মনমরা সংসদকে ‘সুখে’ রাখতে ‘ভুটানি দাওয়াই’
বিদেশি লগ্নি থেকে লোকপাল লাগাতার বিতর্কে মনমোহন সরকারের ‘সুখ নেইকো মনে’! বিরোধীদের ঘরেও শুরু হয়েছে কোন্দল। তাই সব্বার মুখ গোমড়া, মনে গুমোট ভাব। সবাই বলতে চাইছেন, “হ্যাভ আ ব্রেক!”
সব মিলিয়ে টান পড়েছে ‘জাতীয় সুখ’-এর ভাঁড়াড়ে। হারিয়ে গিয়েছে সুখের দেশের চাবি।
আর সেই ‘অসুখ’ সারাতেই এ বার পড়তে চলেছে ভুটানি দাওয়াই!
মাত্র কিছু দিন আগেই রাজস্থানে মধুচন্দ্রিমা করে গিয়েছেন ভুটানের নতুন রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং তাঁর স্ত্রী জেৎসুন পেমা। সহজ ভাষায়, সুখ কুড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন সোনার কেল্লার দেশ থেকে। কিন্তু দু’দফায় সাত বছর কাটিয়ে ফেলা ইউপিএ সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন শুধুই স্মৃতি। দমবন্ধ, কোণঠাসা অবস্থায় চলছে সরকার। শীতকালীন অধিবেশনেও প্রথম দিন থেকেই শুধু বিক্ষোভ আর অচলাবস্থা। কৌশল, পাল্টা কৌশলে মনের স্বাভাবিক প্রসন্নতাটুকুও যেন দলমত নির্বিশেষে উবে গিয়েছে নেতাদের থেকে।
এই আবহেই আজ, মঙ্গলবার স্পিকার মীরা কুমারের আমন্ত্রণে সংসদে ‘হীরেন মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’-য় হাজির থাকবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়োনচেং জিগমে থিনলে। তাঁর বক্তৃতার বিষয়: ‘সুখ’! সেই শব্দ, যেখান থেকে বিশ্বকে ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ বা ‘মোট জাতীয় সুখ’-এর ধারণা উপহার দিয়েছিল ভুটান। প্রায় চার দশক আগে। যদিও তাতেই সুখের খোঁজ মিলবে কি না, তা নিয়েও ‘ঝিমিয়ে থাকা’ নানা মুনির নানা মত। বক্তৃতার বিষয় শুনে কোনও নেতা বলছেন বিলাসিতা, কেউ আবার সেখানেই খুঁজছেন ক্লান্তি মুছে দেওয়ার টোটকা।
যেমন দুর্নীতি থেকে লোকপাল নানা বিষয়ে ‘চাপে’ থাকা কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভী। তাঁর কথায়, “এ বারের অধিবেশনে সবার উপরেই যথেষ্ট চাপ গিয়েছে। সাংসদেরা ক্লান্ত। ফলে ‘সুখ’ নিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা কিছুটা অক্সিজেনের কাজ করবে।” উত্তরপ্রদেশে ভোট যত এগোচ্ছে, ততই উত্তেজনা বাড়ছে মায়াবতী এবং মুলায়মের দলের নেতাদের। আনন্দের অবকাশ নেই তাঁদেরও।
ক্লান্ত লাগছে বিরোধী বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজেরও। বলছেন, “সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হবে শুনছি। খুবই বিরক্তিকর। এ বার কিছুই গঠনমূলক হচ্ছে না। বছর শেষে ছুটি কাটাবেন বলে অনেকে ভেবে রেখেছিলেন। এই ক্লান্তিকর অধিবেশন আরও চলবে বলে কেউই খুশি নয়।”
শেষ লোকসভা নির্বাচনে প্রচুর আসন হারিয়ে এমনিতেই মুষড়ে রয়েছেন বামেরা। তার মধ্যেই হঠাৎ ‘সুখের’ খোঁজ কেন, এই প্রশ্ন তুলছেন কোনও কোনও বাম নেতা। যেমন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তর কথায়, “দেশের মানবোন্নয়ন সূচক যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তখন ‘সুখ’ নিয়ে আলোচনা সভা অর্থহীন।”
ছন্দে নেই ‘রসিক’ লালুপ্রসাদও। আরজেডির আসন কমার সঙ্গে হাস্যরসও কমে গিয়েছে জনপ্রিয় এই নেতার। বেশির ভাগ সময়েই চুপচাপ থাকেন। আরজেডি সাংসদ শিবানন্দ তিওয়ারি বলছেন, “লালুপ্রসাদ মেজাজে থাকলে সংসদ অধিবেশনও চাঙ্গা থাকে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা তাঁকে মেজাজে ফেরাতে পারে কি না দেখা যাক।”
সরকারের শরিক তৃণমূলও বক্তৃতা নিয়ে ‘ইতিবাচক’। লোকসভায় দলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “অসুখ থেকে সুখের দিকে যাত্রাই সরকারের কাজ। সেটাই করা হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে দোরজির মৃত্যুর পর ক্ষমতায় এসে দেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিতের উপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে জিগমে সিংগে ওয়াংচুক। তখনই ‘মোট জাতীয় সুখ’এই শব্দবন্ধটি তৈরি করেছিলেন জিগমে সিংগে। সেই ধারণার প্রভাব ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ছেলের রাজ্যপাটেও।
জিগমের এই ধারণা নিয়ে পরে আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণাও করেছেন বহু সমাজবিজ্ঞানী। থিম্পুতে ‘সেন্টার ফর ভুটান স্টাডিজ’-এ শুরু হয় জনসংখ্যার আর্থিক অবস্থা নিয়ে সমীক্ষা। মার্কিন মুলুকেও এই নিয়ে গবেষণা হয়েছে।
নয়াদিল্লি অবশ্য এখনই এত গভীরে ডুব দিচ্ছে না। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সুখ-বক্তৃতা সংসদকে কতটা অক্সিজেন জোগায়, সেটাই আপাতত দেখতে চাইছেন সবাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.