্মিং সিস্টেম’ থাকাও বাধ্যতামূলক। বিধি অনুযায়ী, বহুতল ভবনে একাধিক সিড়ি, অত্যাধুনিক লিফট থাকার কথা যেন দুর্ঘটনার সময় একাধিক উপায়ে একসঙ্গে অনেক মানুষকে বাইরে বার করা সম্ভব হয়। ওই সমস্ত বিষয় দেখার পরে দমকলের তরফে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। দমকল দফতরের দীপক নন্দী বলেন, “আগামী শনিবার আমি নিজে বিভিন্ন বহুতল অনুষ্ঠান ভবন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওই পরিকাঠামো তৈরি করে সরকার নির্ধারিত ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।” |