বিস্তর চেষ্টা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি না-ফাটা বোমা নিষ্ক্রিয় করা গেল না। ফলে সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বোমাটিকে কোহিমার পুলিশ রিজার্ভের মাঠে ‘কনট্রোল্ড ডিটোনেশন’-এর মাধ্যমে ফাটিয়ে ফেলা হবে। যদিও খোদ পুলিশ বিভাগই এত বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে রাজি নয়।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোহিমার এল-খেল গ্রামে একটি দেওয়াল গড়ার সময়, মাটির তলা থেকে বিরাট লোহার একটি পিণ্ড মেলে। পুলিশ এসে জানায়, সেটি যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা একটি না-ফাটা বোমা। গ্যাস সিলিণ্ডারের মতো দেখতে বোমাটির ওজন অন্তত দেড়শো কিলো। ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর ফেলা ব্লকব্লাস্টার, কুকি বা গ্র্যান্ড স্লামের মতো ১৮০০ থেকে ১০ হাজার কিলোগ্রামের বোমার কাছে কোহিমার বোমাটি নেহাতই শিশু। কিন্তু দেড়শো কিলোর বোমার আতঙ্কেই গ্রাম খালি হয়ে যায়।
পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে প্রথম আসেন। বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা দূরের কথা, এত বড় বোমাটিকে অকুস্থল থেকে সরাতেই ভরসা পাননি তাঁরা। সাহায্য চাওয়া হয় আসাম রাইফেল্স-এর কাছে। তাদের বোমা বিশেষজ্ঞরাও বোমাটি নেড়েচেড়ে আত্মসমর্পণ করেন। ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বাহিনী বোমাটিকে সরিয়ে আনলেও প্রযুক্তিগত কারণেই এক মাস পরেও সেটিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি।
পুলিশ-প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছে বিস্তর পরামর্শ এসেছে। কেউ বলেছেন, বোমাটি ডি-ফিউজ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগ্রহশালার হাতে তুলে দেওয়া হোক। কারও পরামর্শ, নুনের বস্তা চাপা দিয়ে বোমাটি পুঁতে রাখলে দ্রুত মরচে পড়ে সেটি নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী কাল ফেসামা পুলিশ রিজার্ভের মাঠে বোমাটিকে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ফাটিয়ে ফেলা হবে। এত বড় বোমা ফাটলে পুলিশ রিজার্ভের বাড়িগুলির কী ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলছে। পুলিশ কর্তাদের মতে, বোমা বিস্ফোরণ হলে আশপাশের বাড়িতে ফাটল ধরবে। কোহিমার আশপাশ জুড়ে ভূকম্পও হতে পারে। কোহিমার এসপি আর টেটসেও জানান, বোমাটি পুলিশ রিজার্ভের মাঠেই ফাটাতে চায় সেনাবাহিনী। তবে অন্য কোনও ফাঁকা, জনমানবহীন এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটানোই বাঞ্ছনীয়। আপাতত জেলাশাসকের ছাড়পত্রের উপরে সব কিছু নির্ভর করছে। বোমা ফাটাবার জন্য পুলিশ রিজার্ভের খেলার মাঠে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, আজকের মধ্যে পুলিশ রিজার্ভের এক বর্গ কিলোমিটার পরিধির ভিতরে থাকা সমস্ত বাসিন্দাকে বাড়ি খালি করে চলে যেতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনীও জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে আশপাশের বাড়িতে ফাটল ধরতে পারে। উল্লেখ্য, এই মাসেই জার্মানির কোবলেন্জ এলাকায় রাইন নদীর পাড় থেকে উদ্ধার হওয়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ২৭৫ পাউন্ডের একটি বোমা ‘কনট্রোল্ড ডিটোনেশন’-এর মাধ্যমে ফাটানো হয়। বিস্ফোরণের আগে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে, দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকায় থাকা ৪৫ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে দু’টি হাসপাতাল, সাতটি নাসির্ং হোম ও একটি জেলখানাও ছিল। |