বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই জমি বিল আনার জন্য ‘বিশেষ তৎপরতা’ শুরু করল রাজ্য সরকার। সোমবার দিনভর মহাকরণে সেই ‘প্রস্তুতি’ চলল।
বিধানসভা সূত্রে অবশ্য এ দিন রাত পর্যন্ত ওই বিষয়ে কোনও ‘সমর্থন’ মেলেনি। বরং পেশ করার পাঁচ দিন আগে বিলটি ছাপিয়ে সদস্যদের মধ্যে বিলি করার নিয়ম থাকায়, ওই বিলটি পেশের সম্ভাব্যতা (অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা আগামী শুক্রবার। যদি না বিধানসভার কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সেই মেয়াদ না-বাড়ানো হয়) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে আজ, মঙ্গলবার বিধানসভার কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক রয়েছে। প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, ওই বৈঠকে বিলটির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে অবহিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন, রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসেট্লমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১১’ বিলটি বিধানসভায় পেশ হওয়ার কথা ছিল এ দিন। কিন্তু রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) অনিন্দ্য মিত্রের ‘আপত্তিতে’ তা স্থগিত রাখা হয়। এজি-র বক্তব্য ছিল, ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধনী বিল এখনও সংসদে পেশ হয়নি। এই অবস্থায় রাজ্যে বিল পেশ করা হলে দু’টি বিলের ‘সংঘাত’ থেকে ‘জটিলতা’ তৈরি হতে পারে।
বিষয়টি গত শনিবার জানাজানি হয়। ফলে এ সপ্তাহে প্রথম কাজের দিন, সোমবারই প্রশাসনে ‘তৎপরতা’ শুরু হয়ে যায়। মহাকরণের খবর, সকালে বিলের খসড়া নিয়ে ভূমি সচিবের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। তার পর দু’জনেই বিলের খসড়ায় সই করেন। এর পর মুখ্যমন্ত্রী তথা ভূমিমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সইয়ের জন্য তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে বিলের খসড়া পাঠানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীও তাতে সই করেন। তার পরে বিধিমতো বিলটি রাজ্যপাল এম কে নারায়নণের অনুমোদনের জন্য রাজভবনে পাঠানো হয়। কিন্তু তত ক্ষণে রাজ্যপাল বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রাজভবন ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
প্রশাসনিক স্তরে দিনভর এই ‘তৎপরতা’ চললেও সরকারের যে সব মন্ত্রীর এই বিষয়টির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা, তাঁরা কেউই রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে অবহিত নন। তাঁদের বরং অভিমত, এই অধিবেশনে বিলটি শেষ পর্যন্ত আনা যাবে না। ফলে আদৌ এই অধিবেশন বিলটি পেশ হবে কি না, তা নিয়ে এখনও ‘সংশয়’ খানিকটা রয়েই গিয়েছে। শাসক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, অ্যাডভোকেট জেনারেল যে বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন, সেই পরিস্থিতি তো এখনও বহাল রয়েছে। তা হলে বলটি কী করে পেশ করা হবে? এই অধিবেশনে বিলটি আসবে কি না, তা জানেন না বিরোধীরাও।
প্রথামতো বিলটি পেশের পাঁচ দিন আগে তা বিধায়কদের মধ্যে বিলি করা হয়। আগামী শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর যদি অধিবেশনের শেষ দিন হয়, তা হলে কিন্তু হাতে আর পাঁচ দিন সময় নেই। তাতেই ‘সংশয়’ দেখা দিয়েছে। রাজ্যের এক মন্ত্রী অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, বিধানসভার স্পিকার বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই নিয়ম না-ও মানতে পারেন। ওই মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, জমি ও অর্থ সংক্রান্ত যে কোনও বিলের খসড়ায় রাজ্যপালের সই ‘বাধ্যতামূলক’। রাজভবনে এ দিন তড়িঘড়ি বিলটি পাঠানো হলেও রাজ্যপাল তখন চলে গিয়েছেন বেঙ্গালুরু। তাঁর ফেরার কথা ২২ ডিসেম্বর দুপুরে। সুতরাং, তার পরেই বিলের খসড়ায় রাজ্যপালকে সই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে খুব দ্রুত হলেও শেষ দিনের আগে তা পেশ করা সম্ভবও নয়।
মহাকরণের খবর, রাজ্যপালের দু’দিন না থাকার কথা রাজভবন থেকে মুখ্যসচিবকে জানানো হয়েছিল। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলেন। রাজভবন সূত্রের মতে, কলকাতা ফিরে বিলের খসড়া দেখবেন রাজ্যপাল। তবে তেমন জরুরি মনে করলে আজ, মঙ্গলবার কাউকে বেঙ্গালুরু পাঠিয়েও রাজ্যপালের কাছ থেকে ফাইল সই করে আনানো হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা এ দিন রাত পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।
মহাকরণ সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত জমি বিলে বলা হয়েছে, বেসরকারি তো বটেই, যৌথ উদ্যোগের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। একমাত্র সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। তা-ও জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে। বলা হয়েছে, কৃষি ও সেচের জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। অধিগ্রহণ করা যাবে না বনাঞ্চলের জমিও। সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি নিলেও আইনের সাহায্যে জোর-জবরদস্তি করা যাবে না। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে জমির বাজার দরের দ্বিগুণ ও গ্রামাঞ্চলে চার গুণ দাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে পাওয়া যাবে ১০০% ‘সোলেসিয়াম’ (সান্ত্বনামূল্য), জমিহারা পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি। পরিবারের কেউ চাকরির ‘উপযুক্ত’ না-থাকলে জমির পরিমাণ অনুযায়ী তাঁদের এককালীন সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে। জমির উপর নির্ভরশীল সকলকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। অধিগৃহীত জমির মধ্যে বাড়ি পড়লে অন্যত্র পুনর্বাসন। ভূমি দফতরের এক মুখপাত্র জানান, বিলে পেনশন বা ‘অ্যানুইটি’র সংস্থান রাখা হচ্ছে না। |