মাস আটেক আগেই লাইসেন্স বাতিল হয়ে গিয়েছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারেরাও নিয়মিত আসেন না। কেবলমাত্র চার জন টেকনিসিয়ানের উপরে দায়দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে লাইসেন্সহীন ব্লাড ব্যাঙ্কটি ২৪ ঘণ্টাই চালু রাখতে হচ্ছে।
আরামবাগ পুরসভা এবং সংলগ্ন হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও দুই মেদিনীপুরের রোগীরা এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল। আড়াইশো শয্যার হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় পাঁচশোর মতো। এ অবস্থায় দিশেহারা হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায়। তাঁর আশঙ্কা, “খুব ঝুঁকি নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালাচ্ছি। স্বাস্থ্য দফতরের সর্বোচ্চ স্তরে অসুবিধাগুলি একাধিকবার জানানো হয়েছে। কাজের কাজ তো হয়নি, উল্টে আমাকে ব্লাড ব্যাঙ্ক খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুলে না রাখলেও উপায় নেই। ছ’টি জেলার মানুষের অবলম্বন এই ব্লাড ব্যাঙ্কটি। রক্তকে কেন্দ্র করে কোনও বিপদ ঘট গেলে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হবে।”
গত মার্চ মাসে ব্লাড ব্যাঙ্কটির লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সরকার ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেয়। তারা পরিষ্কার বলে দিয়েছে, উপযুক্ত চিকিৎসক (যার ন্যূনতম এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিপ্লোমা থাকবে) না-থাকলে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হবে না। গত মার্চ অবধি চিকিৎসক তপনকুমার মাজির শংসাপত্র অনুযায়ী ব্লাড ব্যাঙ্কটির লাইসেন্স ছিল। মাস খানেকের মধ্যে তিনি অবসর নেবেন। তাই নিজের শংসাপত্র আর ব্যবহার করতে দেবেন না বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
অন্য দিকে, ব্লাড ব্যাঙ্কের সদ্য নিযুক্ত মেডিক্যাল অফিসার অজয়কুমার নিয়োগীর এক বছরের অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট ডিপ্লোমা নেই। ফলে সমস্যা জটিল হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার আসেন এবং জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। সেই রাতেই আবার ব্লাড ব্যাঙ্কে নাইট ডিউটি করেন। শুক্রবার এক দফা জরুরি বিভাগে কাজ সেরে শনিবার সকালে ফিরে যান।
সারা সপ্তাহে দায়িত্ব পালনের সময়টুকু নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীদের একাংশ। হাসপাতাল সুপার জানান, ‘‘বিষয়টি জেলার স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে।” হুগলি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, ‘‘অনুমোদন ছাড়াই ওই চিকিৎসকের অনুপস্থিতির
জন্য তাঁর বেতন আটকানোর ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে মৌখিক নির্দেশ এসেছে।” অন্য দিকে, অজয়বাবু বলেন, “এ বিষয়ে মন্তব্য করব না, সুপারকে সমস্ত কথা জানিয়েছি।” ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স নিয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, “বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই তা হবে।”
কিন্তু সমস্যার সমাধান যে খুব শীঘ্র হওয়ার নয়, তা বিলক্ষণ জানেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসক ছাড়া কাজটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ জেনেও আতঙ্কিত চার জন টেকনিসিয়ান কাজ করে চলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। কিন্তু দায়িত্বের বাইরে গিয়েও অনেক
কাজ করতে হচ্ছে।” টেকনিসিয়ানদের মধ্যে আবার স্থায়ী কর্মী এক জন। এ দিকে, প্রতি মাসে মহকুমায় স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির হয় ১৫টি থেকে ১৮টি। প্রতি শিবির থেকে ন্যূনতম ৫০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়। সপ্তাহে ৮০০ থেকে ৯০০ ব্যাগ রক্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব এই টেকনিসিয়ানদের উপরেই বর্তায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়াই সে সব পরীক্ষা হয়ে চলেছে। |