উত্তরপ্রদেশ ভাগ করা নিয়ে মায়াবতীর কোর্টেই বল ঠেলে দিল কেন্দ্র।
বিধানসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায়, তখন কেন্দ্রের কাছে উত্তরপ্রদেশকে চার ভাগ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। কিন্তু রাজ্যকে ভাগ করা প্রসঙ্গে আটটি বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মায়াবতীর কাছেই সেই প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজ্য ভাগ হলে রাজ্যের ঋণের বোঝা বা কেন্দ্রীয় সরকারি সাহায্য কী ভাবে ভাগাভাগি হবে, প্রস্তাবিত চারটি রাজ্যের রাজধানীই বা কোথায় হবে, এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়েছে মায়াবতী-সরকারের কাছে।
গত ২১ নভেম্বর বিধানসভায় চূড়ান্ত হট্টগোলের মধ্যে মাত্র ১১ মিনিটে মায়াবতী রাজ্যকে চার টুকরো করার প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, তেলেঙ্গানা নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তিতে থাকা কেন্দ্রকে আরও অস্বস্তিতে ফেলা। পাশাপাশি কংগ্রেসকেও চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন মায়াবতী। কারণ কংগ্রেসও নীতিগত ভাবে উত্তরপ্রদেশের বিভাজন চায়। পাশাপাশি, এর মধ্যে দিয়ে মায়াবতী বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর সরকারের উপর জনমানসে তৈরি হওয়া ক্ষোভও কাটাতে চেয়েছিলেন।
মায়াবতীর চালে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়েছিল কংগ্রেস তথা ইউপিএ-সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমে ইউপিএ-র শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয়, আপাতত রাজ্য সরকারের প্রস্তাব ঝুলিয়ে রাখা হবে। কিন্তু পরে কেন্দ্র পাল্টা চাপের কৌশল নেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, যে ভাবে উত্তরপ্রদেশের মতো বিরাট রাজ্যকে ভাগ করার জন্য চার লাইনের প্রস্তাব মায়াবতী পাঠিয়েছেন, তা ভারতের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। রাজ্য ভাগ করার জন্য ন্যূনতম যে সব প্রশাসনিক প্রভাব পড়বে, সেগুলোর কোনও ব্যাখ্যাই নেই মায়াবতীর প্রস্তাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশকে পূর্বাঞ্চল, অবধপ্রদেশ, পশ্চিমাঞ্চল ও বুন্দেলখণ্ড নামের চারটি রাজ্যে ভাগ করার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের বিরাট সংখ্যক আইএএস, আইপিএস এবং ফরেস্ট সার্ভিসের আমলাদের কী ভাবে ভাগ করা হবে, তা ঠিক হয়নি। রাজ্যের ঋণের বোঝা, কেন্দ্রীয় রাজস্বের ভাগ, বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের কী ভাবে ভাগাভাগি হবে, তার দিশা দেননি মায়াবতী।
কেন পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেস? দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, চাইলে মায়াবতীর প্রস্তাব ঝুলিয়ে রাখাই যেত। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে যে প্রচার হয়েছে, তাতে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, মায়াবতীর এই চটজলদি প্রস্তাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ কোনও সাড়া পড়েনি। ফলে ওই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কোনও ঝুঁকি নেই। বরং মায়াবতীকেই পাল্টা চাপে ফেলা যাবে। মানুষকে বোঝানো যাবে, বসপা সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। রাজ্যকে ভাগ করে সুশাসনের সদিচ্ছা থাকলে, সেই কাজ আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, “স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, হালকা চালে ছুঁড়ে দেওয়া একটা প্রস্তাব যে ভাবে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা উচিত, তেমনটাই করা হচ্ছে।” |