মায়ের অসুস্থতার সময় তাঁর ভূমিকার জন্য পাল্টা ‘কৃতজ্ঞতা’ জানাতে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা অশোক ঘোষের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অশোকবাবুর সঙ্গে দেখা করতে ফব দফতরেই যান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর মা গায়ত্রী দেবী প্রয়াত হওয়ার পরে মমতাকে সমবেদনা জানাতে অশোকবাবু কালীঘাটে গিয়েছিলেন। এমনকী গায়ত্রী দেবী অসুস্থ হয়ে এসএসকে এম হাসপাতালে থাকার সময়েও তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন অশোকবাবু। ফব-র রাজ্য দফতর ‘হেমন্ত ভবনে’ এসে মমতা বলেন, “অশোকদা অসুস্থ শরীর নিয়ে আমাদের বাড়ি গিয়েছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ। অশোকদার কাছে আসার জন্য আমার মা যেন আমায় বলছিলেন। সে জন্য চলেই এলাম।” |
অশোকবাবুর কাছে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কিছু ‘কাজের কথা’ও তাঁর সঙ্গে সেরে নেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালন নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। বস্তুত, ময়দানে রেড রোডে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে ২৩ জানুয়ারি ফব প্রভাবিত ‘নেতাজি কেন্দ্রীয় জন্মজয়ন্তী কমিটি’ সভা করে। গতবার বামফ্রন্ট সরকার দিনটি ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেছিল। এ বার নতুন সরকারের আমলেও দিনটি পালনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন অশোকবাবু। তাঁর দলের বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারী এই বিষয়ে কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলেন।
এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং নিকট আত্মীয়া লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে অশোকবাবুর কাছে আসেন মমতা। সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী ফব দফতরে এসে অশোকবাবুকে তাঁর ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়ে বলেন, ‘‘অশোকদা কী বলবেন বলুন!” অশোকবাবু তাঁকে নেতাজির জন্মদিন পালনের ব্যাপারে অলোচনা করতে চান বলে জানান। ওই আলোচনা ‘সরকারি’ কোনও জায়গায় হলে তাঁর অংশগ্রহণে অসুবিধা আছে বলে অশোকবাবু জানান। কারণ, তিনি সরকারের কেউ নন। কবে, কোথায় আলোচনা হবে তা পরে তাঁকে জানিয়ে দেবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী অশোকবাবুকে বলেন। আলোচনার সময়ে উপস্থিত ছিলেন পরেশবাবু ছাড়াও ফব নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হাফিজ আলি সাইরানি। নেতাজির জম্মদিনকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে পালনের দাবি প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন স্তরে ফব ও বামফ্রন্ট নেতৃত্ব যা যা আবেদন করেছিলেন তার সংকলন করে একটি বই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন অশোকবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ‘স্মারক উপহার’ হিসাবে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ পত্রিকার সংকলনের দু’টি খণ্ড, নেতাজির রচনা ও ক্যালেণ্ডার তুলে দেন অশোকবাবু। মুখ্যমন্ত্রীও এক ব্যাগ ফল উপহার দেন অশোকবাবুকে। মিনিট কুড়ি মুখ্যমন্ত্রী সেখানে ছিলেন।
এ দিনও কালীঘাটে মাতৃহারা মুখ্যমন্ত্রীকে সমবেদনা জানাতে ‘ভিআইপি’র ভিড় ছিল। দুপুরে কালীঘাটে যান রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তারপরে একে একে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইস্টার্ন কম্যান্ডের জিওসি বিক্রম সিংহ, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন সিংহ প্রমুখ।
সন্ধ্যায় অতিথিদের ভিড় একটু কমলেই মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে পড়েন অশোকবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁর মায়ের পারলৌকিক কাজ এবং শ্রাদ্ধ কবে তা অশোকবাবু জানতে চান। অশোকবাবু বলেন, “আমি কিন্তু যাব।” মমতা তাঁর হাত ধরে বলেন, “একদম না। এই শরীরে আপনি একদম যাবেন না। আপনি আমাকে যখন ডাকবেন, আমিই আপনার কাছে চলে আসব।” অশোকবাবুর চিকিৎসার বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী সাইরানি, পরেশবাবুদের সঙ্গে কথা বলেন। অশোকবাবুকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শরীর নিয়মিত চেক আপ করাবেন।” |