বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আমরি-র অন্যতম ডিরেক্টর রাধেশ্যাম অগ্রবালকে সোমবার সরকারি এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত। তাঁর শরীর ঠিক কতটা খারাপ, তা দেখতে এসএসকেএমে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গড়তে বলা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার ওই বোর্ডকে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এবং সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত স্থির করবে, রাধেশ্যামবাবুকে রাখা হবে কোথায়।
আমরি-কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই হাসপাতালের অন্য ছয় ডিরেক্টর বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে। রাধেশ্যাম অগ্রবাল ঘটনার আগে থেকে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশ পাহারায় সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থা ঠিক কী রকম, তা যাচাই করতে আদালতের নির্দেশে শুক্রবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর তিন সদস্যের একটি দল গড়েছিল। শনিবার তারা হাসপাতালে গিয়ে রাধেশ্যামবাবুকে পরীক্ষা করেন।
এবং তাদের রিপোর্ট-সহ পুলিশ এ দিন রাধেশ্যামবাবুকে আদালতে এনেছিল। তাঁর হাজিরা নিয়ে একপ্রস্থ নাটকও হয়ে যায়। কী রকম? |
আদালতের নির্দেশে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হল
আমরি-কর্তা রাধেশ্যাম অগ্রবালকে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
আদালত চত্বরে একটি বাতানুকূল অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে ছিলেন রাধেশ্যামবাবু। নাকে-মুখে অক্সিজেন মুখোশ। বিচারক অভিযুক্তকে এজলাসে হাজির করাতে বললেও আদালতের কোনও কর্মী বা পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স থেকে তাঁকে বার করার ঝুঁকি নেননি। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “উনি আমাদের বার বার হুঁশিয়ার করছিলেন যে, অক্সিজেন মাস্ক খুললেই মরে যাবেন!”
শেষে বিচারকের নির্দেশে কোর্ট লকআপের কাছে রাখা অ্যাম্বুল্যান্সটিকে আদালতকক্ষের সামনে নিয়ে আসা হয়। মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিম নিজেই এজলাস থেকে বেরিয়ে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের দরজা খুলে অভিযুক্তকে দেখে যান।
রাধেশ্যামবাবুর তরফে বিচারককে জানানো হয়, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। চিকিৎসা চলছে। এখনও অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তাঁর চলার শক্তি নেই। তাই তাঁকে এখনই সরানো ঠিক হবে না। অন্য দিকে পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত পুরোপুরি সুস্থ। এ দিন আদালতে কলকাতা পুলিশের পেশ করা আবেদনের বক্তব্য ছিল: এসএসকেএমের তিন ডাক্তার ইতিমধ্যে রাধেশ্যামবাবুকে পরীক্ষা করে দেখেছেন। দরকারে সরকারি হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসা হতে পারে। সেখানে ভাল ডাক্তারেরা রয়েছেন। তাই তাঁকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হোক।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। নির্দেশ দেন, ওখানে তাঁকে একটি মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে হাজির করাতে হবে। বিচারক জানান, অভিযুক্তকে পরীক্ষা করে বোর্ড যে রিপোর্ট দেবে, সরকারপক্ষের আইনজীবীকে তা আজ মঙ্গলবার আদালতে পেশ করতে হবে। তার ভিত্তিতে রাধেশ্যামবাবুর ব্যাপারে বিচারক সিদ্ধান্ত নেবেন। রিপোর্টের সঙ্গে আজ রাধেশ্যামবাবুকেও হাজির করাতে বলেছেন বিচারক। পুলিশি হেফাজতে থাকা আমরির অন্য ছয় ডিরেক্টরকেও আজ আলিপুর আদালতে হাজির করবে পুলিশ। তাঁদের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ এ দিনই শেষ হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন এ দিন বলেন, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাধেশ্যাম অগ্রবালকে সরকারি চিকিৎসকদের দিয়ে পরীক্ষা করাতে পুলিশ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে আবেদন করেছিল। সেই মতো শনিবার রাধেশ্যামবাবুকে পরীক্ষা করেছিলেন সরকারি ডাক্তারেরা। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাধেশ্যামবাবুর শারীরিক পরিস্থিতি এমন নয় যে, তাঁকে আইসিসিইউ-তে রাখতে হবে। এ মুহূর্তে তাঁর কোনও অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন নেই বলে পুলিশের দাবি।
রাধেশ্যাম অগ্রবালকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় তাঁর জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ডও তৈরি হয়ে গিয়েছে। |