প্রথমে কুয়াশা এবং তার পরে প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে ওভারহেড তারে গোলমাল দেখা দেওয়ায় সোমবার সকাল থেকে বেশ কিছু ক্ষণ ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। নাজেহাল হন হাওড়া মেন ও কর্ড শাখার যাত্রীরা। ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হয়েছে শিয়ালদহেও। কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে যায় বিমান পরিষেবাও। কলকাতা থেকে বেশির ভাগ বিমানই নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। ভোর সওয়া ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে গালে হাতে দিয়ে বসে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের।
শুধু কলকাতা নয়, দিল্লি এবং বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরেও প্রচণ্ড কুয়াশার জন্য এ দিন সারা দেশেরই উড়ানসূচি কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বিপর্যয়ের জের চলে বিকেল পর্যন্ত। সকালে তিন ঘণ্টারও বেশি বিমান চলাচল না-করায় কলকাতা থেকে বিকেলের নির্ধারিত উড়ানও দেরিতে ছেড়েছে। শহর থেকে প্রায় সব রুটের উড়ান ছাড়তেই দেরি হয়। রবিবার রাত থেকে কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী বিমানবন্দরে ৫০টি উড়ান দেরিতে চলাচল করেছে। আজ, মঙ্গলবারেও ঘন কুয়াশার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে সেখানে।
প্রায় প্রতি সোমবারেই কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। এ দিন সকাল থেকে সময়মতো বিমান না-ছাড়ায় সেই ভিড়ের চাপ রয়ে যায় দুপুর পর্যন্ত। সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে কলকাতা থেকে প্রথম উড়ান ছাড়ে। ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রথম নামে এমিরেটসের উড়ান। তার আগে বিমানটিকে আকাশে বেশ কিছু ক্ষণ চক্কর কাটতে হয়। বিমানবন্দরের আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, রবিবার মাঝরাত থেকেই কুয়াশার প্রকোপ শুরু হয়েছিল। ভোরের দিকে খুব কম সময়ের জন্য দৃশ্যমানতার একটু উন্নতি হলেও সওয়া ৫টার পরে তা ৫০ মিটারে নেমে যায়। ঘন কুয়াশার মধ্যেও বিমান ওঠানামায় সাহায্য করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (ক্যাট-২ ল্যান্ডিং সিস্টেম) রয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরে। কিন্তু তার জন্যও ন্যূনতম ৩৫০ মিটার দৃশ্যমানতা দরকার। কুয়াশার দাপটে এ দিন সেটুকুও ছিল না। তাই কলকাতার মাথার উপরে এসে আবার চিনের কুনমিং-এ ফিরে যেতে হয় চায়না ইস্টার্ন সংস্থার বিমানকে।
সাধারণত বেঙ্গালুরুতে কুয়াশা হয় না। কিন্তু সেখানে নতুন বিমানবন্দরের চার পাশে বড় জলাশয় থাকায় ইদানীং কুয়াশার দাপট বাড়ছে বলে জানান বিমান সংস্থার এক অফিসার। দিল্লি ও বেঙ্গালুরু থেকে সকালের দিকে যে-সব বিমান কলকাতায় আসে, সেগুলিই শহর থেকে উড়ে যায় অন্য রুটে। এ দিন দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর বিমান আসতে দেরি করায় বাগডোগরা, গুয়াহাটি-সহ উত্তর-পূর্বের উড়ান ছাড়তেও দেরি হয়।
রেলের ক্ষেত্রে কুয়াশার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি সমস্যা দেখা দেয় প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে পড়ায়। রেল সূত্রের খবর, ভোর থেকে কুয়াশার জন্য দু’টি রাজধানী এক্সপ্রেস-সহ দূর পাল্লার ১০টি ট্রেন এবং সকালের দিকে দুই ডিভিশনের বেশি কিছু লোকাল ট্রেন দেরিতে চলাচল করে। হাওড়া-দিল্লি কালকা মেল দেরি করেছে ১০ ঘণ্টা।
ভোর থেকে শুরু হওয়া কুয়াশা সবে যখন একটু কমেছে, সেই সময়েই হাওড়া কারশেডের কাছে ডাউন কোলফিল্ড এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের প্যান্টোগ্রাফ আচমকাই ওভারহেডে জড়িয়ে গিয়ে ভেঙে যায়। তাতেই নতুন করে বিপত্তি দেখা দেয়। বেলা ১১টায় প্যান্টোগ্রাফ ভেঙে পড়ার পরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দিতে হয়। এক দিকের রেললাইনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দীর্ঘ সময় ধরে ওভারহেড তারে মেরামতির কাজ চলে। একটি লাইন বন্ধ থাকায় হাওড়া ও শহরতলির স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের ভিড় জমে যায়। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। |