ক্ষতিপূরণ মিলবে কি, দৃষ্টিহীনদের পরিবার ধন্দেই
বিষমদে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। টাকা কবে মিলবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও পরিবারগুলির ‘আশা’ এখন ওইটুকুই। কিন্তু যাঁরা বিষাক্ত চোলাই খেয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা হারাতে বসেছেন, তাঁদের কী হবে, তা নিয়ে কোনও ঘোষণা নেই সরকারের তরফে। কী ভাবে সংসার চালাবেন, তা ভেবেই আকুল সদ্য দৃষ্টি হারানো গরিব মানুষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগমের আশ্বাস, “কিছু একটা ব্যবস্থা হবেই। জেলা প্রশাসন পরিচালিত স্বনির্ভর প্রকল্পে ওই ব্যক্তিদের শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী কোনও কাজের ব্যবস্থা করা হবে। সেই মতো আলোচনা করব।”
বিষমদে দৃষ্টি হারিয়েছেন এঁরা। নুরুল হক (বাঁ দিকে) ও কাশীনাথ ঘোষ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র
এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মগরাহাটের কলসহাট এলাকার বছর চল্লিশের বাসিন্দা নুরুল হক লস্কর এখন আর চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। বললেন, “ওই দিন মাত্র এক গ্লাস মদ খেয়েছিলাম। তেমন কিছু হয়নি। রাত থেকে চোখের মণিটা মনে হল ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। চোখ টানছিল। আস্তে আস্তে সব ঝাপসা হতে লাগল। এখন তো সব অন্ধকার। ডাক্তার জানিয়েছেন দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।” শনিবার রাত থেকেই কিছু দেখতে পাচ্ছেন না মন্দিরবাজারের ঝাঁপবেড়িয়ার বাসিন্দা কাশীনাথ ঘোষ। তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। পেশায় ভ্যানচালক বছর সাতাশের এই যুবকের ভাই দেবনাথ জানালেন, গত বুধবার রাতে সংগ্রামপুর স্টেশন-সংলগ্ন এলাকার ঠেক থেকে চোলাই খেয়েছিলেন দাদা। রাতে বাড়ি ফিরে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। পরে সময় যত গড়িয়েছে, ততই দৃষ্টি কমতে থাকে। তবে চোখে কোনও ব্যথা ছিল না। চিকিৎসকদের উপরে অবশ্য এখনও ‘আস্থা’ রাখছেন কাশীনাথ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ রায় বলেন, “ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি মগরহাটের হাসিবুল গায়েনের দৃষ্টিও ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসছে। ওই রোগীরও চিকিৎসা চলছে।”
বাঙুর হাসপাতালে সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “বিষমদে খেয়ে অসুস্থ রোগীদের দৃষ্টিশক্তি হারানো-সহ নানা উপসর্গ দেখা যায়। ওই দু’জনের আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” নুরুল ও কাশীনাথ দু’জনই সংসারের একমাত্র রোজগেরে। দর্জির দোকানে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন নুরুল। তিন মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে সংসার। তাঁর ভাই জাকির বলেন, “দাদা অন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তো প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থা। কী কাজই বা আর করতে পারবে? যারা মারা গিয়েছে, তাঁদের পরিবার দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু আমাদের কী হবে?” কাশীনাথের ভাই দেবনাথ বলেন, “মেয়ে-বউ নিয়ে সংসার দাদার। দিনে ১২০ টাকা রোজগার। বউদি ও চলৎশক্তিহীন বাবাকে এখনও দাদার অবস্থা বলতে পারিনি।” তিনি নিয়ে ৬০ টাকা দৈনিক মজুরিতে দোকানে কাজ করেন। বললেন, “সরকার মৃতদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। আমাদের নিয়ে তো কোনও আলোচনাই হচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.