বীজ কেলেঙ্কারি
তদন্ত রিপোর্ট সূর্যের হাতে, ফের ‘অস্বস্তি’তে সরকার
যে জবাব বা তথ্য ট্রেজারি বেঞ্চের দেওয়ার কথা, তা নথিপত্র-সহ বিরোধী বেঞ্চ থেকে আসায় বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে একাধিক বার ‘বিড়ম্বনা’য় পড়তে হল রাজ্য সরকারকে।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্নের জবাবে সোমবার বিধানসভায় কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, মিনিকিট সরবরাহ ও নিম্ন মানের বীজ সংগ্রহ নিয়ে অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট এখনও সরকারের কাছে জমা পড়েনি। সঙ্গে সঙ্গে সূর্যবাবু সেই রিপোর্টের প্রতিলিপি দেখিয়ে বলেন, “আপনি রিপোর্ট পাননি বলছেন। অথচ আমার হাতে সরকারের কাছে জমা পড়া রিপোর্টের প্রতিলিপি রয়েছে।” প্রসঙ্গত, চলতি অধিবেশনেই গত মঙ্গলবার বিরোধী পক্ষ জানতে চেয়েছিল, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ কি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে সংবিধান মোতাবেক পঞ্চায়েতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন? জবাবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানিয়েছিলেন, এমন কোনও চিঠির কথা তাঁর জানা নেই। তার পরেই ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ এনে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু ওই চিঠির প্রতিলিপি সভায় দেখান। এ দিন ফের ওই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল।

রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

সূর্যকান্ত মিশ্র
কৃষিমন্ত্রীর কাছে এ দিন সূর্যবাবুর প্রশ্ন ছিল, “মিনিকিট সরবরাহ এবং নিম্ন মানের সংগ্রহের অভিযোগ পেয়েও সরকার কি ব্যবস্থা নেয়নি?” জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে সংবাদপত্রে অভিযোগ দেখে সরকার সব পর্যায়ে অনুসন্ধান ও পরীক্ষা চালাচ্ছে। বীজ পরীক্ষার জন্য বারাণসীর কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগার ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। উত্তরাখণ্ড থেকে বীজগুলি সরবরাহ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তা যাচাই করতে সেখানে দফতরের ৩ অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। তবে কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি।” এ কথা শোনার পরেই ওই রিপোর্টের প্রতিলিপি দেখিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “বীজ পরীক্ষার রিপোর্ট প্রমাণিত ওই বীজ ব্যবহারযোগ্য নয়। তার ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা যে নিচ্ছেন না, এটা বিরাট কেলেঙ্কারি।” বিরোধীরা নথি নিয়ে সভায় সরকারকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিয়মানুযায়ী সভায় দস্তাবেজ নিয়ে বক্তৃতা করতে হলে, তা স্পিকারের কাছে জমা দিতে হয়।” এ কথার রেশ ধরে কিছুক্ষণ পরে স্পিকারের ‘রুলিং’ চান জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে নথি দিয়ে দেবেন।” এর পর দেখা যায়, সূর্যবাবু ট্রেজারি বেঞ্চে গিয়ে কাগজ নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন।
এ দিন সূর্যবাবু কৃষি উৎপাদন, সারের কালোবাজারি-সহ কৃষকদের কিছু সঙ্কট নিয়ে বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্পিকার তাঁকে প্রস্তাবটি কেবল পাঠ করার সুযোগ দেন। তা নিয়ে আলোচনা করতে স্পিকার দেননি। সূর্যবাবু বলেন, “আমি প্রস্তাব পড়ছি। কিন্তু তার পরে আমাকে এ বিষয়ে এক মিনিট বলতে দিতে হবে।” স্পিকার সেই অনুমতি না দেওয়ায় বিরোধী পক্ষের বিধায়করা ওয়েলে নেমে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সরকার পক্ষের বিধায়করা চিৎকার করতে থাকেন। স্পিকার খানিক ক্ষণ থেমে থাকার পর ওই স্লোগান ও চিৎকারের মধ্যেই দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব চালান। ওয়েলে ঘুরে ঘুরে ও তার পরে স্পিকারের আসনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা স্লোগান দেওয়ার পর ওয়াকআউট করেন বিরোধী পক্ষের বিধায়করা।
অধিবেশন কক্ষের বাইরে বেরিয়ে তাঁরা স্লোগান দিতে দিতে প্রথমে বিরোধী দলের কক্ষে এবং পরে প্রেস কর্নারে যান। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনে সূর্যবাবু অভিযোগ করেন, বিধানসভার তিনটি অধিবেশনের একটিতেও সরকার তাঁদের মুলতুবি প্রস্তাব আনতে দেয়নি। সূর্যবাবুর কথায়, “ওঁরা বলছেন, ওই বিষয়ে নাকি আলোচনা হয়েছে বা আলোচনার জন্য অপেক্ষা করা যায় বা দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব হিসাবে আনতে হবে। কোথায় আলোচনা হল? মন্ত্রীকে দিয়ে বিবৃতি দিইয়ে দিলেই হল? উল্লেখ পর্ব আর মুলতবি প্রস্তাব যে আলাদা, তা সরকারকে বোঝাতে পারছি না বা তারা ইচ্ছা করে বুঝতে পারছে না।”
মিনিটিট সরবরাহ ও নিম্ন মানের বীজ প্রসঙ্গে সূর্যবাবুর বক্তব্য, “সরকারি নীতির জন্য এক ইঞ্চি জমিতেও এ বার গম চাষ হবে না। কারণ ৪০০ মেট্রিক টন মিনিকিট টেন্ডার করে ২২৫০ মেট্রিক টন অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ১১ টাকার গম সাড়ে ২২ বা ২৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকার কেলেঙ্কারি। যে বীজ চাষির কাছে গিয়েছে, তাতে গম হবে না।” এ বিষয়ে একাধিক দফতর যুক্ত আছে অভিযোগ করে উচ্চ স্তরের তদন্তও দাবি করেন সূর্যবাবু। তিনি জানান, “ওঁরা বলছেন, কাগজ দিতে হবে। যে কাগজ সরকারের কাছে আছে, আমি সেটাই দেখিয়েছি! আর যাঁরা নিজেদের ব্রেন আছে বলেন, তাঁরা জেনে রাখুন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর (জয়রাম রমেশ) চিঠিটা আমি ওয়েবসাইট থেকে পেয়েছি। সরকার ওয়েবসাইটও দেখে না!” তবে বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব আনতে না দেওয়া সত্ত্বেও স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাননি বিরোধী দলনেতা। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করছি না। তবে বিধানসভা কক্ষে কিছু বলতে গেলেই তো ওঁকে ডান দিকে তাকাতে হয়!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.