কোথাও সিপিএম তথা বামেরা মনোনয়ন জমা দেয়নি। কোথাও জমা দিয়েও তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই অবস্থায় রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় যে সমস্ত স্কুলে নির্বাচন হল, তার প্রায় সবকটিতেই পরাজিত হল বামেরা। মাত্র দু’টি স্কুলে জিতেছেন বামজোটের প্রাথীরা। হাসনাবাদের ভেবিয়ায় স্কুলভোটকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। মারধর, ভাঙচুর ও লুঠপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষ।পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সোমবারেও এলাকায় উত্তেজনা থাকায় বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, “স্কুল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মারধর, লুঠপাট, মহিলাদের উপরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।” এলাকায় পুলিশ পিকেট বাসানো হয়েছে। নামানো হয়েছে র্যাফ।
রবিবার বসিরহাট মহকুমায় ১২টি স্কুলে অভিভাবক পরিচালন কমিটির নির্বাচন ছিল। তৃণমূল ৫টিতে, বামবিরোধী জোট ৩টিতে এবং কংগ্রেস ২টি ও বামজোট ২টি স্কুলে জয়ী হয়। স্বরূপনগরের মেদিয়া গার্লস হাইস্কুল, হাসনাবাদের ভবানিপুর শ্রীমন্ত জুবলি হাইস্কুল, মালেকান ঘুমটি হাইস্কুল, রানিবালা গার্লস হাইস্কুল’ এবং সন্দেশখালির ভোলাখালি হাইস্কুলে জয়ী হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীরা। বামবিরোধী জোটের প্রার্থীরা হিঙ্গলগঞ্জের দেউলিয়া রসিক চন্দ্র বিদ্যামন্দির, হাসনাবাদের ভেবিয়া বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমি ও সন্দেশখালির উত্তম চন্দ্র বিদ্যাপীঠে জয়ী হয়েছে। দন্ডিরহাট হাইস্কুল এবং বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাট বিকেপি গার্লস হাইস্কুলে জিতেছে কংগ্রেস। মিনাখাঁর মোহনপুরে বাচড়া এমসিএইচ হাইস্কুল এবং হাসনাবাদের ভবানিপুরে সেন্ট্রাল মডেল হাইস্কুল-এ জয়ী হয়েছে সিপিএম।
বনগাঁ মহকুমার বাগদায় হেলেঞ্চা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও থোয়ারা হাইস্কুলে সিপিএম প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে। গোবরডাঙা খাটুরা হাইস্কুল, গোবরডাঙা কলেজিয়েট হাইস্কুল এবং গোবরডাঙা ইছাপুর মন্মথ নাথ বালিকা বিদ্যালয়ে জয়ী হয়েছে বামবিরোধীরা। গোবরডাঙা খাটুরা হাইস্কুল, গোবরডাঙা কলেজিয়েট হাইস্কুলে সিপিএম মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। কিন্তু পরে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। ইছাপুর মন্মথনাথ বালিকা বিদ্যালয়ে সিপিএম প্রার্থী দিলেও নির্বাচন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বুথ তুলে নিয়ে চলে যায় তারা। সিপিএমের গোবরডাঙা শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক শঙ্কর নন্দী বলেন, “আমাদের প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন দিতে না পারেন, তার জন্য বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল হুমকি দেয়। এমনকী সাদা কাগজেও সই করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেজন্য আমরা মনোনয়ন জমা দিয়েও নির্বাচন থেকে সরে আসি। ইছাপুর মন্মথ নাথ বালিকা বিদ্যালয়ে নির্বাচন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তৃণমূলের লোকেরা বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দিতে থাকে। সেজন্য আমরা চলে আসি।” তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দলের গোবরডাঙা শহর লোকাল কমিটির সভাপতি সমীর নন্দী বলেন, ‘‘আসলে সম্প্রতি খাটুরা উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের নির্বাচনে সিপিএমের ভরাডুবির পর ওরা নিশ্চিত হার এড়াতে ভোটে লড়াই করেনি। তা ছাড়া ওদের অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে।”
চাঁদপাড়া উচ্চবালিকা বিদ্যালয় ও গাইঘাটার কলাসীমা স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠে জেতে তৃণমূল। মছলন্দপুর ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়, অশোকনগরের কাজলা রবীন্দ্র নিকেতনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। হাবরা গার্লস হাইস্কুল ও কামারথুবা নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়েও তৃণমূল-কংগ্রেস জোট জয়ী হয়েছে। তবে হাবরার বাণীপুর বাণী নিকেতন, গোপালনগরের দীঘাড়ি ভাসানচন্দ্র বিদ্যাপীঠে জয়ী হয়েছে সিপিএম। |