আমরি (ঢাকুরিয়া) হাসপাতালে স্মোক অ্যালার্মের স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিন লগবুক (ফায়ার অ্যান্ড স্মোক কন্ট্রোল বোর্ড) বাজেয়াপ্ত করলেন হায়দরাবাদের সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-র বিশেষজ্ঞেরা। স্মোক অ্যালার্ম বন্ধ বা খোলা হলে তার যাবতীয় তথ্য আপনা-আপনি লগবুকে নথিভুক্ত হয়ে যায়।
আমরির অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশের এখন অনুমান, হাসপাতালটির বেসমেন্টে ‘ গোপনে’ ধূমপানের কারণেই ৮ ডিসেম্বর রাতে ওই বিপর্যয় ঘটেছিল। কারও ছুড়ে ফেলা আধপোড়া সিগারেট থেকে তুলোর স্তূপে আগুন ধরে যায় বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। পুলিশের এ-ও সন্দেহ, ওখানকার বেসমেন্টে ধূমপানের সময়ে হামেশাই অ্যালার্ম বন্ধ করে রাখা হতো। ৮ ডিসেম্বর ওই বিপদ-ঘন্টি কখন থেকে বন্ধ ছিল, লগবুক ঘেঁটে সেটাই এ বার জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে সেই ‘ধূমপায়ীদের’ খুঁজে বার করতে আমরি-র সর্বস্তরের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও শুরু করেছেন তাঁরা।
গোয়েন্দাদের দাবি, নিজেদের ‘তত্ত্বের’ সমর্থনে আরও তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে। পুলিশ-সূত্রের খবর: ওই রাতে ঢাকুরিয়া আমরি-তে কোন কর্মীর কী দায়িত্ব ছিল, তার প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়েছে। ডিউটির সময়ে তাঁরা নিজেদের জায়গায় ছিলেন কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “ওই রাতে হাসপাতালে থাকা রোগীদের বিভিন্ন পরিজনের কাছেও এ ব্যাপারে তথ্য চাইছি আমরা।” সোমবার তদন্তকারীদের একটি দল আমরি-তে গিয়ে কিছু কর্মী এবং হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, চিকিৎসক মণি ছেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ দিকে আমরি-কাণ্ডে পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। সোমবার রাজ্য সরকার ওই তদন্ত কমিশন সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তপন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন কমিশনটি মোট ১২ দফা বিষয় খতিয়ে দেখবে। হাসপাতাল ভবনে কোনও ক্ষতিকর রাসায়নিক বা বিস্ফোরক মজুত ছিল কি না, হতাহতের সংখ্যা কমাতে আমরি-কর্তৃপক্ষ আদৌ চেষ্টা করেছিলেন কি না, এ সবও যাচাই করবে কমিশন। আমরি-তে অগ্নি নির্বাপক নিরাপত্তা-বিধি লঙ্ঘনের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তদন্ত কমিশনকে সে সুপারিশও করতে বলা হয়েছে।
কমিশনকে তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। |