দলের যুব সংগঠন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা করেছে রবিবার। রাজ্য সরকার তাতে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সোমবার আসরে নামলেন খোদ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। দার্জিলিং পাহাড়ে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে তিনি ফের আন্দোলনে নামার ‘হুমকি’ দিলেন।
সোমবার দার্জিলিঙের সিংমারিতে দলের সদর দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে গুরুঙ্গের অভিযোগ, “রাজ্য সরকার জিটিএ-চুক্তি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংকে সুইৎজারল্যান্ড বানানোর কথা বলেছেন। আমরা অনেক উন্নয়নের আশায় বসে রয়েছি। কিন্তু, কথাই বেশি হচ্ছে। কাজের কাজ হচ্ছে না।” প্রায় ‘হুমকির সুরে’ বিমল বলেন, “এ ভাবে বেশি দিন বসে থাকতে পারব না। জানুয়ারির শেষে সমাবেশ করে নতুন করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” কী ধরনের আন্দোলন করবেন? গুরুঙ্গের জবাব, “দলের যুব সংগঠন যা করছে, করুক। তা নিয়ে কিছু বলব না। আমরা যা করার, করব। যথা সময়ে ঘোষণাও করা হবে।”
রাজ্য সরকারের পক্ষে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বলেন, “পাহাড়বাসীদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। পাহাড় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা বাস্তবায়িত হবেই। সরকারি ভাবে তা বাস্তবায়িত করার প্রক্রিয়া চলছে।”
মোর্চার যুব সংগঠন ‘গোর্খা জনমুক্তি যুব মোর্চা’ গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে। মোর্চার অন্দরের খবর, ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) গঠন প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ চেহারা পেতে এখনও সময় লাগবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। কিন্তু পাহাড়ের মানুষের মধ্যে আলাদা রাজ্য নিয়ে আবেগ রয়েছে। সেই আবেগকে কাজে লাগিয়ে জিটিএ-চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে অন্য কোনও দল যাতে পাহাড়ে কর্তৃত্ব কায়েম করতে না পারে, তাই যুব সংগঠনকে আন্দোলনে নামার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন গুরুঙ্গরা। যুব মোর্চা ওই আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা করলেও রাজ্য সরকার কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। মোর্চা সূত্রের খবর, রাজ্যের উপরে ‘চাপ বাড়াতেই’ আসরে নামেন মোর্চা সভাপতি।
কিন্তু মোর্চা আচমকা এ ভাবে ‘চাপ বাড়াতে’ চাইছে কেন?
প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি বছরের জুলাই মাসে চুক্তির সময়েই প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার পরে ধাপে ধাপে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর হাতে পাহাড়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা তুলে দেওয়া হবে। ফলে, পাহাড়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রকল্পের টাকা এখনও স্থানীয় প্রশাসন হাতে পায়নি। ওই সব প্রকল্পে কাজ শুরু হলে স্থানীয় কর্মসংস্থানের বিষয়টি যে ভাবে গুরুত্ব পেত, এখন তা-ও হচ্ছে না।
যে সব মোর্চা নেতা এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের সেই সব প্রকল্পে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরা পড়েছেন ‘অস্বস্তি’তে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে নিয়মিত ওই প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে মোর্চার তরফে।
টাকা না মেলায় সেই সব কাজ শুরু করা যায়নি বলে প্রশাসন জানানোয়, মোর্চা নেতাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই ‘পরিস্থিতি’তে জিটিএ-চুক্তিও দ্রুত বাস্তবায়িত না হলে পাহাড়ে বিরোধীরা একজোট হয়ে প্রচারে নামতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে মোর্চা নেতৃত্বের। তাই মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারা রাজ্য সরকারের উপরে ‘চাপ বাড়ানো’র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গুরুঙ্গের ‘হুমকি’ তারই ফলশ্রুতি। |