|
|
|
|
আবগারি অভিযান চলছেই, কমছে না চোলাই মদ বিক্রি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
মগরাহাটে বিষ-মদে মৃত্যুর পর আবগারি অভিযান জোরদার হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও। টানা অভিযানে চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ১৫ জন। মোট ৯৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও জেলায় চোলাই মদের রমরমা কমার লক্ষণ নেই। অভিযান চালিয়ে মদের ঠেক ভেঙে দিলেও দু’-এক দিনের মধ্যেই ফের সেখানে চোলাই বিক্রি শুরু হয়ে যাচ্ছে। ধৃতরাও কিছু দিনের মধ্যেই জামিনে মুক্ত হয়ে স্বমহিমায় পুরনো ব্যবসায় ফিরে আসছেন। এমনকী আড়াই বছর আগে তমলুকে চোলাই মদে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁরা এখনও চোলাই বিক্রির হোতা জেলাসদরে।
২০০৯ সালে তমলুকের রামতারক ও কাঁকটিয়া বাজার এলাকায় চোলাই মদ খেয়ে ৫২ জনের মৃতুর পরে আবগারি দফতর একই ভাবে টানা অভিযান চালিয়েছিল। সেই সময় কুরপাই গ্রামের চোলাই ভাটির মালিক স্বপন জানা এবং সুশান্ত জানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু কিছু দিন বাদেই জামিনে ছাড়া পেয়ে তাঁরা আবার পুরনো ব্যবসায় ফিরে আসেন। মাস খানেক আগে আবগারি দফতর তাঁদের ভাটিতে ফের অভিযান চালায়। স্বপন পালিয়ে যান। সুশান্ত গ্রেফতার হলেও পরে জামিন পেয়ে যান যথারীতি। গত কয়েকদিন ধরে আবগারি দফতর অভিযান চালানোয় সুশান্ত চোলাই ভাটি বন্ধ রেখেছেন। আর স্বপন এখনও পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। জেলা আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অভিযান চালিয়ে ভাটি থেকে ন্যূনতম ২ হাজার টাকার মদ পেলে তবেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা যায়। তা ছাড়া বর্তমান আইনে ৪০ দিনের বেশি জেলে রাখা যায় না চোলাই মদ-ব্যবসায় জড়িতদের। আইনের ফাঁকে জামিন পেয়ে এরা ফের নিজেদের কারবার শুরু করে দেয়। কিছু করার থাকে না।”
গত কয়েক দিন পাঁশকুড়ার রাধাবল্লভচক, কোলাঘাটের কুমারহাট, মেচেদার শান্তিপুর, চণ্ডীপুরের বরাহচণ্ডী, নন্দকুমারের চকজিয়াদিঘিতে চোলাইয়ের বহু ঠেকে অভিযান চালানো হয়েছে। জেলা আবগারি দফতরের সুপার ষষ্ঠীচরণ ঘোষ বলেন, ‘‘গত চার দিনে অভিযান চালিয়ে পাঁশকুড়ায় ৫০ লিটার মিথাইল অ্যালকোহল, ১৯৬৮ লিটার চোলাই এবং প্রায় ৫০ হাজার লিটার মদের সরঞ্জাম নষ্ট করা হয়েছে।”
জেলা আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেশি মদের দোকান ৫৫টি, বিদেশি মদের দোকান রয়েছে ৭৪টি। এর মধ্যে ৪৬টি ‘অফ্-শপ’ (যেখানে শুধু মদ বিক্রি হয়, খাওয়ার ব্যবস্থা নেই) ও ২৮টি ‘অন্-শপ’ (মদ বিক্রি ও খাওয়ার ব্যবস্থা এক সঙ্গে)। দিঘা এবং হলদিয়া শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করেই মূলত ব্যবসা চালাচ্ছে ‘অন্-শপ’গুলি। জনসংখ্যা ও চাহিদার তুলনায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান কম থাকার কারণেই চোলাই মদের এত রমরমা বলে মনে করছেন আবগারি কর্তারা।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪৮টি চোলাই মদের ভাটি আছে যেখান থেকে বাইরেও মদ পাচার হয়ে থাকে। আবগারি দফতরের সঙ্গে যোগসাজশেই চোলাই মদের এত রমরমা বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি আবগারি কর্তারা। তাঁরা দায়ী করছেন পরিকাঠামোর অব্যবস্থাকেই। ২০০২ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আবগারি দফতর তৈরি হওয়ার সময়ে ৭টি ব্যারাকের জন্য ৪৫টি কনস্টেবল পদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেই সংখ্যা এখন কমে হয়েছে সাকুল্যে ১৯। তার ফলে অভিযান চালাতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সাব ইন্সপেক্টরদের। বিশেষত যে সব জায়গায় চোলাই ভাটি মালিকরা সংগঠিত সেখানে বড় বাহিনী না থাকায় অসুবিধায় পড়ছেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|